প্রযুক্তি অঙ্গনে ২০১২ সাল ছিল বহুল আলোচিত এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনাপূর্ণ। এ বছরের শুরুতে কেউ ভাবেনি আইফোনকে টেক্কা দেবে স্যামসাং।
এমনটা কারও ধারণাতেও ছিল না। নিত্যনতুন পণ্য যেমন প্রযুক্তিজগৎ মাতিয়ে রেখেছে, তেমনি অনেক টেক জায়ান্ট ব্যক্তিত্ব বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন। তেমনই কয়েকটি পণ্য নিয়ে এ প্রতিবদেন-
গ্যালাক্সি এসথ্রি:
স্যামসাং কখনও মোবাইল বাজার ধরার জন্য মরিয়া ছিল না। অনেকটা নিশ্চুপ থেকেই নিজেদের পণ্য নিয়ে বাজারে আসে স্যামসাং। অ্যাপলের কাছে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে খুব একটা চিন্তাও তাদের মধ্যে দেখা যায়নি।
এরপরও এ বছরের সেরা স্মার্টফোন হয়েছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এসথ্রি। যখন এ স্মার্টফোন বাজারে অবমুক্ত হয়, তখন থেকেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না। যদিও প্রযুক্তিবোধ্যরা একে খুব একটা আমলে নেননি। অনেকেই বলেছেন, যতকিছুই হোক; দিন শেষে অ্যাপলই সেরা।
কিন্তু সব কিছুকে ভুল প্রমাণ করে তারা পৌঁছে গেছে প্রথমস্থানে। বাজারে স্যামসাং এসথ্রির এখন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত করবরাহ থাকা সত্ত্বেও বিক্রির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্যামসাং।
যদিও অ্যাপলের কাছে আইনি লড়াইয়ে হেরে অনেকটাই সমালোচনার তোপে পড়েছে স্যামসাং। কিন্তু এতে তাদের তেমন কিছুই আসে যায় না। কারণ বেলা শেষে প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে অ্যাপল এবং নকিয়াকে পেছনে ফেলেছে স্যামসাং।
সিইও মারিসা মায়ার:
মারিসা মায়ারকে যখন ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী নির্বাচন করা হলো, তখন সমালোচকরা তাচ্ছিল্যের হাসিতে বলেছিলেন, ডুবন্ত ইয়াহুকে ঘটা করেই ডোবাবে এ মহিলা।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা মারিসা মায়র ছিলেন ইয়াহুর প্রথম মহিলা প্রকৌশলী। সুতরাং যোগ্যতা দিয়েই মারিসা ইয়াহুর প্রধানের পদটি পেয়েছেন। তবে নিন্দুকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে খুব বেশি সময় নেননি মারিসা।
এরই মধ্যে মারিসা যখন মা হলে আবারও সমালোচকেরা তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। অথচ মা হওয়ার মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যেই ইয়াহু অফিসে নিজের কক্ষে এসে মারিসা বলেন, একজন ‘মা’ সবকিছুই সামাল দিতে পারেন।
এতে সমালোচকদের খুব বেশি কিছু বলার ছিল না। কিন্তু বছর শেষে সমালোচকদের মুখ পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন। কারণ বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে ইয়াহু লাভের অংশ গুণতে শুরু করে দিয়েছে। ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াচ্ছে পুরনো এ প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ মারিসা ঘোষণা দেন, ২০১৩ সালে ইয়াহু কাজ করবে মোবাইল ফোন নিয়ে।
সেলফ ড্রাইভিং কার:
এ বছর গুগলের সেলফ ড্রাইভিং কার ব্যাপক আলোচনায় আসে। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়ে গেছে। গাড়িটি নিজে নিজেই চলতে সক্ষম। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে গুগলের এ উদ্ভাবন। তবে এখানে সাহসের দরকার ছিল। তবে উদ্যোগটি ছিল প্রসংশাযোগ্য। গাড়ি চলবে নিজে থেকেই; এখানে ভয়ের আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ মেশিনের সমস্যা যেকোনো সময়ই হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ বলেন, অবশ্যই যন্ত্রের ওপর নির্ভর করা ঠিক না। এখন পুরো বিশ্বই নির্ভর করে যন্ত্রের ওপর। দুর্ঘটনা হতেই পারে। গুগলের গাড়িটি দুর্ঘটনার স্বীকারও হয়েছে। তবে এ সময় ড্রাইভিং সিটে ছিল মানুষ। বরং চালকহীন অবস্থাতেই গুগল কার নিরাপদ। গুগলের এ আত্মবিশ্বাস কতটুকু ধোপে টিকে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন গুগল সমালোচকেরা।
উইন্ডোজ ৮:
যদিও মাইক্রোসফটের নতুন এ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এখন সমালোচনার সময় আসেনি। সবে কমাস হলো উইন্ডোজ-৮ বাজারে এসেছে। এ পণ্যকে সমালোচনার আমলে নিতে হলে খানিকটা সময় তো দিতেই হবে।
তবে মাইক্রোসফট এ পণ্য বাজারে নিয়ে আসার আগেই যেভাবে আলোচনায় আসতে চেয়েছিল তা দেখে স্পষ্ট বোঝা গেছে তাদের দূর্বলতার কথা। মাইক্রোসফট প্রযু্ক্তিজগতে এ সময়ে অনেকটাই কোনঠাসা। এটা অজান্তেই প্রমাণ হয়েছে। আলোচনায় আসার জন্য যেন মাইক্রোসফট এখন মরিয়া।
যদিও মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী স্টিভ বালমার বলেন, উইন্ডোজ ৮ দিয়ে হারানো বাজারে ফিরবে মাইক্রোসফট।
প্রসঙ্গত, উইন্ডোজ ৮ হচ্ছে মাইক্রোসফটের একমাত্র অপারিটিং সিস্টেম যা ট্যাবলেট, আইপ্যাড এবং স্মার্টফোনে ইনস্টল করা সম্ভব। আর পার্সোনাল কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ তো আছেই। বছরের শেষদিকে মাইক্রোসফটের এ পণ্য ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
সার্ফেস ট্যাবলেট:
এ বছর বাজারে হার্ডওয়্যার পণ্য নিয়ে আসার কথা ছিল মাইক্রোসফটের। মাইক্রোসফট সার্ফেস ট্যাবলেট নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নয়। তবে প্রযুক্তিজগতে টিকে থাকতে হলে হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করতেই হবে। এ সত্যটা মাইক্রোসফটের দেরিতে হলেও অনুধাবন করেছে।
মাইক্রোসফটের সিইও স্টিভ বালমার জানান, নিজেদের সফটওয়্যারের সঙ্গী হিসেবে এবার মাইক্রোসফটের হার্ডওয়্যারের যাত্রা শুরু। কারণ গুগল, স্যামসাং এবং অ্যাপল এ তিন টেক গুরুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজার ধরে রাখতে নিজস্ব হার্ডওয়্যার তৈরি করা ছাড়া আপাতত কোনো বিকল্প ছিল না মাইক্রোসফটের।
তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় মাইক্রোসফটের পরিচিতি সফটওয়্যার নির্মাতা হিসেবে। অফিস বা উইন্ডোজের মতো কম্পিউটারে প্রাণ সঞ্চারকারী প্রযুক্তির হাত ধরেই গত কয়েক দশকে একচেটিয়া বাজার দখলে রাখে শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠানটি। এখনও তাদের অপারেটিং ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ কম্পিউটারে। তাই সফটওয়্যার দুনিয়ার এমন একচ্ছত্র অধিপতির ট্যাবলেট তৈরির ঘোষণা ভক্তদের খানিকটা চমকেই দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১৮৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান