সিলেট: দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে এবার যে কোনো যানবাহনের অবস্থান মোবাইল ফোনে দেখা যাবে। নৌযানগুলো ডিভাইসটি ব্যবহার করে ছোঁয়া পাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির।
পরীক্ষামূলকভাবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি ও ছাত্রদের একটি বাসে এই ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগিয়ে সফলতা দেখা গেছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রথমবারের মত এই উদ্ভাবন বাংলাদেশের প্রযুক্তির জয়যাত্রায় আরেকটি মাইলফলক বলে মনে করছেন এর নির্মাতারা।
শাবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং রুহুল আমিন সজীবের নেতৃত্বে একদল তরুণ গবেষকের উদ্ভাবন এই ট্র্যাকিং ডিভাইস।
বিশ্বে জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস নতুন কোনো প্রযুক্তি না হলেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বাসে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের সদস্য পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল।
মূলত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন নৌযানগুলোয় দেশের আবহাওয়া, নৌযানের কাঠামো এবং ব্যবহার উপযোগিতা বিবেচনা করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেড ট্র্যাকিং ডিভাইস বানানোর উদ্যোগ নেয়।
গবেষক দলের নিরলস পরিশ্রম শেষে পুরো প্রজেক্টটি সফল হয়। ছোট-বড় যে কোনো নৌযান থেকে শুরু করে বাস, ট্রাকসহ প্রায় সব যানবাহনে খুব সহজেই এটি ব্যবহার করা যায়। ভবিষ্যতে ট্রেনেও এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
গবেষক দলের সদস্যরা জানান, প্রতি বছর ট্র্যাকিং ডিভাইস বিদেশ থেকে আমদানি করতে দেশের প্রচুর টাকা খরচ হয়। এছাড়া প্রতি মাসেও গ্রাহকদের মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু দেশে তৈরি এই ডিভাইসগুলো খুব কম খরচে সার্ভারে তথ্য আপলোড করতে পারে।
এর কার্যপদ্ধতি নিয়ে তারা জানান, ডিভাইসের জিপিএস মডিউল জিপিএস সিগন্যাল রিসিভ করে জিপিআরএসের মাধ্যমে সার্ভারে আপলোড করে। সার্ভার কো-অর্ডিনেটগুলো অটোমেটিক ম্যাপে প্লট করে সাধারণ মানুষের বোঝার উপযোগী করে তোলে। এর রক্ষণাবেক্ষণ খুব সহজ এবং কম খরচের।
ডিভাইসগুলোর প্রফেশনাল সাপোর্ট দিয়েছে সিলেটের অইশি ইলেকট্রনিক্স।
বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং যানবাহনের অবস্থা বিবেচনা করে এটি ডেভেলপ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করলে যা সম্ভব হত না বলে জানান তারা। দেশের বিভিন্ন নৌযানে ডিভাইসগুলো পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলাফল খুবই সন্তোষজনক। ।
এ ব্যাপারে নাবিল বলেন, “বিদেশ থেকে যেসব ডিভাইস আনা হয় সেগুলোকে এডিটিং করা যায় না। তাদের মাসিক চার্জ দিতে হয়। কিন্তু আমাদের ডিভাইসগুলো যেহেতু আমরা ডিজাইন করেছি, তাই আমাদের বিদেশি কোম্পানির উপর নির্ভর করতে হবে না। ”
তিনি জানান, এই ডিভাইসের ফলে শাবির ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকেরা এখন থেকে মোবাইলের মাধ্যমে খুব সহজেই তাদের বাসের অবস্থান জানতে পারবেন। ফলে বাসের জন্য অযথা অপেক্ষা করে সময় নষ্ট হবে না।
বাংলানিউজকে নাবিল বলেন, ‘‘আমাদের পরিকল্পনা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বাসে ধীরে ধীরে ডিভাইস লাগানো। একটি সহজ ইন্টারফেস তৈরি করা হবে যেন ফোনের ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই বাসের লোকেশন জানা যায়। ”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগ এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তরুণ গবেষকরা এ ধরনের আরো অনেক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৩
এসএ/ সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর, এসএস