ঢাকা: আগামী দিনের বাংলাদেশ মানে ১০০ ভাগ কম্পিউটারাইজড প্রজন্মের এক নতুন বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে বর্তমান যুগটা যেহেতু ডিজিটাল যুগ, কম্পিউটার ও অনলাইনের যুগ সেহেতু এটা অনলাইন মিডিয়ার দ্রুত ও অকল্পনীয় বিকাশেরও যুগ।
বাংলানিউজের সঙ্গে গত ৬ আগস্ট সোমবার দীর্ঘ সময় ধরে মতবিনিময়কালে কম্পিউটার-বাজার ও এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা, আগামীর প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি জগতের নানা দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন প্রজন্মের স্বপ্ন দেখে চলেছেন তিনি। কারণ তিনি মনে করেন, আগামী দিনে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরেই কম্পিউটার থাকবে। হোক সেটা ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট পিসি বা স্মার্টফোন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র ধারণা মানুষ খুব ইতিবাচকভাবে অনুসরণ করছে। এর মানে আগামী দিনের বাংলাদেশ মানে ১০০ ভাগ কম্পিউটারাইজড প্রজন্মের এক নতুন প্রযুক্তিবান্ধব, ভবিষ্যমুখি নতুন বাংলাদেশ। তরুণরাই হবে যার চালিকাশক্তি।
রাজধানী আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কম্পিউটার মার্কেট হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এই সিটি।
``দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম এখন রাতারাতি হয়ে উঠেচে তুমুল জনপ্রিয়``--একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনলাইন মিডিয়ার অসংখ্য সুবিধা মানুষকে আকৃষ্ট করছে। প্রথমত, অনলাইন বিনা পয়সায় পড়া যায়। দ্বিতীয়ত, একসঙ্গে অনেক পত্রিকা পড়ার সুযোগ। তৃতীয়ত, প্রতি মুহূর্তে আপডেট থাকার সুযোগ। চতুর্থত, মাল্টিমিডিয়া বা একসঙ্গে লেখা অডিও, ভিডিও সুবিধা পাওয়া যায়। এসব মিডিয়া মানুষের মতামত সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ করে। ফলে মানুষ একে খুব ভালোভাবে নিয়েছে। রাতের মধ্যেই আগামী দিনের সংবাদ মানুষ জানছে। ফলে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, দিনকে দিন আরো বাড়বে। ”
“দিন দিন অনলাইনের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে``--এই আশাবাদের কথা বলতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ``কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্টফোনের ব্যবহার যতো বাড়বে অনলাইনের পাঠকও তত বাড়বে। ”
তার মতে, বর্তমান যুগটা যেহেতু ডিজিটাল যুগ, কম্পিউটার ও অনলাইনের যুগ, তাই সব উৎসবেই এখন প্রিয়জনকে ডিজিটাল পণ্য উপহার দেওয়ার চল শুরু হয়ে গেছে। মানুষ ঈদে কাপড়, জুতার বাইরেও কম্পিউটার কেনা শুরু করেছে। আগামীতে এসব পণ্যই বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে বলে মনে করেন তিনি।
মজিবুর রহমান স্বপনবলেন, “নানা ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে বিসিএস কম্পিউটার সিটি দেশে প্রযুক্তিবাজারে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। সিটির প্রতিষ্ঠাতা কমিটিতে আমিও ছিলাম। আহমেদ হাসান জুয়েল, এ টি শফিক উদ্দীন আহমেদরা ছিলেন। আমি বলবো, আমরা দেশের প্রযুক্তি পণ্যের সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছি। কম্পিউটার বিপ্লবকে যথাযথভাবে অনুভব করার কারণেই দিনদিন আমরা সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এটিই সবচেয়ে বড় কম্পিউটার মার্কেট। দেশে আরও কম্পিউটার মার্কেট আছে কিন্ত সেসব মার্কেটের নির্দিষ্ট কোনো ফ্লোরে কম্পিউটার বিক্রি হয়। আমরা শুধু কম্পিউটার পণ্যেরই ব্যবসা করছি। ”
স্বপন বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির গতিধারা আরও শক্তিশালী কাঠামো যাতে পায় সেজন্যই বিসিএস কম্পিউটার সিটি এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমরা নিজেদের সবসময় যুগোপযোগী রাখতে চেষ্টা করবো। সেইসঙ্গে এই মার্কেটের ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা কাজ করছি। ”
“কোনো একজন ক্রেতা যদি মনে করেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় তলার অফিসে অভিযোগ করতে পারেন। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। যে কোনো সমস্যা এক ঘণ্টার মধ্যেই সমাধান করার চেষ্টা করি। ”
তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও মজিবুর রহমান স্বপনের পড়াশোনা বাংলাভাষা ও সাহিত্যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুমিল্লায় প্রশিকার ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেসময়ে পেশাগত কারণে মনিটরিং, প্ল্যানিং এসব কাজে আইটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ধীরে ধীরে আইটি দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয়। ১৯৯৫ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান হাইটেক প্রফেশনালস প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬ সালে প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ ৭১’ নামে একটি সিডি। এতে ছিল প্রায় হাজার খানেক দুর্লভ আলোকচিত্র এবং ভিডিও ক্লিপস। সিডিটি প্রকাশের পর সবার মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। এছাড়া স্বপনের এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক সফটওয়্যারও তৈরি করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সোনামনি, বাউল এবং এইচএসবিসি, ঢাকা ব্যাংক, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বাণিজ্যিক সফটওয়্যার।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে কম্পিউটার পণ্যের বেশিরভাগই চীন থেকে আমদানি করা হয়। এছাড়া এরপর তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া থেকেও প্রযুক্তিপণ্য আসে। বাংলাদেশ সফটওয়্যার শিল্পে কিছুটা অগ্রসর হলেও হার্ডওয়্যার শিল্পে অগ্রসর হয়নি । কারণ এখানকার বাজার এখনো তুলনামূলকভাবে ছোট । মার্কেট আরও বড় হলে এই সেক্টরে অনেক বিনিযোগ হবে। একসময় বাংলাদেশে সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্য তৈরি হবে, এটা অসম্ভব নয়।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানটি গ্রামের একজন সাধারণ কৃষককেও প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, “এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কারো পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। তাই প্রত্যন্ত গ্রামেও সন্তানকে ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ল্যাপটপ বা ফোন কিনে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামে থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার খবর জানছে মানুস। সব বিষয়ে আপডেট থাকছে। সব মিলিয়ে মানুষ এখন বিশ্বপল্লী বা গ্লোব্যাল ভিলেজের বাসিন্দা। ``
ফিরে দেখা বিসিএস কম্পিউটার সিটি
ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বাংলাদেশ ইসলামিক সলিডারিটি এডুকেশন ওয়াকফের (আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ) সহযোগিতায় গড়ে ওঠে বিসিএস কম্পিউটার সিটি।
১৯৯৮ সালে বিসিএস মেলা আয়োজনের জন্য সুপরিসর জায়গা জায়গা খোঁজা হচ্ছিল। পরে আইডিবি ভবনের এই মার্কেটকে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি মেলা আয়োজনের জন্য উপযুক্ত মনে করে। সেবছর সমিতির আয়োজনে কম্পিউটার মেলা আইডিবি ভবনের এই মার্কেটে অনুষ্ঠিত হয়। দেশব্যাপী অভাবনীয় সাড়া ফেলে এ মেলা।
১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, আইডিবি ভবনে কম্পিউটার বেচা-কেনার একটি একক বাজারের জন্ম হয়। প্রযুক্তি জগতের খুব কম মানুষই আছেন, যারা এ কম্পিউটার বাজারটির কথা শোনেননি বা সুযোগ পেলে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য বাজারটি ঘুরে যাননি।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রসর করতে ও এই ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরিতে বিসিএস কম্পিউটার সিটির অবদান সিংহভাগ। ১৯৯৮ সালে সেই প্রথম মেলার পর থেকেই দোকান বরাদ্দ নেওয়া শুরু হয়। তখন অনেকটা ডেকে ডেকে প্ররোচিত করে দোকান বরাদ্দ নিতে উৎসাহিত করা হতো। এখন এই মার্কেটে ১৫৮টি দোকান রয়েছে।
২০০০ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির উদ্যোগে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই বছরই কমিটি ‘সিটিআইটি ফেয়ার’ নামে মার্কেটে মেলার আয়োজন করে। মেলায় অংশগ্রহণকারীরা মূলত মার্কেটের দোকান মালিকেরা। এর বাইরেও কিছু স্টল থাকত।
সেই থেকে দুই বছর মেয়াদী নির্বাচিত কমিটি হয়ে আসছে। প্রতি বছরের মেলার আয়োজনে পরিবর্তন আসে। নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা মেলা আয়োজন ছাড়াও মার্কেটের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদির দেখভাল করে থাকেন। আজকের এই কম্পিউটার সিটি দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হার্ডওয়্যার ব্যবসা ধরে রেখেছে।
বাংলাদেশ সময় ১১০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১২
এমআইআর / রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]