ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

হোয়াটস্অ্যাপ কিনলো ফেসবুক, অপেক্ষা নতুন বিস্ময়ের!

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪
হোয়াটস্অ্যাপ কিনলো ফেসবুক, অপেক্ষা নতুন বিস্ময়ের!

ঢাকা: প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সংস্থা হোয়াটস্অ্যাপ কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিলো ফেসবুক।

বুধবার গভীর রাতের এই ঘোষণা চমকে দিয়েছে গোটা তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়াকে।



জানা গেছে, চুক্তির ব্যাপারে উভয় সংস্থার কর্ণধারদের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ চলছিল বছর দুয়েক ধরেই। কখনও কাছের কফিশপে, তো কখনও বাড়ির নৈশভোজে। শেষমেশ পাকা কথা ‘ভ্যালেনটাইন্স ডে’-র রাতে।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবসায় নিজেদের পয়লা নম্বর জায়গা মজবুত করতে ফেসবুক যে বিভিন্ন অ্যাপ (মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন) কেনার দিকে নজর দিচ্ছে, তা নতুন নয়। কিন্তু মাত্রই ২০০৯ সালে জন্ম নেওয়া হোয়াটস্অ্যাপের জন্য তারা এত বিপুল অর্থ (১৯শ’ কোটি ডলার) খরচ করতে রাজি, এ ব্যাপারটিই আশ্চর্য করছে সবাইকে।

হোয়াটস্অ্যাপ গত দু’বছরে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তির পীঠস্থান সিলিকন ভ্যালিকেও তাক লাগিয়ে উঠে এসেছে উল্কার গতিতে। প্রতিমাসে এর ব্যবহারকারী এখন ৪৫ কোটি। প্রতি দিন আবার তা বাড়ছে দশ লক্ষ করে।

যে কোনও স্মার্টফোন থেকে প্রায় নিরখরচায় বার্তা (মেসেজ), ছবি, কিংবা ভিডিও পাঠানোর সুবিধা দিয়ে ‘মেসেজিং’ পরিষেবায় কার্যত বিপ্লব এনেছে হোয়াটস্অ্যাপ। টপকে গিয়েছে টুইটারকে।

তবে এত বেশি দামে ফেসবুকের হোয়াটস্অ্যাপ কিনে নেওয়ার পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা কম হচ্ছে না।

এক পক্ষ বলছেন, এ রকম দ্রুত বর্ধণশীল সংস্থার জন্য ফেসবুক যে বড় অঙ্ক খরচ করবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু সমালোচকদের মতে সংস্থা সম্ভাবনাময় হলেও দামটা একটু বাড়াবাড়ি রকমই বেশি।

তবে নিজের কোম্পানির এই আকাশছোঁয়া দরকে পাত্তা দেওয়ার কোন লক্ষণই দেখাননি জ্যান কউম যিনি কি না হোয়াটস্অ্যাপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

‍কোম্পানির ৪৫ শতাংশ অংশীদারি পকেটে থাকায় এখন তিনি ফেসবুক চুক্তির বদৌলতে রাতারাতি ৬৮০ কোটি ডলারের মালিক। এছাড়া ফেসবুকের পরিচালনা পর্ষদেও যোগ দিচ্ছেন তিনি।

অথচ এত বড় চুক্তির কাগজ তিনি সই করেন দাঁড়িয়ে থেকে দরজায় ঠেসে ধরে। সেই ছবি আবার নিজেই পোস্ট করেছেন টুইটারে।

অবশ্য কউমকে যারা চেনেন, তারা জানেন, ১৬ বছর বয়সে ইউক্রেন থেকে মার্কিন মুলুকে আসা এই মুখচোরা ভদ্রলোক আদপে এমনই।

ইউক্রেনে বড় হওয়া এই প্রযুক্তিবিদ ছেলেবেলায় দেখেছিলেন অসম্ভব দারিদ্র্যের মুখ। সিলিকন ভ্যালির ‘দস্তুর মেনে’ তিনিও কলেজের গণ্ডি পেরোননি। তবে ইয়াহুতে বছর কয়েক চাকরি করেছেন। কিন্তু ইচ্ছে ছিলে এমন কিছু করার যার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা যাবে সারাক্ষণ।

নানা প্রলোভনেও এখনও হোয়াটস্অ্যাপে বিজ্ঞাপন আনেননি। বরাবর এড়িয়ে চলেছেন সংবাদমাধ্যমকে। এমনকি, অফিসে নিজের সংস্থার লোগো লাগানোতেও তার আপত্তি।

কম আকর্ষণীয় নয় হোয়াটস্অ্যাপ তৈরিতে কউমের সঙ্গী ব্রায়ান অ্যাক্টনের জীবনও। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থীর কউমের সঙ্গে আলাপ ইয়াহুতে। সব থেকে মজার কথা, এক সময়ে আবেদন করে এই ফেসবুকেই চাকরি পাননি তিনি। সেই ব্যর্থতার কথা আবার ফলাও করে লিখেছিলেন টুইটারে।

এরপরই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেন, “এটা হল না। জীবনে এ বার নতুন কিছুর খোঁজ করি। ”  নতুন কিছুর খোঁজ যে এত জোরালো হবে তা কি ভাবতে পেরেছিলেন তিনি নিজে?

হোয়াটস্অ্যাপের ২০% শেয়ার এখন তার হাতে। ফলে এক সময়ে খালি হাতে ফেরানো অ্যাক্টনকেই এবার ৩শ’ কোটি ডলার দিতে চলেছে ফেসবুক।

বিশ্বের বৃহত্তম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সংস্থা ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গের কথায়, “হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যেই ১শ’ কোটি পেরিয়ে যাবে। এর সঙ্গে আরও গভীরভাবে একাত্মবোধ করবে নতুন প্রজন্ম। সেই কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। ” তা ছাড়া, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের পাশাপাশি বর্তমান প্রজন্ম যেভাবে ব্যক্তিগত বার্তা আদানপ্রদানের দিকে ঝুঁকছে, সে কথা মাথায় রেখে ওই বাজারের সব থেকে সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানকে ফেলে রাখার ঝুঁকি নেননি তিনি।

জানিয়েছেন, কিনে নেওয়ার পরেও নিজেদের আলাদা পরিচিতি বজায় রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাবে হোয়াটস্অ্যাপ।

তবে হোয়াটস্অ্যাপের জন্য ১৯শ’ কোটি ডলার দাম একটু বেশি বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের প্রশ্ন, মাত্র পঞ্চান্ন জন কর্মীর সংস্থাটির উত্থানে কি একটু বেশিই ভয় পেয়ে গেল ফেসবুক? আস্থা রাখতে পারল না নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতায়? নইলে আজ পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ার সব থেকে বেশি দামে প্রায় আনকোরা একটি সংস্থাকে দিতে তারা রাজি হল কেন? অথচ এর থেকে অনেক কম দামে মোটোরোলার মতো বহুল পরিচিত সংস্থাকে কিনেছিল গুগল। আর মাইক্রোসফট কিনেছিল স্কাইপেকে।

সমালোচকরা আরও বলছেন, বিজ্ঞাপন থেকে এখনও কোনও আয় করেনি হোয়াটস্অ্যাপ। রোজগার বলতে এক বছর ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীদের দেওয়া ১ ডলারেরও কম ‘সাবস্ক্রিপশন ফি। ’

তাদের প্রশ্ন, জনপ্রিয়তা এক কথা, কিন্তু ব্যবসায়িকভাবে এই চুক্তি ফেসবুকের পক্ষে আদৌ লাভজনক হবে তো?

তবে আশাবাদীরা মনে করছেন, প্রায় ধূমকেতুর মতো উঠে এসে তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ার নকশাই বদলে দিয়েছে ফেসবুক নিজে। কত দ্রুত আকর্ষণীয় কোনও নতুন প্রযুক্তিকে আঁকড়ে ধরে নতুন প্রজন্ম, তার প্রমাণ তারা নিজেরাই। তাদের মতে, এই কারণেই কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি তারা। শুরুতেই ঝুলিতে পুরতে চেয়েছে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের। যার উদাহরণ একশো কোটি ডলারে ছবি আদানপ্রদানের অ্যাপ ‘ইনস্টাগ্রাম’ কিনে ফেলা। এবং সফল না হলেও আর এক মেসেজ সংস্থা ‘স্ন্যাপচ্যাট’কে তিনশো কোটি ডলারে কেনার প্রস্তাব দেওয়া। ‍

হোয়াটস্অ্যাপের দখল নিতে চুক্তির অঙ্ক যদি চমকপ্রদ হয়, তবে তার পিছনের ঘটনাও রূপকথা। ২০১২ থেকেই হোয়াটস্অ্যাপের দিকে হাত বাড়াতে থাকেন জুকারবার্গ। বারবার দেখা করেন কউমের সঙ্গে।

৯ ফেব্রুয়ারি খাওয়া আর ঘণ্টা দেড়েক হাঁটার শেষে কেনার প্রথম প্রস্তাব।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইন্স ডে-র রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ‘রোমান্টিক ডিনার’ আর সারা হল না জুকেরবার্গের। হঠাৎই বাড়িতে হাজির কউম। বাকিটা ইতিহাস।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।