নিউজউইক। ভুবন বিখ্যাত এ প্রকাশনার নাম খুব কম সচেতন পাঠকেরই অজানা।
ইন্টারঅ্যাকটিভ করপোরেশনের (আইএসিআই) মালিকানাধীন এ প্রকাশনা মাধ্যমটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ আরও সফল ব্যবসা করতেই ছাপানো থেকে অনলাইন সংস্করণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নিউজউইকের এডিটর-ইন-চিফ টিনা ব্রাউন বলেন, সময় এখন ডিজিটাল প্রকাশনার। একে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রকাশনা শিল্পে ব্যয়ভার এবং সার্কুলেশন ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় খরচের সঙ্গে তাল মেলানো যাচ্ছিল না। ফলে এ সংকটের শুরুতেই কর্মী ছাটাই করে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু বিশ্বের সব দেশের পাঠক এবং বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছ থেকে নিউজউইকের অনলাইন সংস্করণের জন্য ব্যাপক চাপ আসতে থাকে। ফলে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রকাশনা আর অনলাইন এ দু সংস্করণকে একসঙ্গে না টেনে অনলাইনেই প্রধান মাধ্যম করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে টিনা ব্রাউন সাক্ষাৎকারে প্রিন্টের পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যমের প্রস্তুতির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন। বিশ্বের গণমাধ্যমে এ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তবে নিউজউকের এমন সিদ্ধান্ত কিন্তু অনলাইন গণমাধ্যমে জন্য আর্শীবাদই হচ্ছে।
এখনও ডিজিটাল মার্কেটিং মূল ধারা থেকে অনেকটা পিছিয়ে আছে। তবে বিজ্ঞাপনী বাজারে এরই মধ্যে থোক বরাদ্দ আসতে শুরু করেছে। অর্থাৎ বিশ্বের ছোট বড় সব প্রতিষ্ঠানই এখন অনলাইন মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে। এতে ক্রেতা এবং পাঠকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করা যায় বলে দ্রুতই এ গণমাধ্যম বিশ্বব্যাপী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
তাই পাঠক, পণ্য বিপণন আর স্বাধীন মতপ্রকাশে অনলাইন হচ্ছে ভবিষ্যতের সবচেয়ে সক্রিয় গণমাধ্যম। দূরত্ব আর সময়ের ব্যবধানকে তুচ্ছ করে নিমিষেই এটি পৌঁছে যায় সঠিক ঠিকানায়, সঠিক লক্ষ্যে।
ছাপনো সংস্করণ এখন সেকেলে পদ্ধতি। খরচের বিপরীতে তাই টিকে থাকার লড়াইয়ে অনলাইন এখন নিশ্চিতভাবেই সফল। এ নিয়ে সংশয় আর শঙ্কার কোনো অবকাশই নেই। এমনই বললেন মিডিয়া বিশ্লেষকেরা।
বিনিয়োগ সংস্থার হিসাব মতে গত বছর ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের ক্ষতি গুণেছে নিউজউইক। ফলে প্রকাশক আর প্রধান সম্পাদকের মধ্যে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বের করা হয় উত্তরণ পথ। আর এ কঠিন সভায় নিউজউইকের প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। পুরোপুরি অনলাইন গণমাধ্যম হওয়ার সিদ্ধান্ত আসে একই সভায়। সব মিলিয়ে সময়ের সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি ইন্টারঅ্যাকটিভ করপোরেশন। এমনটাই বললেন নিউজউইকের প্রধান সম্পাদক টিনা ব্রাউন।
নিউজউইকের মালিক ডিলার এবং প্রধান সম্পাদক টিনা ব্রাউন সবশেষ ২০১২ সালে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের গবেষণা প্রবিবেদনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এ সিদ্ধান্তের পক্ষেই তাদের আগের রায় বহাল রাখেন।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইএসিয়ের মুখপাত্র জাস্টিন স্যাকো জানান, প্রকাশক ডিলার তাদের কাছ থেকে নিউজউইকের আর্থিক তথ্যবিবরণী নিলেও তাদের কিছুই জানানো হয়নি। তবে একটি বড় ধরনের রদবদল হবে তা সহজেই অনুমেয় ছিল জাস্টিনের জন্য।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের হিসাব মতে, নিউজউইকের সার্কুলেশন ১৫ লাখ (৪২ ভাগ) কমে যায়। ২০০৮ সালেও নিউজউইকের ৪০ লাখ সার্কুলেশন বহাল ছিল। বিপুল প্রকাশনায় হঠাৎ এ পরিবর্তনের পেছনে অনলাইন বিমুখ হওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকেরা।
সব মিলিয়ে শুধু নিউইয়র্কেই ২৭০ জন কর্মীর আর্থিক ব্যয়ের চাপ সামলাতে হতো নিউজউইককে। তাই শুধু কর্মী ছাটাই করলেই এ অবস্থার স্থায়ী কোনো সমাধান হবে না। এটা টিনা ব্রাউন স্পষ্টই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই দ্রুতই দীর্ঘদিনের ভুলে থেকে সরে আসতে আরে বেশি সময় নেয়নি বিচক্ষণ এ সম্পাদক।
এরই মধ্যে নিউজউইকের অনলাইন সংস্করণের জন্য পর্যাপ্ত বিজ্ঞাপন জমা পড়েছে। এখন তাই চলছে নতুন দায়িত্ব বণ্টন আর অনলাইনবান্ধব কর্মীদের নিয়োগ।
সব মিলিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে বহুল আলোচিত এবং প্রকাশিত এ সংস্থার এমন সিদ্ধান্তকে বেশিরভাগ পাঠকই স্বাগত জানিয়েছে। আর বিশেষজ্ঞেরাও এ নিয়ে তেমন কোনো বিতর্কের সুর তোলেননি। জয়তু নিউজউইক, জয়তু অনলাইন সংবাদমাধ্যম।
বাংলাদেশ সময় ১৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১২