ঢাকা: অনেকদিন আগের কথা। টুইটার, ফেসবুক কিছুই ছিলো না তখন; মুঠোফোন, ইন্টারনেট ছিলো সদ্য নবজাতকের নাম।
সেসময়ই এক ক্রিসমাসের আগে ভিন্ন কায়দায় সহকর্মীকে উৎসবের শুভেচ্ছা জানালেন নেইল প্যাপোর্থ।
দিনটি নিয়ে প্যাপোর্থের অভিমত, “যেহেতু তখন ফোনে কোনো কি-বোর্ড ছিলো না, তাই আমাকে কম্পিউটারে মেসেজ লিখতে হয়েছিলো। ‘মেরি ক্রিসমাস’ লিখে ভোডাফোনের রিচার্ড জার্ভিসকে পাঠিয়েছিলাম। ”
আর ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর পাঠানো এ ছোট্ট কথা দুটিই ছিলো পৃথিবীর প্রথম এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা।
ক্ষুদেবার্তা যে তার ২০তম জন্মদিনের মধ্যে এতো ব্যাপক আকার ধারণ করবে, তা হয়তো সেসময় কল্পনাও করতে পারেননি প্যাপোর্থ। ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বরে এসে আধুনিক প্রযুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে এটি, স্বল্প খরচের জনপ্রিয়তম মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সারা বিশ্বে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, ২০১১ সালে সারা বিশ্বে ৮ লাখ কোটিরও বেশি টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান হয়।
২২ বছর বয়সী প্যাপোর্থ সেসময় সেমা গ্রুপ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভোডাফোনের জন্য ‘শর্ট মেসেজিং সার্ভিস সেন্টার’ নামক একটি গবেষণা প্রকল্পের সদস্য ছিলেন তিনি। এর উদ্দেশ্য ছিলো প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখার ম্যানেজারদের দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত তথ্য জানানোর জন্য একটি টেক্সট সার্ভিস চালু করা। প্যাপোর্থের মতে, তখন একে এমন আহামরি কিছু মনে হয়নি। সেই অবস্থান থেকে যেভাবে এসএমএস আজকের অবস্থানে উঠে এলো, তা খুবই আশ্চর্যজনক। ভোট দেওয়া থেকে শুরু করে গাড়ি চালানো, বিমান নিয়ন্ত্রণ সবই হচ্ছে টেক্সট মেসেজ ও তার বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে।
এরপর টেক্সট মেসেজের সর্বজনীন হতে ৭ বছর সময় লেগেছে। ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কোম্পানি টাকার বিনিময়ে মেসেজ সার্ভিস চালু করে। তখন দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে এর জনপ্রিয়তা। কোম্পানিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যাওয়ার ফলে দ্রুত কমতে থাকে মেসেজের চার্জ, যা বর্তমানে নামমাত্র মূল্যে ব্যবহার করছেন গ্রাহকরা।
২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চালানো যুক্তরাজ্যের একটি বেসরকারি জরিপ মতে, বর্তমানে বিশ্বে আদান-প্রদানকৃত মোট বার্তার মধ্যে ৯২ শতাংশই এসএমএস নির্ভর।
জরিপে জানানো হয়, ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে থাকেন, যার পরিমাণ প্রতি সপ্তাহে ১৩৩টি। পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি মেসেজ পাঠিয়ে থাকেন, কিন্তু নারীরা পুরুষদের চেয়ে দীর্ঘতর মেসেজ পাঠান। জরিপে বলা হয়, পুরুষরা যেখানে মেসেজকে ব্যবসায়িক কাজকর্মের মাধ্যম হিসেবে দেখেন, নারীরা সেখানে দেখেন মনের ভাব প্রকাশের সংক্ষিপ্ত মাধ্যম হিসেবে।
এতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে মোবাইল ফোনে ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করে থাকেন তা হচ্ছে সময় দেখা। আর এরপরই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এসএমএস পাঠানো।
নিজের তিন সন্তানের জন্মের খবরও স্বজনদের মেসেজ করেই পাঠিয়েছেন প্যাপোর্থ। টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের পর স্যামুয়েল মোর্সের প্রথম বার্তা ‘হোয়াট হ্যাথ গড রট’ কিংবা টেলিফোন আবিষ্কারের পর আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের প্রথম কথা ‘মি. ওয়াটসন, কাম হেয়ার’-এর মতো প্যাপোর্থের ‘মেরি ক্রিসমাস’-ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এমনটাই মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১২
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর