ঢাকা: বাংলাদেশে তৃতীয় প্রজন্মের (থার্ড জেনারেশন-থ্রিজি) প্রযুক্তি সেবার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে হাসিখুশী রাখতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেছেন।
রোববার সকাল ১২টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ভিডিও-কলে কথা বলে এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। আর এরই মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।
থ্রিজি প্রযুক্তি সেবার উদ্বোধন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ১১টায় শুরু হয় এ অনুষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, ``আজ থেকে টেলিটক প্রযুক্তিতে নতুন মাইলফলক সূচিত হলো। এর মাধ্যমে উন্নত ডিজিটাল সেবা পাওয়া যাবে। অগ্রযাত্রায় সহায়তা করার জন্য চীন সরকারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাই। ১৯৯৬ সালে একটি কোম্পানির মনোপলি ব্যবসা ভেঙ্গে দিই। কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স তুলে দিই। এটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসে। থ্রিজি‘র মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি সেবা আরও বাড়বে। দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছি। ই-বুক, মোবাইল ফোনে বাংলা এসএমএস চালু করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে নিম্ন মাধ্যমিকে কম্পিউটার শিক্ষা প্রচলন করবো। ২০হাজার মাল্টিমিডিয়া কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে। তা আশা করি অব্যাহত রাখতে পারবো। দেশের মানুষকে হাসিখুশি রাখতে পেরেছি। আশাকরি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারবো। ’
বক্তৃতা শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আজিমপুর গার্লস স্কুলের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
মাওলানা আব্দুল মোমিন সিরাজীর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। পরে পাঠ করা হয় অন্য ধর্মগ্রন্থ থেকেও।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বোস, আইটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়, ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌমন্ত্রী শাজাহান খানসহ বেশ ক’জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, কূটনীতিক, মহাজোট সরকারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সুনীল কান্তি বোস বলেন, ``১৯৯৬ সালে একাধিক কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়ায় একটি কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। আজ থ্রি জি প্রযুক্তি চালুর মধ্য দিয়ে আরেকটি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হলো। এ সেবার মাধ্যমে জনগণ দ্রুতগতির মোবাইল ফোনসেবা পাবেন। ``
থ্রিজি প্রযুক্তি চালুর কারিগরি উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নবনির্মাণে ভূমিকা রাখার জন্য সজিব ওয়াজেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
আবার ক্ষমতায় এলে ৪জি: সজীব ওয়াজেদ জয়
ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ``আমাদের যেটা পরিকল্পনা ছিল, সে অনুযায়ী আমাদের কী প্রয়োজন সেটা আমরা বিশ্লেষণ করেছি। আমরা চেয়েছি কিভাবে প্রযুক্তির সুবিধা মফস্বল বা গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। আমরা চাইনি ডিজিটাল সার্ভিসে শহরে মানুষ লাভবান হোক আর গ্রামের মানুষ পিছিয়ে পড়ুক। এ টু আই সেলের মাধ্যমে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ``
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক দূর এগিয়ে আসতে পেরেছি। সরকারি সার্ভিস, পেমেন্ট, মোবাইলে ট্রেনের টিকিট অনলাইনে ক্রয় করতে পারছেন। সাড়ে ৪হাজার তথ্য কেন্দ্র ১ বছরের মধ্যে তৈরি করতে ফেলেছি। খ্রি জি সার্ভিস চালু করতে পেরেছি। এটি খুবই প্রয়োজন ছিল। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে ফোর-জি বাস্তবায়ন করবো।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, টেলিয়োগাযোগ প্রযুক্তির মহাসড়কে প্রবেশ করি আমরা। বিএনপির সময় একটি কোম্পানিকে দেওয়া হয়। যা ছিল জনসাধারণের নাগালের বাইরে। দাম ও কলরেট ছিল আকাশচুম্বী। ১৯৯৬ সালে সেই মনোপলি ব্যবসাকে ভেঙ্গে দিয়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
ডিজিটাল অগ্রযাত্রার নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
থ্রিজি চালু হওয়ায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট গতি বেড়ে যাবে বহুগুণ। ফলে এখন যে কাজটি মোবাইল ফোনে করতে বেশি সময় লাগে। তখন এটি বর্তমান সময়ের থেকে কম সময়ে করা যাবে। আর টেলিভিশন দেখা যাবে মোবাইল ফোনে। আর কথা বলার সময় যিনি মোবাইল ফোন করবেন তার ছবি ও অবস্থান জানা যাবে। জিপিএসের মাধ্যমে পথ নির্দেশনা পাওয়া, উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারসহ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়া সম্ভব।
সূত্র জানায়, সোমবার থেকে রাজধানীর টেলিটকের তিন হাজার রিটেইল পয়েন্ট এবং ৮টি বিশেষ গ্রাহক সেবা কেন্দ্র থেকে থ্রি জি’র সিম বিক্রি শুরু হবে। তাছাড়া যারা পুরনো সিম থ্রিজিতে রূপান্তর করতে চায় তাদেরকে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে এটি করতে হবে।
প্রথম পর্যায়ে ৫টি টেলিভিশন চ্যানেল মোবাইল ফোনে দেখা যাবে। এদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিবি), সময় টেলিভিশন, আরটিভি, মাই টিভি এবং জিটিভি। এছাড়া অন্য চ্যালেনগুলো এ প্রযুক্তির মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র মতে, আপাতত শুধু রাজধানী ও আশপাশের গ্রাহকরা থ্রিজি সুবিধা পাবেন। প্রাথমিকভাবে ঢাকা শহরের ৪ লাখ গ্রাহক এই সুবিধা পাবেন। এ বছরের শেষ নাগাদ চট্টগ্রামে চালু করা হবে থ্রিজি। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ভয়েস কলের (শুধু কথা বলা) রেট এখন যা আছে থ্রিজি’তেও তাই থাকবে বলে জানা গেছে। টেলিটকের থ্রি-জির সব সার্ভিসেই ১০ সেকেন্ড পালস সুবিধা থাকবে।
এদিকে অন্য মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো যাতে আগামী বছরের শুরুতে থ্রিজি তে যেতে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, ১৪ অক্টোবর, ২০১২
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর