ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

স্মার্টফোনে ঝুঁকিতে শিশুরা!

আইসিটি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪
স্মার্টফোনে ঝুঁকিতে শিশুরা!

ঢাকা: প্রাচ্যে না হলেও পাশ্চাত্যে শিশুদের হাতে হাতে স্মার্টফোন কিংবা ট্যাব বা ট্যাবলেট। আর এসব স্মার্টফোনের বদৌলতে আজ কথায় নয়, বাস্তবেই পুরো বিশ্ব হাতের মুঠোয়।

স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেটে ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের সুযোগ থাকায় অনেক সময়ই তা শিশুদের বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে তাদের ভবিষ্যত।  

পাশাপাশি এসব ডিভাইসে ভিডিও গেমস খেলার মাধ্যমে শিশুদের নৈতিক অবক্ষয়ও ঘটছে।

সম্প্রতি এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জরিপে দেখা যায়, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহারের ফলে সন্তানরা যে নানা ধরণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে সে সম্পর্কে অনেক বাবা-মা’ই কোনো ধারণা রাখেন না।

জরিপে বলা হয়,  স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহারকারী প্রতি পাঁচ শিশুর একজন তাদের ব্যবহার করা ডিভাইসে অপ্রত্যাশিত এমন কিছু দেখে ফেলে যা তাদের বাবা-মার ধারণার বাইরে।  

অপর এক জরিপে দেখা যায়, সন্তান ইন্টারনেটে কি করে তা মাত্র ২০ শতাংশের কিছু বেশি বাবা-মা খোঁজ রাখেন।

স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারে সর্তক থাকার জন্য সন্তানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯০ ভাগ বাবা-মা জানান। তবে সন্তানরা বিষয়টি মানছে কিনা তা খতিয়ে দেখেন  না বেশিরভাগ বাবা-মা।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিল্ট-ইন সিকিউরিটি, সেফটি, প্রাইভেসি এবং সার্চ ইঞ্জিন ফিল্টার না রাখলে অনলাইন ব্যবহারের ফলে শিশুরা এমন কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে, যা তাদের জন্য যথাযথ নয়।

জরিপে দেখা যায়, ১৩-১৪ বছর বয়সী শিশুরা ৮-১২ বছর বয়সী শিশুদের চেয়ে বেশি উৎসুক থাকায় অনেক অপ্রয়োজনীয় সাইটে প্রবেশ করে। অন্যদিকে দেখা যায়, অভিভাবকরা কম বয়সী শিশুদের চেয়ে বেশি বয়সী শিশুদের দিকে কম নজর রাখেন।

ক্যাসপারাস্কি ল্যাবের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা গবেষক ডেভিড ইম বলেন, ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি বাবা-মা যে পরিমাণ সর্তক থাকেন স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের বিষয়ে তার চেয়ে সর্তকতা অনেক কম।

শিশুরা মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে একই রমক ঝুঁকির মধ্যে থাকে বলেও জানান তিনি।

ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মতো স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই বলে প্রচলিত একটি ভ্রান্ত ধারণার কথা উল্লেখ করেন ইম।

তবে সন্তান ইন্টারনেটের মাধ্যমে কি করছে সে বিষয়ে অধিকাংশ বাবা-মা কোনো ধারণা না রাখার বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সময় পাল্টেছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ শতাংশের বেশি বাবা-মা নিজেদের ট্যাবলেটে নিরাপত্তামূলক পাসকোড ব্যবহারের কথা বলেন। তবে শুধুমাত্র ৪০ শতাংশ বাবা-মা সন্তানের স্মার্টফোনে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

ক্যাসপারাস্কি ল্যাব পরিচালিত এক গবেষণার দেখা যায়, সন্তানদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে ১৮ শতাংশ বাবা-মা তাদের ফোন বা ট্যাবলেটে সংরক্ষিত টাকার সঠিক হিসেব পান না।

এদিকে, ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১০৯ জন ছেলে-মেয়ের ওপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় এসব শিশুদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা কোন ধরনের গেমস খেলে, কতক্ষণ খেলে।

দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ শিশুই ভিডিও গেমস খেলে। তাদের অধিকাংশই সহিংস ভিডিও গেমস খেলে মজা পায়। এসব সহিংস গেমসে হয়ত কাউকে মেরে ফেলা হচ্ছে, পঙ্গু বা মস্তিষ্কচ্ছেদ করা হচ্ছে কিংবা শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত চার স্তরে মানুষের মধ্যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সকে আবেগের বহিঃপ্রকাশের তৃতীয় স্তর হিসেবে উল্লেখ করেছেন গবেষকেরা।

কিন্তু সহিংস ভিডিও গেমসে আশক্ত শিশুদের এ আবেগ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। গেমস খেলে না এমন শিশুদের চেয়ে অনেক দেরিতে তাদের আবেগ বিকাশ ঘটে।

গবেষণায় দেখা যায়, সহিংস ভিডিও গেমসে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় শিশুরা অন্যকে বিশ্বাস করতে চায়না এবং গেমস বিশ্বের আলোকে বাস্তব বিশ্বকে মূল্যায়ন করে। বাস্তব জগতের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।