নিউইয়র্ক: বিশ্বের প্রায় ৫ কোটি কম্পিউটারে হ্যাকারদের হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এপ্রিল মাসের কোনো মাইক্রোসফটের মেয়াদোত্তীর্ণ সফটওয়্যার ‘উইন্ডোজ এক্সপি’র সব ধরনের কারিগরী সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মাইক্রোসফটের এমন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছেন হ্যাকাররা। মাইক্রোসফটের পুরোনো হয়ে যাওয়া ‘উইন্ডোজ এক্সপি’র লাইফ সাপোর্ট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে হ্যাকাররা লঙ্কাকাণ্ড ঘটাতে পারে। মাইক্রোসফটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ৮ এপ্রিলকে ধরা হচ্ছে।
সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ‘ক্রাউড স্ট্রাইক’-এর ইন্টেলিজেন্সের প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম মায়ার্স যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকারে বলেছন, ‘১২ বছরের পুরোনো অপারেটিং সিস্টেম ‘উইন্ডোজ এক্সপি’ ডেড লাইনের পরে ব্যবহার করা হবে ‘স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ’। আর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার কেউই নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবেনা।
তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আমি ৮ এপ্রিলের পরে উইন্ডোজ এক্সপি চালাবো না। ’
মাইক্রোসফট ৬ বছর আগেই ঘোষণা দিয়েছিল তারা মেয়াদ উত্তীর্ণ সফটওয়্যারে কোনো ধরনের কারিগরি সহায়তা দেবে না, যদিও সারা বিশ্বের মোট কম্পিউটারের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি কম্পিউটার এখনো ‘উইন্ডোজ এক্সপি’সফটওয়্যারে চলছে।
মাইক্রোসফটের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ঘড়ির কাটা আগামী এপ্রিল মাসের নির্দেশনায় চলছে যেখানে কাস্টমারদের জন্য ‘নোট’ লেখা রয়েছে, ডেড লাইনের পরে এমনকি কোনো ধরনের অ্যান্টি ভাইরাসও ‘উইন্ডোজ এক্সপি’ সফটওয়ারে চলা পিসিকে রক্ষা করতে পারবে না । বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়ার, ক্ষতিকারক ভাইরাস, স্পাইওয়্যার এবং অন্যান্য নোংরা সফটওয়্যারগুলো নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে যেখানে ব্যবসায়িক পরিসংখ্যানও তথ্যাবলী ও চুরিসহ নষ্ট করে ফেলতে পারে।
এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফটের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভোক্তাদের অবশ্যই নিজেদের কম্পিউটারে উইন্ডোজ ৭ অথবা উইন্ডোজ ৮ এ আপগ্রেড করতে হবে। এতে খরচ পড়বে ১২০ ডলার। আর এ কাজটি করলে মাইক্রোসফট আগামী ১৪ জুলাই ২০১৫ পর্যন্ত উইন্ডোজ এক্সপিকে অ্যান্টি ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার দিয়ে সহায়তা করা হবে।
এছাড়া যদিও অনেকে সিষ্টেম পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন তবুও পুরোনো এই অপারেটিং সিষ্টেম ব্যবহারের কারনে বহু প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হবে বলে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, সামরিক ও কূটনৈতিক বিভিন্ন গোপন নথিপত্রের ক্ষেত্রে এখনো মার্কিন সরকারের লাখ লাখ সরকারি কম্পিউটার কাজ করছে। বিদ্যৎ সেবার কাজেও কম্পিউটারগুলোর বৃহদাংশে পুরোনো এই সিস্টেমের পরিবর্তন প্রয়োজন । তবে কতদিন এ কাজ হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউই।
তবে এটিএম ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড টেনটে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যেই যুক্তরাস্ট্রের ৪ লাখ ২৫ হাজার ক্যাশ মেশিনকে উইন্ডোজ এক্সপি থেকে আপগ্রেড করা হবে। তিনি বলেন, ২০ ডলারের নোট বের করার সময় তাকে ১ ডলার ভাবতে এটিএম মেশিনকে হ্যকাররা বোকা বানিয়েছে এমন নজিরও পাওয়া গেছে।
তবে তিনি এও বলেন, ৮ এপ্রিলের তাৎক্ষণিক পরপরই এমন কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই, তবে সময়ের জন্য অপেক্ষা করলে তা বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য।
গত ২০০১ সালে উইন্ডোজ এক্সপি বাজারে ছাড়ে মাইক্রোসফট। তখনই এই প্রোগ্রামটিকে সবচেয়ে সহজ ব্যবহার উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞরা। পরবর্তীতে ভিস্টা’র নানাবিধ সমস্যা দেখা দিলে আরো বেশি জনপ্রিয় ও ব্যবহারী হয়ে উঠে এক্সপি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪