ঢাকা: বাংলাভাষায় লিখিত সকল প্রকার কনটেন্ট ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে, খুঁজে পেতে এবং সম্পাদন করতে টিম ইঞ্জিন লিমিটেড নিয়ে এসেছে বাংলাভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনাইজার (ওসিআর) ‘পুঁথি’।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন পুরনো বই, নথি ডিজিটালাইজড করা যাবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করেন।
টিম ইঞ্জিন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিরা জুবেরী হিমিকা’র সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস’র (বেসিস) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাসেল টি. আহমদে, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তফা জব্বার প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের নতুন কোনো আবিষ্কার বাংলাভাষাতেই করা উচিত। কারণ আমরা বাংলাভাষাতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। এতে মানুষের পক্ষে বুঝতেও সহজ হয়।
মন্ত্রী বলেন, সভ্যতা তখনই উৎকর্ষতা পায় যখন সেখানে প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটে। ওসিআর পুঁথি বাংলা ভাষার মানুষের জন্য নতুন দিগন্ত সূচনা করবে। বাংলাদেশের জন্য তথ্য প্রযুক্তির খাতে এটি অসামান্য পদক্ষেপ।
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, বিশ্বর ৩৭তম দেশ হিসেবে আমরা ওসিআর চালু করছি। অথচ আমাদের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত অনেক দেশ এখনো ওসিআই চালু করতে পারেনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নতি করতে না পারলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো না। প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি আমরা তথ্য প্রযুক্তিতে এতো উন্নতি করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সময় মাত্র ১০ থেকে ১৫ লাখের মতো মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন। এখন তা চার কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এখন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছি। প্রযুক্তি ছাড়া আমরা এক মিনিটিও চলতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি রোধে আমরা উন্নতি করতে পেরেছি। একসময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে এক নম্বর ছিলো। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর সবক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দুর্নীতি কমে এসেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ওসিআই পুঁথির মাধ্যমে নতুন পুরনো বই, নথি ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে তা হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। বই, নথি, কাগজের স্তুপ থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে কোনো তথ্য খুঁজে বের করতে হবে না। ওয়েবে বা কম্পিউটারে সার্চ দিলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে।
এছাড়া অনলাইন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় বাংলা ওসিআর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। ই-গভর্নেন্স ও কাগজ ফাইলবিহীন অফিস পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখবে ওসিআর। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আগের সব ফাইল ডিজিটাল ফরম্যাটে ওয়েব/সার্ভার কিংবা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করা যাবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বাংলা ওসিআর পুঁথি মাত্র ৪ সেকেন্ডেই বইয়ের একটি পাতাকে ডিজিটাইজ এবং এডিটেবল করতে সক্ষম। মূল টেক্সটের শতকরা ৯৫ ভাগেরও বেশি শব্দ নির্ভূলভাবে প্রদর্শন করতে সক্ষম। পুঁথি এখন পর্যন্ত ১০০’র বেশি বাংলা ফন্ট পড়তে পারে। ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।
ওসিআর: ওসিআর এমন একটি সফটওয়্যার যা হাতে লেখা, টাইপ করা ও ছাপার হরফের লেখাকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য লেখায় রূপান্তর করতে পারে। ওসিআর’র সুবিধা হলো এটি ছবিতে সংরক্ষিত অক্ষরও চিনতে পারে। ফলে ছবির অক্ষরকে স্ক্যান করে অথবা ছবি তুলে টেক্সট ফাইলে রূপান্তর এবং সম্পাদন করা যাবে।
পুঁথি: পুঁথি বাংলাসাহিত্য ও জীবনগাঁথা রচনার সবচেয়ে পুরনো মাধ্যম। বাংলা ওসিআর’র মাধ্যমে সেই পুঁথি থেকে শুরু করে সব ধরনের ডকুমেন্ট ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ ও সম্পাদন করা যাবে। তাই বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে পুরনো এই মাধ্যমের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রথম বাংলা ওসিআর’র নামকরণ করা হয়েছে।
যেভাবে ওসিআর ব্যবহার করা যাবে: পুঁথি সফটওয়্যারটি সংগ্রহ করে পিসিতে ইন্সটল করার পর রান করে ব্যবহার করা যাবে। অনলাইনে সীমিত পরিসরে ওসিআর করতে চাইলে পুঁথির ওয়েবসাইটে টেক্সট আপলোড করে বিনামূল্যে ওসিআর করা যাবে।
ওসিআর পুঁথি ব্যবহারে চার্জ: অনলাইনে বাংলা ওসিআর পুঁথি ব্যবহার করতে কোনো চার্জ দিতে হবে না। তবে যারা বাণিজ্যিকভাবে বাংলা ওসিআর ব্যবহার করতে চান তাদেরকে পুঁথির লাইসেন্স কিনতে হবে। চলতি বাজার দর অনুযায়ী এর মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
পুঁথির ঠিকানা: পুঁথির ওয়েব অ্যাড্রেস- www.Puthiocr.com এবং মেইল অ্যাড্রেস- [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৪