ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

৫০ কোটি ই-মেইল পাসওয়ার্ড মাফিয়ার কব্জায়

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৪
৫০ কোটি ই-মেইল পাসওয়ার্ড মাফিয়ার কব্জায়

ঢাকা: মানবপাচার থেকে পতিতাবৃত্তির চক্র, অস্ত্র থেকে মাদক পাচার, অবৈধ সব বাণিজ্যের কর্তৃত্ব কব্জা করে এবার মাফিয়াদের কালোহাত সম্প্রসারিত হয়েছে ইন্টারনেট দুনিয়ার দিকে। ক্রমেই লাভজনক হয়ে ওঠা ই-কমার্স এখন তাদের পরবর্তী টার্গেট।



বিশ্বের যত অপরাধী সংগঠন আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও সংগঠিত হলো রাশিয়ার অপরাধী চক্র। যারা ‘রুশ মাফিয়া’ হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর হেন কোনো কুকর্ম নেই যা তারা করতে পারে না।

এই রুশ মাফিয়াদের নিয়োগ করা হ্যাকাররা গত কয়েক বছরে ইন্টারনেট ঘেটে লাখ লাখ ওয়েবসাইট ঘেটে চুরি করেছে শত শত ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড প্রভৃতি।

ইতোমধ্যে তাদের কাছে জমা রয়েছে ৫০ কোটি ই-মেইলের পাসওয়ার্ড সহ ১২০ কোটি বিভিন্ন ধরনের তথ্য।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে হয়ে যাওয়া এক সাইবার নিরাপত্তা সম্মেলনে এমন ভয়াবহ তথ্যই তুলে ধরলো যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হোল্ড সিকিউরিটি।

সেদিন খুব দূরে নয় যেদিন কাগজের মুদ্রার বদলে বিশ্বের সব আর্থিক লেনদেন হবে ক্রেডিট-ডেবিট কার্ডে, মোদ্দা কথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আর এই সুযোগটিকে ক্ষেত্র বানিয়ে মাফিয়ারা তাদের জাল বিস্তার করছে ইন্টারনেটে।

প্রতিভাবান হ্যাকারদের ব্যবহার করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের শত শত কোটি ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জমা করে রাখছে নিজেদের তথ্য ভাণ্ডারে, সময় ও সুযোগ অনুযায়ী ব্যবহারের জন্য।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, যারা এসবের শিকার হচ্ছেন তারা নিজেরাও জানেন না তারা পরিণত হয়েছেন মাফিয়াদের টার্গেটে।

প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্য চুরি হয়েছে বলে জানান হোল্ড সিকিউরিটির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা অ্যালেক্স হোল্ডেন। জানা গেছে এক এডোবে সিস্টেম থেকেই চুরি হয়েছে এক কোটি রেকর্ড। পরে এসব তথ্য যাচাই করে হোল্ড সিকিউরিটির বক্তব্যের সত্যতা পায় নিউইয়র্ক টাইমস।

হ্যাকাররা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকেই টার্গেট করেনি। বিশ্বের সব প্রান্ত থেকেই তথ্য চুরি করেছে তারা।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ফরচুন ম্যাগাজিনের তালিকায় থাকা বিশ্বের সেরা ৫শ’ প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই রয়েছে বলে জানান অ্যালেক্স হোল্ডিং।

এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানই জানে না এরই মধ্যেই তাদের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে মাফিয়ারা।

মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত এসব হ্যাকার ‘অত্যন্ত ধুরন্ধর ও মেধাবী’ বলে উল্লেখ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। অনেক ক্ষেত্রেই হ্যাকারদের কাছে হেরে যেতে হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তাকর্মীদের।

জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসেও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টার্গেটের বিভিন্ন আউটলেট থেকে ৪ কোটি ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, ক্রেতাদের ঠিকানা ও ফোন নম্বর সহ অন্যান্য তথ্য চুরি করে হ্যাকাররা।
 
এছাড়া গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা জানান, কোর্ট ভেনচার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ২০ কোটি তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। যার মধ্যে আছে স্যোশাল সিকিউরিটি নাম্বার, ক্রেডিট কার্ড ডাটা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য।

এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ওয়েবসাইটগুলোর সুরক্ষার জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন।

এর সঙ্গে রুশ সরকারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে হোল্ডেন বলেন, রুশ সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কারণ রাশিয়ার অনেক ওয়েবসাইটেও হানা দিয়েছে হ্যাকাররা।

তবে তিনি বলেন, মানুষ একটু সচেতন হলে হ্যাকারদের পক্ষে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, হ্যাকারদের ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছেন সাইবার স্পেশালিস্টরা। এরই মধ্যেই আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিষয়টি অবগত করছেন তারা। তবে প্রত্যেক ওয়েবসাইটে পৌঁছানো তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। তাই তারা এমন একটি অনলাইন টুলস নির্মাণ করতে যাচ্ছেন যার সাহায্যে ব্যবহারকারীরা তাদের ওয়েবসাইট নিরাপদ কি না সে সেটা যাচাই করে দেখতে পারবেন।


জানা গেছে, রাশিয়ার মধ্য ও দক্ষিণের প্রত্যন্ত এলাকার ঠিকানা থেকে এসব হ্যাকিং করা হচ্ছে। আর সার্ভারগুলোর বেশিরভাগের ঠিকানা রাশিয়া। আর যেসব হ্যাকার এসব করছে তাদের বয়স ২০ বছর কিংবা তার থেকেও কম।

এসব হ্যাকার গ্রুপ অনেক সংগঠিতভাবে কাজ করে থাকে। এদের কেউ প্রোগ্রাম লেখে, কেউ তথ্য ‍চুরি করে। তবে এদের পেছনে রয়েছে রুশ মাফিয়ারা। তার অল্প টাকায় তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য কিনে নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিশ্বের প্রখ্যাত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান র‌্যান্ড কর্পোরেশনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক লিলিয়ান অ্যাবলোন বলেন, হ্যাকিংয়ে তাদের প্রতিভা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের প্রতিরক্ষার ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যায়। আমরা ক্রমাগতভাবেই তাদের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলছি।
 
সম্প্রতি লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক ব্ল্যাক হ্যাট সিকিউরিটি কনফারেন্স। সেখানেই প্রকাশ হয় এসব তথ্য।

প্রতি বছরই এই সম্মেলনে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান, বিশেষজ্ঞ এমনকি অনেক হ্যাকারও জড়ো হয়।

১৯৯৭ সালে স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও এখন হাজার হাজার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান এবং হ্যাকারের সম্মিলনে পরিণত হয়েছে এই সম্মেলন।

সম্মেলনে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা তাদের গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির নতুন নতুন সম্ভাবনার নানা দিক উন্মোচন করা হয় এখানে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।