শাহীন ধাদার ঘরে যখন পুলিশ এল তখনও কারণটা অজানা। যখন গ্রেপ্তার হলেন তখনও শাহীন জানে না তার অপরাধটি আসলে কি! একুশ বছরের শাহীন মেডিকেলের শিক্ষার্থী।
দু নারীর অপরাধ ছিল এটাই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশ, নিজের স্বাধীন মত প্রকাশের অপরাধেই গ্রেফতার হল দুই মেডিকেল শিক্ষার্থী।
ঘটনাটি আসলে কি ছিল? কি এমন ছিল শাহীনের মন্তব্যে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। সেখানে বের হয়ে আসে সাধারণ নাগরিক শাহীন ভারতীয় শিক্ষার্থী। মনের মধ্যে জন্মায় হতাশা, ক্ষোভ।
সম্প্রতি ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বাল ঠাকরে মারা যান। যখনই এ নেতার মৃত্যুর খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তখন রাজনৈতিক নেতরা পুরো মুম্বাই শহর বন্ধ করে দেয়।
এ ঘটনায় বিরক্ত হয়েই শাহীন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, হাজার মানুষের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, এ পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ প্রতি সেকেন্ডে মারা যাচ্ছে। তারপরও এ পৃথিবী এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়নি। অথচ একজন রাজনীতিবিদের সাধারণ মৃত্যু হলো। সেটাকে নিয়ে পুরো শহর বন্ধ হয়ে গেল। তাদের মনে রাখতে হবে আমাদের ঘরে জোর করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা নিজের ইচ্ছাতে ঘরে বসে নেই।
সম্মান মানুষ অর্জন করে। কখনও জোর করে সম্মান আদায় করা যায় না। শাহীন তার পোস্টটির শেষ লাইনে লিখেন, আজকে এ শহর কারও সম্মানে স্তব্ধ হয়ে যায়নি। এ শহর স্তব্ধ হয়েছে ভয়ে, আতঙ্কে।
এ পোস্ট দেখেই পুলিশ আসে শাহীনের বাসায়। তার আগেই অবশ্য শাহীন ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে নেন। এরপর তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় শেষ পর্যন্ত।
এরপর শাহীন ও তার বন্ধু রেনুর পক্ষে সোশ্যাল সাইটগুলোতে প্রচারণা সোচ্চার হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় জোরালোভাবে নিন্দিত হতে থাকে পুলিশের এ আচরণ। বিশ্বব্যাপীও এ ঘটনার নিন্দা চলছে। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগে চলছে সমালোচনা।
প্রসঙ্গত, ১৯ নভেম্বর অভিযুক্ত এ দু বন্ধুকে জামিন দেওয়া হয়। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলার শুনানীর জন্য অপেক্ষা করছেন শাহীন ও রেনু। যদিও আদালত শাহীন ও রেনুকে গ্রেপ্তার করা কেন অবৈধ হবে না বলে ভারতীয় পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১৬৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর