ঢাকা: জুয়াড়িরা নতুন ফাঁদ পেতেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ধরতে। লোভনীয় সব অফার দিয়ে সর্বশান্ত করা হচ্ছে গ্রাহকদের।
প্লে ২ উইন (খেলো এবং জিতো) গ্যালাক্সি ৪ ফোন সেট। প্রতি সপ্তাহে ৫০টি সেট দেওয়া হচ্ছে। এ রকম এসএমএস হর- হামেশাই মিলছে সবার ফোনেই। একই দিনে একাধিক অফার পাচ্ছে কেউ কেউ। কেউ বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও অনেকে লোভে পড়ে পকেটের টাকা উজাড় করে দিচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে জুটছে শূন্য। যখন বুঝতে পারছেন তখন আর তার করার কিছুই থাকছে না।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন (০১৯১৪..৯৯৯০) বাংলানিউজকে জানান, এসব অফারের পুরোটাই ভূয়া। প্রথম দিকে সহজ প্রশ্ন দিয়ে এগিয়ে নিবে। শেষে সঠিক উত্তর দিলেও ভূল দেখিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করা হয় প্রতিযোগীকে।
জাকির হোসেন জানান, তার মোবাইল ফোনে এ ধরনের একটি অফার আসে প্লে ২ উইন, গ্যালাক্সি-৪ (*৪৪৬৬#থেকে)। তিনি মোহে পড়ে খেলা শুরু করেন। প্রতি এসএসএম’র জন্য তার ব্যালান্স কাঁটা হয় ২.৩০ টাকা করে।
একটি এসএমএস দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নতুন প্রশ্ন দেওয়া হয়। তিনি উত্তর দিতেই অভিনন্দন জানিয়ে আবার এসএমএস করা হয়। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১০ নম্বর ও ভূল উত্তরের জন্য ৫ নম্বর তার একাউন্টে জমা হতে থাকে। এ ভাবে ৩০০ নম্বর হলে তাকে এসএমএস দেওয়া হয় ৪’শ নম্বর হলে আপনি লটারির জন্য তালিকাভুক্ত হবেন।
তিনি আর এগিয়ে যেতে থাকেন। খুবই সাধারণ মানের প্রশ্ন করা হয় তাকে। বাংলাদেশের জাতীয় পাখির নাম, ফলের নাম, মাছের নাম, ফুলের নাম, রাজধানীর নাম এমন সব প্রশ্ন। এমসিকিউ(মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চন)পদ্ধতিতে প্রতি প্রশ্নের উত্তরের জন্য দু’টি করে অপশন। যার মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে। শুধু উত্তরের নম্বর এসএমএস করতে হবে।
স্কোর ৫’শ হলে তাকে এসএমএস দেওয়া হয়, সর্বোচ্চ উত্তর দাতাদের মধ্যে লটারি করা হবে। যত বেশি স্কোর তত বেশি অগ্রধিকার পাবেন। বেড়ে যায় মোহ। প্রশ্নোত্তরের ফাঁকে ফাঁকে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে এসএমএস দেওয়া হয় আপনি দেশ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন। আপনাকে অভিনন্দন। এভাবে ১ হাজার ১৫০ স্কোর হলে ঘটে বিপত্তি। তখন সঠিক উত্তর দিলেও দেখানো হয় আপনার উত্তরটি সঠিক হয়নি।
জাকির হোসেন দাবি করেন, ১ হাজার ১৫০ স্কোরে যখন তখন তার কাছে মেসেস আসে হয়ার ইজ সেন্টাল শহীদ মিনার নিয়ার দ্য ১। ডিএমসি ২। ডিইউ (ঢাবি) তিনি উত্তর দেন ১। তার উত্তরটি ভূল হয়েছে বলে ফিরতি এসএমএস দেওয়া হয়।
এরপরের প্রশ্ন ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় ১। সাভার অথবা ২। আশুলিয়া। এবার সাভার লিখলে উত্তর সঠিক হয় নি বলে জানানো হয়। পরের প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশ.. ১। নদীমাতৃক দেশ ২। পর্বতের দেশ। উত্তর দেন ১। নদীমাতৃক দেশ। এবারেও তার উত্তর ভূল বলা হয়।
এভাবে পরপর ৪টি সঠিক উত্তর তার ভূল বলা হলে জাকির হোসেনের নিজের মোহ কেটে যায়। বুঝতে পারেন গ্যালাক্সি-৪ এর নামে তার পকেট কাঁটা হচ্ছে। এটি আসলে ছলচাতুরি। ততক্ষণে তার পকেট থেকে চুষে নেওয়া হয়েছে ৩১০ টাকা। এরপরে গ্যালাক্সি-৪ ফোনের লোভ ঝেড়ে ফেলেন। আর খেলেন নি চাতুরির খেলা। তাকে আর প্রশ্নও দেওয়া হয় নি।
জাকির হোসেন জানান তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, এ ভাবে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জুয়াড়িরা। ফোন কোম্পানিগুলো এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা এসএমএস চার্জ পাচ্ছেন। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে জুয়াড়িরা কিনছে কোড। আর কোড নম্বর দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র
জাকির হোসেনের মতে সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে উঠতি বসয়ী ছেলে-মেয়েরা। যাদের কাছে গ্যালাক্সি-৪ অথবা আইফোন একটি স্বপ্নের মতো। তারা বাবার পকেট কেটে এসব মরণ নেশায় মেতে উঠছে। স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক সময়ে এই টাকা জোগাড় করতে গিযে বিপথে পা বাঁড়াচ্ছেন।
চট্রগ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম অভিন্ন অভিযোগ করেছেন। ৬’শ স্কোর হলে তার উত্তর ভূল হচ্ছে দেখানো হয়। তখন তিনি আর খেলেন নি। এরপর এ ধরনের অফার আরও অনেক পেয়েছেন। কিন্তু পা বাড়ান নি।
বেসরকারি ইউনির্ভাসিটি ইউআইটিএস’র ছাত্র মাসুম বাংলানিউজকে জানান, তিনি এ ভাবে ১৫ হাজার টাকা ফোন বিল খরচ করেছেন কয়েকদিনে। এরপরেও তাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন দেওয়া হয়। পরে নিজের ভূল বুঝতে পারেন। পরে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন অনেকেই এ রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।
জুয়াড়িদের পাশাপাশি ফোন কোম্পানি গুলোও এ ধরনের অফার দিচ্ছে। তবে কোম্পানিগুলোর অফারে কিছুটা ভিন্নতা। ফোন কোম্পানিগুলোর অফারে থাকছে ‘আপনি আগের মাসের চেযে বেশি ব্যবহার করলেই লটারির জন্য বিবেচিত হবেন। আবার অনেক সময় প্রশ্ন দেওয়াও হচ্ছে। ’
গ্রামীণ ফোনের কাস্টমার কেয়ার অফিসার সাইফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফোন কোম্পানি অফার দিলে তার নিচে ফোন কোম্পানির নাম থাকবে। অনেক সময় ইন্টারনেট অপশন থেকেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৩
ইএস/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর