ইন্টারনেটকে পূঁজি করে স্মার্টফোন এখন আধুনিক দুনিয়ার পুরোনো রীতিনীতিকে একেবারে বদলে দিচ্ছে। স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের সহজ, সরল এবং সাশ্রয়ী উপস্থাপনে দ্রুতই এটি ২ ট্রিলিয়ন ডলারের টেকসই বাজার হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
তবে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট প্রবৃদ্ধির এ উদীয়মান অর্থনৈতিক সুফলটা কিন্তু ঘরে তুলবে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো। এসবের নেপথ্যে যদিও গুগল আর ফেসবুককে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ আপাতত নেই। অর্থাৎ ২ ট্রিলিয়ন ডলারের এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ কিন্তু গুগল আর ফেসবুকের মতোই শক্তিশালী গণমাধ্যমের হাতেই থেকে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে উন্নত দেশে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট তাদের বাজার অবস্থান সুদৃঢ় আর টেকসই করেছে। এখন তাই পরের লক্ষ্য উন্নয়নশীল বাজার। এ বাজারের আধিপত্য এখন এশিয়ার নাগালে। এ মুহূর্তে টেলিকম বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর বাজার (ইমার্জিং মার্কেট) হচ্ছে এশিয়া।
শুরুতে স্মার্টফোনের যেমন দাম ছিল, তা এখন কমে আসতে শুরু করেছে। এমনকি আগের তুলনায় এখন ১০ ভাগ কমেও স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে এশিয়ার বাজারে। এ সত্যটা স্যামসাং আগেই অনুমান করেছিল। কিন্তু অ্যাপলের বোধদয় হতে একটু বেশিই সময় লেগেছে।
অর্থাৎ স্যামসাং বাজারে আগে থেকেই কমদামি স্মার্টফোনের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। অ্যাপলের পরের সংস্করণে অবশ্য কম দামের গুচ্ছ স্মার্টফোন থাকছে বলে বিশ্ব মিডিয়ার নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমগুলো তথ্য দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ২৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে স্মার্টফোনের বাজারে কাটতি বাড়তে শুরু করে। ওই বছরই ইন্টারনেট গ্রাহকের প্রবৃদ্ধির সমীকরণে উন্নত বিশ্বকে ছাড়িয়ে যায় উন্নয়নশীল বিশ্ব। এ সত্য স্বীকার করেছে খোদ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন (আইটিইউ)।
এ বিষয়ে মোবাইল বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ফ্লুরির পরিচালক মেরি ইলেন গরডন বলেন, ইন্টারনেট বিশ্বের আধুনিকতা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপ হয়ে এশিয়ার দিকে এগোচ্ছে। কাজেই ইন্টারনেভিত্তিক এবং স্মার্টফোন ঘরানার সব ধরনের বিনিয়োগই এখন এশিয়ামুখী।
এ ইন্টারনেট বাজারের অর্ধেকটা জুড়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে অ্যাপল আর স্যামসাং। বলতে গেলে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক লেনদেন আর ব্যবসা গতি-প্রকৃতিই বদলে দিয়েছে স্মার্টফোন। তবে ইন্টারনেট ছাড়া কোনোভাবেই স্মার্টফোনের এ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব ছিল না। এমনটাই মনে করছেন বাজার অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এদিকে হঠাৎ করেই স্মার্টফোন ঘরানার অপারেটিং সিস্টেম অ্যানড্রইড বাজারে আসায় মোবাইল ইন্টারনেট দুনিয়ার সব ধরনের সীমাবদ্ধতা দ্রুতই কেটে যায়। রাতারাতি ইন্টারনেট টেবিলের সীমাবদ্ধ ডেস্কটপ কম্পি্উটার ছেড়ে পাড়ি জমায় মোবাইল ফোনের খুদে দৃশ্যপটে।
এ নতুন অর্থনৈতিক বিশ্বে পণ্য হিসেবে একদিকে অ্যাপল-স্যামসাং আর অন্যদিকে ইন্টারনেট সেবায় গুগল-ফেসবুক একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। এক অর্থে বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণই প্রতিষ্ঠা করে। এ চারটি প্রতিষ্ঠান একে অন্যের নির্ভরতায় বিশ্বের কোটি কোটি গ্রাহককে অর্থনৈতিক মন্ত্রে আবদ্ধ করে ফেলে।
ফলে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এ চারটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিনের জীবনে তাদের অবিচ্ছেদ্য নিয়ন্ত্রণের বীজ বুনতে থাকে। আর শুধু এ চার প্রতিষ্ঠান মিলেই ইন্টারনেট-স্মার্টফোন শক্তিতে বিশ্বকে নতুন গতিপথে এগিয়ে নিতে থাকে।
এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি একশ জনে ৪৮ জন এবং ইউরোপে ৬৭ জন ইন্টারনেট গ্রাহক। এ তুলনায় এশিয়ায় এ সংখ্যা একশতে মাত্র ২৩ জন। অর্থাৎ এ মহাদেশে বড় ধরনের একটি উন্নয়নের সুযোগ এসেছে। এ হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো এশিয়াকে এখন বিনিয়োগের কেন্দ্র মনে করছেন।
ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এক্সপোনেনসিয়াল ইন্টার্যাকটিভের এশিয়া প্রধান স্কট লি বলেন, আগামী দু দশকের মধ্যেই এশিয়া বিশ্বের অনলাইন প্রবৃদ্ধির অন্যতম শীর্ষ মহাদেশ হয়ে উঠবে। এর পেছনে শক্তিশালী মাধ্যম হবে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটে গতিশীল বাজার।
সাশ্রয়ী ইন্টারনেট পণ্য, গুগল অ্যানড্রইড অপারেটিং আর গতি নিশ্চিত করতে পারলেই কোনো বাধাই থাকবে না এশিয়ার বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। এ সুবাদে সুফল ভোগ করবে এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশই।
আগামী ২০২০ সালের বিশ্বে তাই এশিয়াকেই ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক হিসেবে গণনা করা হচ্ছে। ইউরোপভিত্তিক ইফিউশন ইনভেস্টমেন্টের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক ফেডরিক ওঙ এভাবেই সংজ্ঞায়িত করেছেন এশিয়ার ইন্টারনেট ভবিষ্যৎ আর প্রবৃদ্ধিকে। কাজেই এ ধরনের পরিসংখ্যান বাংলাদেশের অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর জন্যও বেশ ইতিবাচক।
বাংলাদেশ সময় ২২৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৩