সামাজিক গণমাধ্যম থেকে অনলাইন সংবাদপত্রে ঝুঁকে পড়ছে ফেসবুক। এ খবরে পুরো বিশ্বের অনলাইন গণমাধ্যমে হইচই পড়ে গেছে।
ফলে বিশ্বের অনলাইন গণমাধ্যমের পথপ্রদর্শক বিবিসি আর সিএনএনয়ের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও নতুন করে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে আসলে ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া’ বলা হয়।
গবেষণায় উঠে এসেছে সাধারণ পাঠকেরা রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক খবরের প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। তবে বৈরী পরিস্থিতিতে অবশ্যই রাজনৈতিক আচরণ পাঠকের প্রধান সংবাদ হয়ে উঠে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ীভাবে সাধারণ পাঠকের শীর্ষ পছন্দ হয়ে থাকতে পারে না।
এদিকে ব্র্যান্ড, বিনোদন তারকা, ছবি, গান আর জীবন পরিবর্তনের তথ্যগুলোর প্রতি পাঠকের আগ্রহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনটাই বলছেন ফেসবুক নিউজ ফিডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা স্ক্রিস স্ট্রুহার।
একটি বাণিজ্য সফল অনলাইন সংবাদমাধ্যমের হোমপেজই হচ্ছে প্রধান আকর্ষণ। এখানে পাঠকের বিনোদন, অভিজ্ঞতা আর হালআমলের সংবাদই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। শুধু রাজনৈতিক আর নেতিবাচক খবর থেকে পাঠকেরা এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। জীবন বদলের খবরই এখানে সাধারণ পাঠকের কাছে মূখ্য এবং পাঠযোগ্য হয়ে উঠছে। এমনটাই বললেন ফেসবুকের নিউজ ফিডের প্রধান স্ক্রিস।
এ প্রতিযোগিতার বাজারে গুগল নিউজ আর ইয়াহু নিউজকেও চ্যালেঞ্জে ফেলবে ফেসবুকের নিউজ ফিড। কিন্তু এ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের শীর্ষ আইসিটি ব্র্যান্ডগুলো মাঠে নামছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে ভবিষ্যতের অনলাইন বিজ্ঞাপনই মূল কারণ। এমনটাই বললেন ইমার্কেটার গবেষকেরা।
সাধারণ মানুষের মধ্যে তথ্যভিত্তিক সংবাদের প্রাপ্তির প্রবণতা বাড়ছে। একে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো কাজে লাগাতে চাইছে। এ জন্যই দেশ-বিদেশের সংবাদ প্রচারণায় এখন বিজ্ঞাপনকে ভিন্ন মাত্রায় ইন্টারঅ্যাকটিভ করে উপস্থাপন করা হয়।
এখন সাধারণ পাঠকেরা সামাজিক মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যে ছবি, ভিডিওচিত্র আর সংবাদ বিনিময় করে। সঙ্গে তাৎক্ষণিক মন্তব্য জুড়ে দেওয়ার রীতি তো এখন দারুণ জনপ্রিয়।
পাঠকেরা এখন তাদের ভাবনা এবং অভিজ্ঞতাকে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ল্যাপটপ, স্মার্টফোন আর ট্যাবের বিবর্তনে এ চর্চা ক্রমেই পাঠকবান্ধব হয়ে উঠছে। আর তা বিজ্ঞাপনের বাজারেও প্রভাব ফেলছে।
এরই মধ্যে বিশ্বের বেশ কটি শীর্ষ প্রিন্ট সংবাদমাধ্যম নিজেদের গুটিয়ে এনে অনলাইনমুখী করে তুলছে। প্রিন্ট সংবাদমাধ্যমের প্রতিদিনের বাড়তি খরচের তুলনায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম অনেক বেশি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং জনপ্রিয়।
এ ছাড়াও বহনযোগ্য সংবাদমাধ্যম হিসেবে অনলাইন এখন তারুণ্যের সেরা পছন্দ। হাতের মুঠোতেই যখন ইচ্ছা তখনই খবর পড়ার সুবিধা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব।
ফেসবুকের অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ডিজাইন পরিচালক জুলি জুও জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে ঢুকলে নজরে আসে সংবাদ বিনিময়ের দারুণ সব খবর, ছবি আর ভিডিওচিত্রের লিঙ্ক। ফলে এখন শুধু সংবাদ তৈরি করলেই হয় না, তা প্রচারে আর শেয়ারেও নিতে হয় নানামুখী উদ্যোগ আর পরিকল্পনা।
এদিকে স্মার্টফোন আর ট্যাবের কারণে সংবাদের সংখ্যা আর চাহিদা দুটেই বেড়েছে। বিজ্ঞাপনের বাজারেও প্রিন্টকে কঠিন প্রতিযোগিতায় ফেলেছে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো। পণ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপনের অনলাইন প্রচারণা দেখলেই তা সুস্পষ্ট হবে।
বিজ্ঞাপনী বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইমার্কেটার সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে বিজ্ঞাপনের বাজারে ১৮.৪ ভাগ দখলে নিয়েছে মোবাইলভিত্তিক বিজ্ঞাপনী প্রচার। আর এককভাবে এ বাজারের ১৭ ভাগ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে গুগল।
যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইলভিত্তিক বিজ্ঞাপনী বাজার গত বছর ৪০০ কোটি ডলারের ঘরে ছিল। কিন্তু এ বছর তা ৭১৯ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ বাজার দ্বিগুণ হচ্ছে। ২০১১ সালে ফেসবুকভিত্তিক নিউজ ফিডের পরিমাণ ছিল ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।
এ পরিসংখ্যানে অনলাইন বিজ্ঞাপন, পাঠক সংখ্যা এবং সংবাদ বিনিময়ের প্রবণতা সবই বাড়ছে। আর এ ধারায় আরও বিনিয়োগ এবং বিজ্ঞাপনের বাজার তৈরি হচ্ছে বলেই ফেসবুক আগেভাগেই এ খাতে নাম নিজের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে।
ফলে ২০১৫ সাল নাগাদ একটি পরিপূর্ণ অনলাইন বিজ্ঞাপনের আবহ তৈরি হবে। এমনটাই বললেন অনলাইন বিশ্লেষকেরা। আর তাতে ফেসবুক প্রধান জুকারবার্গেরও কোনো দ্বিমত নেই। বরং অনলাইন সংবাদমাধ্যমের এ জয়যাত্রাকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করেছেন ফেসবুক প্রধান নির্বাহী।
বাংলাদেশ সময় ২১৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৩