ঢাকা: ১২ থেকে ১৪ বছর। বর্তমান প্রজন্মের এই বয়সী শিশু কিশোদের মোবাইলে গেমস খেলতে পারা, কম্পিউটার ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারাটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
কিন্তু এই বয়সে আইফোন, আইপড কিংবা যেকোনো ধরনের স্মার্টফোনের জন্য একেবারে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারার ঘটনা কি বিস্ময়কর নয়? ঠিক এমন বিস্ময়করভাবেই স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলমেন্ট প্রতিষ্ঠান জিও ডাইমেনশনস পরিচালনা করছে ভারতের চেন্নাইয়ের দুই ভাই ১৪ বছর বয়সী শ্রাবণ কুমারন ও ১২ বছর বয়সী সঞ্জয় কুমারন। দুই বছর আগে (২০১১ সালে) নিজেদের বাড়িতেই এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করে দুই সহোদর।
সম্প্রতি জার্মানিভিত্তিক বহুজাতিক সফটওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘এসএপি এজি’র উদ্যোগে বেঙ্গালোরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ দর্শকের সামনে এই সাফল্য নিয়ে বক্তব্য দেয় তারা।
এতো অল্প বয়সে বহুমাত্রিক ধারণা ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সঞ্জয় বলে, যথার্থ ধারণা, কঠিন আত্মবিশ্বাস এবং অর্থ যোগানের সঠিক পরিকল্পনা থাকলে যে কেউই সাফল্য লাভ করতে পারে।
সঞ্জয় জানায়, গত দু’বছরে তারা ১১টি অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করেছে। এগুলোর সবগুলোই অ্যাপল আপ্লিকেশন স্টোর ও গুগল’স অ্যানড্রয়েড প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।
শ্রাবণ জানায়, দুই কনিষ্ঠ প্রোগ্রামারের নির্মিত অ্যাপ্লিকেশনগুলো ৩৫ হাজারেরও বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে। তাদের প্রথম অ্যাপ্লিকেশন ছিল অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের ‘ক্যাচ মি কপ’। এই অ্যাপ্লিকেশনটি গত বছর বাজারে ছাড়ার পরপরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
চেন্নাই বায়েল’স বিলাবং ইন্টারন্যাশনাল হাই স্কুলের যথাক্রমে নবম ও সপ্তম শ্রেণী শিক্ষার্থী শ্রাবণ ও সঞ্জয় জানায়, একবার সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম তাদের স্কুলে গিয়ে ‘চোর-পুলিশ খেলা’ পছন্দের কথা জানিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তারা এই গেমস অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করার অনুপ্রেরণা পায়।
অবশ্য, যাত্রার দুই বছর পার হয়ে গেলেও ১৮ বছর পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আইনত জিও ডাইমেনশনস’র নিবন্ধন নিজেদের নামে করতে পারছে না শ্রাবণ ও সঞ্জয়।
নিবন্ধন নামে কী আসে যায়! এখন তাদের চেন্নাইয়ের বাড়ি অ্যাপল ম্যাকস, আইপডস ও স্যামসাং গ্যালাক্সি নোটসে ভর্তি।
ভ্রাতৃদ্বয় জানায়, স্কুলের পক্ষ থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ শেষ করে তারা এই রকম অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণে কাজ করে। সম্প্রতি তারা ‘এক্সট্রিম ইমপসিবল ৫ বা ইআই৫’ নামে আরেকটি গেমস অ্যাপ্লিকেশনের যাত্রা করেছে।
এছাড়া, ‘ক্যাচ মি কপ’ অ্যাপ্লিকেশনটি বাজারে ছাড়ার আগে অন্তত দেড়শ’ টেস্ট অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করেছে বলে জানায় কুমারন ভ্রাতৃদ্বয়।
তারা আরও জানায়, ‘ক্যাচ মি কপ’ অ্যাপ্লিকেশনটি অ্যাপল কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনের এক সপ্তাহের মাথায়ই বাজারে ছাড়া হয়, এটা অনেক আনন্দের ব্যাপার ছিল। এছাড়া ‘অ্যালফাবেনট বোর্ড’ নামে আরেকটি অ্যাপ্লিকেশন অ্যাপ স্টোরে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে বলেও জানায় তারা।
এসব অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণে তারা অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস থেকে উৎসাহ পেয়েছে বলে জানায় শ্রাবণ ও সঞ্জয়। এছাড়া, এসব সৃজনশীল কাজে উৎসাহ যোগানোয় অ্যান্টি-ভাইরাস ও সিকিউরিটি সল্যুশনস কোম্পানি সিম্যান্টেকের ডিরেক্টর এবং তাদের বাবা কুমারন সুরেন্দ্রনকেও ধন্যবাদ জানায় কুমারন ভাতৃদ্বয়।
তবে অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণের সুবাদে এতোবড় তারকা হয়ে যাওয়ার পরও মাটিতেই পা রাখছে শ্রাবণ ও সঞ্জয়।
তাদের মা সাবেক সাংবাদিক জ্যাতি লক্ষ্মী বলেন, অনেক শিক্ষক তাদের বলেছিলেন যে, তোমরা স্কুলে না এসে বাড়িতেই অনেক সৃজনশীল কাজ করতে পারো। কিন্তু তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে নিয়মিত শ্রেণীকক্ষের পাঠ গ্রহণও করবে।
উল্লেখ্য, যথাক্রমে পঞ্চম ও তৃতীয় গ্রেডে পড়ার সময়ই শ্রাবণ ও সঞ্জয় প্রোগামিংয়ের ভাষা বিষয়ক কিউবেসিক অ্যাপ্লিকেশনটি রপ্ত করে।
বেঙ্গালোরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুধীজনদের পক্ষ থেকে শুভকামনা প্রার্থনা করে কুমারন ভ্রাতৃদ্বয় জানায়, কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভারতীয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারী তাদের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করবে বলে তারা আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৩
এইচএ/বিএসকে