ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানালেন, তিনি একটি দুই সিমের সস্তা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তার সরকার যে পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিকে এখন মানুষের দোরগোড়ায়, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি ডিজিটাল ভাবনায় ও তার পথে দেশের অগ্রসরতা এবং তার সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
বক্তৃতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাল পথে এগিয়ে নেওয়া সহজ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের জনগোষ্ঠী আজ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি সেবা নিতে পারছে। ফলে দেশ আজ ডিজিটাল ডিভাইড মুক্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তথ্য দেন, দেশে সবগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরের ছাড়া সব মিলিয়ে ১১ কোটি সিম চালু রয়েছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের ৮০ থেকে ৮৫ লাখ মানুষ প্রবাসে রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাকি ১৫ কোটির কিছু বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে ১১ কোটি সিম চালু থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোন সেটের দাম কমে যাওয়া ও কানেকশন সস্তা এবং সর্বোপরি কলরেট কম হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সস্তা মোবাইল ফোন সেটে দুটি সিমও ব্যবহার করা যায়, আমার নিজেরও এমন একটি ফোন আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় ১৯৯১-৯৫ সালের বিএনপি সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেন, সেই সরকারের একজন মন্ত্রীর হাতে তখন টেলিফোনের মনোপলি ব্যবসা ছিলো। তখন একেকটি মোবাইল ফোন সেট ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম ছিলো, প্রতিটি কল রেট ছিলো ১০ টাকা। ফোন করলেও ১০ টাকা, রিসিভ করলেও ১০ টাকা করে কেটে নেওয়া হতো।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এই মনোপলি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। দেশে অন্যান্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়, ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকে এবং সস্তা হতে থাকে মোবাইল সেট ও কল রেট। এখন ২ লাখ টাকার ফোন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে। কল চার্জ মিনিটে ১৫ টাকা থেকে এখন ১ টাকারও কম। আর এখন কল করলেই কেবল চার্জ কাটা হয়, কল ধরার জন্য কোনো চার্জ দিতে হয় না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তৃতায় ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করার ঘটনা তুলে ধরে তার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন অযুহাত তোলা হয়েছিলো এর সঙ্গে যুক্ত হলে নাকি সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। আর সে কারণেই দেশ বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। প্রধানমন্ত্রী জানান, সেসময় মাত্র ৬০০০ ডলার বাৎসরিক ভাড়া দিয়ে বিনামূল্যে সে সংযোগ পাওয়া যেতো। কিন্তু বিএনপি সরকারের অদূরদর্শীতায় তা সম্ভব হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতায় আরও জানান, বিএনপি সরকারের আরেকটি খামখেয়ালি ও সস্তা রাজনীতিকরণের কারণে নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানি থেকে তার সরকার কম্পিউটার আমদানির উদ্যোগ নিলে তা বিএনপি সরকার এসে বাতিল করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী জানান, যে কোম্পানিটি থেকে ওই কম্পিউটার আনা হচ্ছিলো তার নাম টিউলিপ এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ, স্রেফ সে কারণেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওই কম্পিউটারের অর্ডার বাতিল করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আর এ জন্য দেশকে নেদারল্যান্ডের ওই কোম্পানিকে ৩২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে।
প্রধানমন্ত্রী এসময় আরও জানান, দেশের প্রতিটি মানুষকে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে তার সরকার ২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন করে এর আওতায় বিটিআরসি গঠন করে। এর মাধ্যমে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রামের জনগোষ্ঠী মোবাইল ফোনেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিতে পারছে। যার ফলে আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল ডিভাইড মুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যান্ডউইথড এর দাম কমেছে।
দেশজুড়ে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। এর ফলে উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথড পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গ্রামের জনগণ ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা গ্রহণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইল টেলিফোনে ৩জি প্রযুক্তি চালু হয়েছে। ৪জি প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের ক্ষমতায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করা তার সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলো এ লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও এখন বিভিন্ন সরকারি ফরম ও সেবা, পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত তথ্য, কর্মসংস্থানের আবেদন, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদপত্র, মোবাইল ব্যাংকিং, জীবন বীমা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন ধরণের সেবা পাচ্ছেন।
বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফ্টওয়্যার ও আইটি সেবা রপ্তানি করে ২০২১ সালের মধ্যে সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রপ্তানি বর্তমানের ১০০ মিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার ও বেসরকারি খাতকে সাথে নিয়ে কাজ করছে সরকার।
দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর প্রবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোও গড়ে তোলা হচ্ছে।
পরে একটি ডিজিটাল স্বাক্ষর প্রদানের মধ্য দিয়ে চারদিন ব্যাপী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলা ও বিভাগে হাইটেক পার্ক হবে
বাংলাদেশ সময় ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৪