ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

বিক্রির শীর্ষে ল্যাপটপ

ঈদের কেনাকাটায় প্রযুক্তিপণ্য

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১২
ঈদের কেনাকাটায় প্রযুক্তিপণ্য

ঢাকা: এখনকার কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের আবদার, শখ, প্রেস্টিজ সর্বোপরি প্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় প্রযুক্তি পণ্যও স্থান করে নিয়েছে। আর ‍তাই ঈদের কেনাকাটা শুধু জামাকাপড়, জুতো আর খাবার দাবারেই থেমে নেই এখন।

আজকাল ঈদের কেনাকাটা মানে জামা-কাপড়-খাবারের সাথে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট পিসি, ক্যামেরা, মডেমসহ নানা রকম প্রযুক্তিপণ্যও যোগ হয়েছে। ফলে ঈদের কেনাকাটায় প্রযুক্তিপণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একইসঙ্গে কেনাকাটার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিপণ্য।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার, শেলটেক সিয়েরা কম্পিউটার সিটি, আলপনা প্লাজা, সুবাস্তু আর্কেড, সিটি সুপার মার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরির পেছনের কম্পিউটার মার্কেট, হাই ম্যানসন সংলগ্ন কম্পিউটার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ঈদের অন্যান্য কেনাকাটার সাথে প্রযুক্তি পণ্যের কেনাকাটা চলছে সমানতালে।

এমনিতে ঈদ ছাড়াই ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, ডিজিটাল ক্যামেরা, সাউন্ড বক্স, পেনড্রাইভ, হেডফোন, গেমসপ্যাড, ইন্টারনেট মডেম, এন্টি ভাইরাস, কী বোর্ড আর সব রকমের সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, মিউজিক প্লেয়ার, সিডি, ডিভিডি এখন নিত্যদিনকার পণ্য।
এসব পণ্য ছাড়া আধুনিক মানুষের স্বাভাবিক জীবন ভাবাও যায়না। ফলে ঈদের কেনাকাটায় প্রযুক্তিপণ্যের বাড়ছে।

কয়েক বছর জামাকাপড়, প্রসাধন, খাদ্য সমগ্রী আর বাচ্চাদের জন্য খেলনা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাই মূলত ঈদ আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে ওঠতেন। এখন দিন বদলের ধারায় প্রযুক্তিপণ্য ব্যবসায়ীরাও ঈদকে তাদের ব্যবসায়ের একটি সিজন হিসেবে দেখেন।

ব্যবসায়ীদের মতে, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিপণ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। প্রযুক্তি খাত বিশ্বের সবদেশেই দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।  

প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য বাজারজাত করতে জোর দিচ্ছে প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

ঢাকার বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য মার্কেটের ব্যসায়ীরা জানান, গ্রাহকরা সব সময় নতুন প্রযুক্তিপণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। রমজানের শুরুতে বিক্রি সামান্য কমলেও ঈদ যত এগিয়ে আসছে ততই জমে উঠেছে প্রযুক্তি বাজার।

ব্যবসায়ীরা জানালেন, মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মদ্যবিত্ত পরিবার আর শিক্ষার্থীদের যে কোনো কেনাকাটার জন্য ঈদের সময় একটা টার্গেট থাকে। সারা বছর তো আর হাতে টাকা থাকে না। রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকে আগের চেয়ে বেশি ক্রেতা সমাগম হচ্ছে। প্রথমদিকে ক্রেতারা পণ্য দেখতে এলেও এখন বিক্রির হার অনেক বেড়েছে।

নিউ এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের দোকান মালিক সমিতি সভাপতি তৌফিক এহেসান বলেন, মানুষ এখন প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া জীবনযাপনের কথা ভাবতে পারে না। তাই ঈদসহ জীবনের সবক্ষেত্রে প্রযুক্তিপণ্য বিরাট প্রভাব বিস্তার করছে। ৫ বছর আগেও ঈদের কেনাকাটায় এসব পণ্যের চাহিদা কম ছিলো।

শেলটেক সিয়েরা কম্পিউটার সিটির ওয়াটারলিলি টেকনোলজিসের সেলস এক্সিকিউটিভ গৌতম শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের সব ধরনের আনন্দ আয়োজনে প্রযুক্তিপণ্য আবশ্যিক একটা বিষয় হয়ে গেছে। ঈদ, পূজা, বড়দিনসহ সব ধরনের উৎসব আনন্দে মানুষ নিজের শখের বা প্রয়োজনের প্রযুক্তিপণ্য কিনে থাকে।

মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের প্যানোরমা কম্পিউটারের ব্যবস্থাপক লিটন জে কস্তা বাংলানিউজকে বলেন, গত ৫ বছরে মানুষের প্রযুক্তি পণ্যের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিত্যদিনের প্রয়োজন, অভ্যাস এমনকি নিজেকে আপডেট রাখতে মানুষ কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট ছাড়া ভাবতেও পারে না। অনেকে ঈদ বোনাস পেয়ে ছেলেমেয়েকে কিনে দিচ্ছে কম্পিউটার।

রাজধানীর ডেমরা থেকে ল্যাপটপ কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন আহমেদ। ঈদের আগেই ল্যাপটপ কেন কিনতে হবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ল্যাপটপ কেনা আমার কয়েক বছরের স্বপ্ন। অন্যান্য ঈদে নিজের জন্য শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবী কিনেছি। এবার ঈদের আগে বাজেট মিলে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিএকটি ল্যাপটপ কিনব। আমার ক্যারিয়ারের উন্নয়ণে ল্যাপটপ একটি অপরিহার্য জিনিস বলে আমি মনে করি।

পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা শহিদুর রহমান মেয়ের জন্য কম্পিউটার কিনতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে এসেছেন। তিনি বলেন, অামার মেয়ে কলেজে পড়ে। এখন থেকে কম্পিউটার না শেখালে কর্মজীবনে সে পিছিয়ে পড়বে। ঈদে বোনাস পাবো। তাই কিছু টাকা যোগ করে দামি জিনিসটা কিনে ফেলবো।

এদিকে, নিজের পছন্দমত পণ্য বাছাইয়ের বিষয়ে মাল্টিলিংক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির ব্রাঞ্চ ইনচার্জ আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তিপণ্য কেনার আগে ইন্টারনেটে তার রিভিউ দেখে নিতে পারেন। এটি আপনার চাহিদা মেটাতে পারবে কি-না, বা কোনো সমস্যা আছে কি-না তা জানার জন্য ইন্টারনেটে রয়েছে বিপুল তথ্যভাণ্ডার। আপনার নির্দিষ্ট পণ্যের নাম আর মডেলের সঙ্গে রিভিউ লিখে গুগলে সার্চ করলেই হাজার হাজার আর্টিকেল এসে হাজির হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েই কেনাকাটা করতে আসতে পারে যে কেউ। আসলে সময়ের সাথে সবাই তাল মেলাতে চায়।

আলপনা প্লাজার ড্রিমল্যান্ড কম্পিউটার্সের ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ জানান, ঈদে সবাই ঈদ বোনাস বা অতিরিক্ত যে আয় করতে পারেন তা দিয়ে বিলাসিতার চেয়ে প্রয়োজনীয় একটি জিনিস কিনতে পারেন। এখন ল্যাপটপ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটি শখের জিনিস আবার প্রয়োজনও মেটাবে।

ল্যাবরেটরি রোডের আবির কম্পিউটারের মালিক আবির সুমন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালান। ঈদের আগে তারা একবারে বেশি করে কিছু টাকা পান। তাদের অনেকেই আমাদের কাছ থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড পিসি কিনে নেন। আসলে সময়ের প্রযোজনে ঈদের কেনাকাটার সাথে প্রযুক্তিপন্য একটি স্বাভাবিক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


মিরপুর গার্লস আইডিয়ালের ছাত্রী সুলতানা পারভীন বাংলানিজকে বলেন, নিজের উন্নতির জন্য প্রযুক্তির সাথে থাকতে হবে। তাই ল্যাপটপ কেনার ইচ্ছে অনেক আগের। কিন্ত বাবা বলেছিলো এইচএসসিতে ভালো ফলাফল হলে ল্যাপটপ কিনে দেবে। এখন রেজাল্ট হয়েছে, সামনে ঈদ। তাই ল্যাপটপ কিনতে এসেছি। এবারের ঈদটা খুব আনন্দের হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১২
এমআইআর/সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।