ঢাকা : আনন্দ-উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হল এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ‘এসোসিয়েশন অব কম্পিউটিং মেশিনারিজ-ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (এসিএম -আইসিপিসি)’। এশিয়া অঞ্চলের ঢাকা সাইটের এবারের প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে খেতাব অর্জনকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
৮ ডিসেম্বর ঢাকার রেডিসন হোটেলের ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি দিনব্যাপী চলে তথ্যপ্রযুক্তির নানা আয়োজন। অংশগ্রহণকারী দেশি বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ জন করে সদস্যের ১৫০টি দল এতে অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে বাংলাদেশের ৬৪ টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইটি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা ছিল। চীনের ২টি এবং ভারতের ১টি দলের সাথে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে দেশীয় টিমগুলোর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই শরু হয় এ প্রতিযোগিতা। সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে একটানা প্রতিযোগিতা। এতে প্রতিযোগীদের মোট ১১ টি প্রোগামিং’র সমাধান করতে দেওয়া হয় । আর যার ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে বড় পর্দায় প্রদির্শিত হয়। যেখানে লক্ষ্য করা যায় চীন টিম শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল।
অবশেষে মোট ৭ টি সমস্যার সমাধান করে চ্যাম্পিয়ন দল হওয়ার গৌরব অর্জন করে চীন। অন্যরাও একই সংখ্যক সমাধান করলেও সময় ও অন্যান্য বিষয়ের উপর বিচার করে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। এতে, চ্যাম্পিয়ন হয় চীনের সাংহাই জিয়াতুং বিশ্ববিদ্যালয়, রানারআপ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃতীয় চীনের ফুদান ইউনিভার্সিটি।
বেশিরভাগ দল ৬ টি থেকে ৫ টি সমস্যার সমাধান করে। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেয় মোট ৮ টি দল। যাদের মধ্যে প্রায় ৩ টি দল ৬ টির সমাধান করতে সক্ষম হয়। প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলে, যেহেতু আন্তর্জাতিক কনটেস্ট একটু কঠিন হবেই। তবে, প্রথম দিকের ৫ টি মোটামুটি প্রচলিত ধারারই ছিল, ৬ নম্বরটাও সমাধানযোগ্য ছিল। কিন্তু পরেরগুলো জটিল ছিল।
বৃহৎ এই প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ১৫০ টি দলের মধ্যে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মাত্র ৩ টি দলের অংশগ্রহণ, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায়, আগেও দেশে কয়েকবার এসিএম কনটেস্ট হয়েছে। যেখানে এমন সাড়া আসেনি। তাই এটা অনেক বড় অর্জন। আগামীতে আরো সম্প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করেন আয়োজকরা।
এসিএম-আইসিপিসি’র এটা ১৬তম আয়োজন। আর বাংলাদেশেও এতো বড় পরিসরে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আসর এই প্রথম।
উল্লেখ্য, এখান থেকে বিজয়ী ৩টি দল আগামী জুনে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ফাইনাল ২০১৩’তে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
সন্ধ্যায় কনটেস্টের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলন সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, অ্যামেরিকান চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি আফতাবুল ইসলাম এবং সার্ক চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আনিসুল হক। এ সময় বিজয়ীদের মাঝে সম্মাননা চেক এবং ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু একটি দেশাত্মকবোধক গান পরিবেশন করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ভাবনায় তাদের পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। সবশেষে আলিফ আলাউদ্দিনের সংগীত পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এসিএম-আইসিপিসির অনুষ্ঠান।
এর আগে, সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সবুর খান। অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান, প্রতিযোগিতার পরিচালক এবং ডিআইইউ’র কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপর ড. সৈয়দ আকতার হোসেন প্রমুখ।
অতিথিরা এই আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে সফলতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করেন।
এ আয়োজনের প্লাটিনাম পার্টনার ছিল আমেরিকার ক্লাউড স্পোকস্ ডট কম, সিলভার থেরাপ (বিডি) লিমিটেড., নেটওয়ার্ক পার্টনার গাজী কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং হার্ডওয়্যার সাপোর্ট পার্টনার গ্লোবাল ব্র্যান্ড লিমিটেড ।
বাংলাদেশ সময় : ০৪২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১২
সম্পাদনা : হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর