ঢাকা: শীতের সেই কনকনে ঠান্ডা ভাবটা না থাকলেও শীতকে আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আবহাওয়ার এমন অবস্থা অবশ্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত দেশের অন্যতম তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) উৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১২ পর্বে কোনো বৈরী প্রভাব রাখছে না।
সবশেষ আয়োজন
৮ ডিসেম্বর মোট কয়েকটি সেমিনার হওয়ার কথা। এর মধ্যে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত হবে পাঁচটি। হলভেদে এসব সেমিনারের বিষয় হচ্ছে- লোকালাইজেশন মোবাইল কনটেন্ট অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেসন্স, টেক ব্যাক দ্য টেক: এমপাওয়ার ওমেন থ্রো আইসিটি, জেনেটিকস অ্যান্ড আইসিটি এবং প্রটেকটিং ইনটেলেকচুয়্যাল প্রোপার্টি ইন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড।
শেষদিনের দ্বিতীয় অংশে আয়োজনের মধ্যে আছে চিলড্রেনস ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, লিবার্টি টু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম, কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যাজ এ নিউ ক্যারিয়ার অ্যান্ড বিজনেস প্রসপেক্ট এবং এমটিবি আইটি জিনিয়াস।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রদশর্নীতে সর্বসাধারণের অংশ গ্রহণ নিশ্চিতে কোনো প্রবেশমূল নেই। এরই মধ্যে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যও সফল হয়েছে।
সরকরি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান আর উদ্যোক্তাদের মিলন মেলায় মুখরিত হয়েছে এ প্রদর্শনী। এ মুহূর্তে সরকারের সব ধরনের ডিজিটাল উদ্যোগ এ প্রদর্শনীতে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আর তাতে দেশের প্রতিটি জেলার সরকারি আইসিটি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছে।
‘সমৃদ্ধির জন্য জ্ঞান’। এমন বার্তাই এবারের দশনার্থীদের টানছে বেশি। এ আয়োজনের পুরো তিন দিনজুড়েই আছে সম্মেলন, কর্মশালা আর বিজনেস ম্যাচমেকিং বৈঠক, উদ্যোক্তা মতবিনিময় আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্বাধীন পেশা আউটসোর্সিং বিষয়ে নানামুখী আলোচনা।
এরই মধ্যে অ্যাওয়ার্ড নাইটে ৯টি ক্যাটাগরিতে সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল সফল এবং আলোচিত উদ্যোগ এবং ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিজয়ী প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে একটি করে ল্যাপটপ। দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি উদ্যোগ এখানে পুরস্কৃত হয়েছে।
এ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ আইসিটি খাতে ভাবনার চেয়েও এগিয়েছে। ২০২১ সালেই আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণ হবে এটাও সুস্পষ্ট। আর কাগজহীন সভ্যতায় প্রবেশ করতে আর দু থেকে তিন বছর সময় নেবে বাংলাদেশ।
কারণ দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং সেবা কার্যক্রম ই-গভর্ন্যান্সের আওতায় চলে আসছে। এরই মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এর সুফলও পেতে শুরু করেছে।
এদিকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের (www.digitalworld.org.bd) এ ওয়েবসাইটে গিয়ে নিয়মিত (৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত) আপডেট তথ্য পাওয়া যায়নি। সাইটের মূল ছবিতে এবারের প্রদর্শনীর কোনো ছবিই নেই। দৃশ্যমান ই-এশিয়ার ছবি। নেই নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও। তাই প্রদর্শনীতে না এসে এ সম্পর্কে সাইটভিত্তিক তথ্য পাওয়ার বিষয়টি একেবারেই নজর এড়িয়ে গেছে।
এ ছাড়াও সাইটে বাংলা ভাষায় তথ্যেও অনুপস্থিতি আছে। এমনটা বাংলানিউজকে জানালেন বেরসরকারি ব্যাংকার রবিউল ইসলাম। তবে কর্মজগৎ ডটকমে প্রদর্শনীর অনলাইন লাইভ সম্প্রচার করছে।
প্রসঙ্গত, ছুটির দিন শুক্রবারও (৭ ডিসেম্বর) সম্মেলন ছিল দর্শকপূর্ণ। তবে প্রথম দিনের ডিজিটাল উদ্যোক্তা সম্মেলন দর্শক টেনেছে বেশি। এতে তিনটি সেশনে তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন গুজলের প্রতিষ্ঠাতা আদিত্য ওয়াতাল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্টারপ্রিনিয়রশিপ ডেভলপমেন্টের প্রধান মামুনুর রশীদ, অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ ছাড়াও আলোচিত অনেকে। একই দিনে অনুষ্ঠিত এনভারনমেন্ট সাসটেইনিবিলিটি অ্যান্ড আইসিটি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। শুক্রবারেও ছিল একাধিক সমাবেশ এবং মিট দ্য লিডার শীর্ষক আয়োজন। সকালে আয়োজিত আউটসোর্সিং সম্মেলনে বক্তব্য দেন ওডেস্কের সহ-সভাপতি ম্যাট কুপার, ইল্যান্স ডটকমের ভাইস সহ-সভাপতি চেটিল ওলসন, ৯৯ডিজাইনস ডটকমের জেনারেল ম্যানেজার জেসন সু হোয় এবং ফ্রিল্যান্সার ডটকমের সহ-সভাপতি ডেভিড হ্যারিসন।
এছাড়া একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় মিট দ্য লিডার শীর্ষক আয়োজন। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আসরে উপস্থিত ছিলেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক ড. ক্রেগ ওয়ারেন স্মিথ।
কাউড ক্যাম্প : দেশে প্রথমবার অনুষ্ঠিত কাউড ক্যাম্পে কাউড কম্পিউটিংয়ের নানাদিক নিয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয় আলোচনা করা হয়। একই দিন দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদেরও দিক নির্দেশনা এবং উৎসাহ দিতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ফ্রিল্যান্সিং সম্মেলন।
তবে প্রাঙ্গণে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে রোবট প্রদর্শনী। রোবো এক্সপজিশন জোনে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৯টি প্রকল্প নিতে হাজির হয়েছে। দর্শকদের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে নাসা-লুনাবোটিক্স মাইনিং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি চন্দ্রবোট, এমআইএসটির লুনামিস্ট, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের তৈরি উড়ন্ত কোয়াড্রো-ফ্যালকন, বুয়েটের রাফি এবং ই-বট, রুয়েটের কাঁকড়া ও স্পাই অব রুয়েট, কুয়েটের রিমোট হেলথ কন্ট্রোল ও অবস্ট্যাকল স্কিপার, আইইউটির আইসোমেট্রিক, চুয়েটের ভয়েস কমান্ড রোবট এবং বাই-প্যাডেল রোবট।
প্রতিটি রোবট দেখতেই দর্শকদের আগ্রহের সামান্য কমতি নেই। রোবট দেখতে আসা শিক্ষার্থী তাসনিম তাবাসসুম বাংলানিউজকে বলেন, দেশের তৈরি রোবটগুলো দারুণ। দেশ আইসিটি আর রোবট গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে। এতগুলো রোবট দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে রোবট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তৈরি হয়েছে। তাই এখানে দেখতে এসেছি।
এদিকে প্রবেশ পথের বরাবর একেবারে শেষ অংশে আছে টেলিটকের থ্রিজি এক্সপিরিয়েন্স জোন। এখানে সচিত্র ভিডিও কল, টিভি দেখাসহ থ্রিজির নানা অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।
এবারের এ আয়োজনে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের সেমিনার ও কর্মশালার বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন ১৩০ জন শীর্ষ প্রযুক্তিবিদ।
এ ছাড়াও ৬০টি বেসরকারি, ২৭টি মন্ত্রণালয় (বিভাগ) এবং আন্তর্জাতিক স্টল প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং আন্তঃবিভাগ নিজেদের নানা উদ্যোগ তুলে ধরেছে।
এক্সপেরিয়েন্স জোনে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ইন্টারনেট সেন্টার ও হাইটেক এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। দর্শনার্থীদের জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধার বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে। বাংলানিউজকে এমনটাই জানালেন বেসরকারি কর্মকর্তা সাফায়েত করিম।
এদিকে অংশগ্রহণকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ইনটেল, ডেল, জিপিআইটি, স্যামসাং, সিসকো, লিডস করপোরেশন, ডাটাসফট, আইবিসিএস-প্রাইমেক্স সফটওয়্যার, ইএটিএল, কমপিউটার সোর্স এবং টেলিটক। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনলাইন তথ্যভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগই এখানে গুরুত্ব পেয়েছে বেশি।
বাংলাদেশ সময় : ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১২
এনএইচ/সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর [email protected]