ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতে প্রযুক্তিপ্রেমীদের বরাবরই নজর থাকে আসন্ন প্রযুক্তি পণ্যগুলোর দিকে। আর এ তালিকায় বেশিরভাগ প্রযুক্তিপ্রেমীরই শীর্ষস্থানে থাকে টেক জায়ান্ট অ্যাপল।
যদিও অ্যাপল এ ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, কিন্তু গত ডিসেম্বরে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক জানিয়েছিলেন, টেলিভিশন বরাবরই তাদের অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়।
এর বেশি কিছু বলতে রাজি না হলেও তার এ মন্তব্যকে ঘিরে এরইমধ্যেই আইটিভিকে ঘিরে নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি বিশ্ব। ২০১৩ সালের আসন্ন প্রযুক্তি পণ্যগুলোর মধ্যে একেই এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা ধারণা করছেন, চলতি বছরের নভেম্বর নাগাদ বাজারে আসতে পারে এটি।
অ্যাপল এরইমধ্যেই টেলিভিশন সম্পর্কিত নতুন কিছু প্রযুক্তির প্যাটেন্ট করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। তারা জানিয়েছে, ফক্সকন, শার্পের মতো বড় বড় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতার সঙ্গে আইটিভির বেশ কিছু প্রোটোটাইপ আদান-প্রদান করেছে অ্যাপল। তবে আইফোন ও আইপ্যাড তৈরির জন্য অ্যাপলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান (অ্যাসেম্বলার) তাইওয়ানের হোন হাই প্রেসিশন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানিই আইটিভির মূল কাজ সম্পন্ন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হার্ডওয়্যার নির্মাণে ফক্সকন ও ডিসপ্লে নির্মাণে শার্প সহায়তা করেছে।
জানা যায়, আইটিভির আকার হতে পারে ৪২ থেকে ৫৫ ইঞ্চি। এতে ব্যবহার করা হবে অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম আইওএসের পরবর্তী সংস্করণ। আইক্লাউড, সিরি, আইসাইটের মতো বিখ্যাত আইওএস অ্যাপ্লিকেশন বিশেষভাবে ব্যবহার করে টিভির বর্তমান ধারণায় পরিবর্তন আনা হতে পারে।
আইপ্যাড বা আইফোনকে টিভির রিমোট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, পাশাপাশি টাচ ভিত্তিক আলাদা রিমোট কন্ট্রোলও থাকবে। এছাড়া টিভিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের বদলে সিরিকেই মূল মাধ্যম তৈরি করার চেষ্টা করছে অ্যাপল। উল্লেখ্য, সিরি হলো অ্যাপলের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন, যেটি ব্যবহারকারীর নির্দেশ মতো বিভিন্ন কাজ করতে পারে। এর ফলে কণ্ঠের নির্দেশের মাধ্যমে দূর থেকে চ্যানেল পরিবর্তন, ভলিউম কমানো-বাড়ানো, অ্যাপস্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড, ইন্টারনেটে সার্চ করা, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালানো ইত্যাদি করা যাবে—ঠিক আইফোন বা আইপ্যাডের মতোই।
ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে টিভি থেকেই অ্যাপলের অ্যাপস্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে চালানো যাবে। এমনকি ভিডিও কল ও আইসাইটের মতো অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এতে ক্যামেরাও থাকতে পারে। টিভির ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) ডিসপ্লেকে বিশ্বসেরা করে তোলার জন্য এতে ব্যবহৃত হতে পারে রেটিনা ডিসপ্লে ও উচ্চ রেজুল্যুশন। গেমস খেলার সুবিধার জন্য সঙ্গে থাকতে পারে এক্সবক্স কাইনেক্ট ধরনের কোনো ইশারা ভিত্তিক ডিভাইস।
যদিও অ্যান্ড্রয়েড সংবলিত ইন্টারনেট নির্ভর স্মার্ট টিভি এরইমধ্যে বাজারে এসে গেছে, তারপরও অ্যাপলের এ টিভি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার জন্য আরও কিছু আকর্ষণীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একটি বিখ্যাত প্রযুক্তি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, অ্যাপল এর মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে সম্পূর্ণ নতুন থ্রিডি ডিসপ্লে সিস্টেম, যা ঘরের মধ্যে দর্শকদের নড়াচড়া, চোখের অবস্থান ইত্যাদি শনাক্ত করে সেরা পারফরম্যান্স নিশ্চিত করবে। এছাড়া দর্শকরা কোন ধরনের অনুষ্ঠান বেশি দেখেন, তা মনে রেখে নিজে নিজেই সে ধরনের অনুষ্ঠান বের করে দেবে এটি।
এর সম্প্রচার পদ্ধতি ঠিক কিরকম হবে, সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বর্তমান স্মার্ট টিভিগুলোয় ক্যাবল সংযোগের সুবিধা থাকলেও উৎসাহিত করা হচ্ছে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে টিভি দেখাকে। সেক্ষেত্রে ক্যাবল সংযোগ সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হতে পারে আইটিভিতে, থাকতে পারে শুধু সরাসরি ইন্টারনেট সম্প্রচারের মাধ্যমে টিভি চ্যানেল দেখার সুবিধা।
আইটিভির দাম কেমন হতে পারে, তা নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপলের অন্যান্য পণ্যের দাম তুলনামুলক বেশি হলেও নতুন এ পণ্য দিয়ে দ্রুত বাজার দখল করার দাম কম রাখার কথা ভাবছে অ্যাপল। এমনকি সেটা ২ হাজার ডলারের মধ্যেও হতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আইফোন, আইপ্যাড ও প্রচলিত টেলিভিশন ধারণার সমন্বয় ঘটিয়ে একে একটি আদর্শ ডিভাইস হিসেবে তৈরি করার চিন্তা করছে অ্যাপল।
উল্লেখ্য, অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবস একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, টেলিভিশন তার একটি গভীর আগ্রহের জায়গা, একে সবচেয়ে সহজে ব্যবহার করার কোনো পদ্ধতি তিনি বের করতে চান। আর আলোচিত আইটিভি বাজারে এলে জবসের এ স্বপ্ন শতভাগ সত্যি হবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বোদ্ধারা।
অবশ্য বাংলাদেশের জন্য এ খবর আকর্ষণীয় হলেও এটি ব্যবহারের উপযোগী পরিবেশ ২০১৩ সাল নাগাদ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। উচ্চগতির ইন্টারনেট ধীরে ধীরে পরবর্তী প্রজন্মের টিভিগুলোর মুল চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে, যার তুলনায় আমাদের দেশের ইন্টারনেটের গতিকে কচ্ছপের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না।
এছাড়া ইন্টারনেট ভিত্তিক টিভি চ্যানেল, এইচডি রেজুল্যুশন ইত্যাদি নতুন প্রযুক্তি ধীরে ধীরে টিভি প্রযুক্তির অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে, যার প্রায় সবই বাংলাদেশে অনুপস্থিত। তাই আইফোন বা আইপ্যাড ব্যবহার করতে পারলেও পরবর্তী প্রজন্মের এ টেলিভিশন বাংলাদেশে বসবাসকারী অ্যাপল ভক্তরা ব্যবহার করতে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হবেন- এমনটাই মনে হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৩
জেডএম