ঢাকা: সংখ্যাটি দশ হাজার। এটাই টার্গেট।
এর আগেও বাংলানিউজের পাঠকদের কাছে আবু হানিপকে তুলে ধরা হয়েছে। সেবার তিনি বলেছিলেন, আমি হেল্প শব্দটিকে ‘হানিপ’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চাই। তখন আর কেউ ‘মে আই হেল্প ইউ’ বলবে না বলবে ‘মে আই হানিপ ইউ’।
কতটা দৃঢ়তা ও ইচ্ছাশক্তির জোর থাকলে এমন কথা বলা যায়। সেবার কথা হচ্ছিলো নিউইয়র্কের অ্যাস্টোরিয়া পিপল এন টেকের বিশাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বসে। সেখানে হাজার হাজার তরুণ, যুবক, বয়ষ্ক নারী-পুরুষ শিখেছে, শিখছে কম্পিউটার জগতের নানা কারিগরি। তারা সফটওয়্যার বানানো শিখছে, শিখছে আধুনিক প্রযুক্তির আরও অত্যাধুনিক ব্যবহার। এই যা কিছু তার প্রধান প্রশিক্ষক আবু হানিপ। আর শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বাংলাদেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে যারা এরই মধ্যে চলে গেছেন তাদের অড জবের দুঃস্বপ্ন থেকে বের করে আনতে আবু হানিপের এই চেষ্টা। এরই মধ্যে কয়েক হাজার বাংলাদেশি তার প্রশিক্ষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার বড় বড় কোম্পানিতে বড় বড় পদে, বড় অংকের বেতনে কর্মরত।
এবার দেশে স্বপ্ন বয়ে আনছেন আবু হানিপ। তিনি বাংলাদেশে স্থাপন করছেন পিপল এন টেকের শাখা। ঢাকার গ্রিনরোডে এরই মধ্যে প্রায় শেষ করেছেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ। এই সেন্টার থেকেই দশ হাজার আইটি প্রশিক্ষিত গ্রাজুয়েট বের করবেন আবু হানিপ। যারা সরাসরি বিমানবন্দর থেকেই জয়েন করবে মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে। এছাড়াও তারা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বড় চাকরি করবেন এবং কেউ কেউ দেশে থেকেই ঘরে বসে এই প্রশিক্ষণের জোরে ডলার আয় করবেন। আউট সোর্সিংয়ে বাংলাদেশের নাম কেবল ড্যাটা এন্ট্রির তালিকা থেকে উঠে আসবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও দামি দামি কাজে।
আবু হানিপের সঙ্গে এবার কথা হয় বাংলানিউজ কার্যালয়ে। স্বপ্ন বয়ে ঢাকা নিয়ে আসার পর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বেশ কিছুদিন এখানে কাটাচ্ছেন আবু হানিপ। মঙ্গলবার এসেছিলেন বাংলানিউজ কার্যালয়ে।
হানিপ বললেন, বর্তমান সরকার যে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের, আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে চায় তার জন্য এমন একটি উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
তিনি বলেন, কৃষি, তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্সের পর দেশের অর্থনীতির চতুর্থ স্তম্ভটি হবে এই আইটি সেক্টর। এখান থেকে বছরের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আসবে দেশে। যা হবে এগিয়ে চলার শক্তি।
একটা হিসাব কষেও দেখালেন আবু হানিপ। বললেন, এরই মধ্যে পিপল এন টেক যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০০ বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষিত করেছে। এরা গড়ে বছরে আয় করছে ১,০০,০০০ ডলার করে। সেই হিসাবে মোট আয় ৩,০০,০০,০০,০০ (ত্রিশ কোটি ডলার)। এর ২০ শতাংশও যদি তারা দেশে পাঠায় তাহলে দেশ প্রতি বছর পাচ্ছে ৬ কোটি ডলার। একা পিপল অ্যান্ড টেক যদি দেশের রেমিট্যান্সে বছরে ৬ কোটি ডলার কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ করে দিতে পারে, এমন আরও উদ্যোক্তা যদি থাকে তাহলে এই আয় বছরে বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর সেটা সম্ভব।
এই সম্ভাবনার স্বপ্নই দেশে বয়ে এনেছেন আবু হানিপ।
তিনি বলেন, দেশে তরুণ, যুবা, মধ্যবয়সী কিংবা বয়ঃবৃদ্ধ যেই হোন না কেনো ১০ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষিত করে এই হিসাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের হতে পারে। যা সত্যিই দেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
বাংলাদেশে যাদের প্রশিক্ষণ দেবেন তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশই আবু হানিপের কাছে পড়বে বিনা খরচে। তারা পাবে বিশেষ স্কলারশীপ। তবে তা কেবল অসচ্ছ্বল মেধাবীদের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
এই স্কলারশিপ তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও দিচ্ছেন। তার নিউইয়র্কের অ্যাস্টোরিয়া, ব্রুকলিন, নিউজাসির আটলান্টিক সিটি এবং ভার্জিনিয়ার টাইসনস কর্নার সেন্টারে যারা পড়ছেন তাদের মধ্যেও অনেকে বিনা খরছে নিচ্ছেন আবু হানিপের অত্যন্ত দামি ও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশিক্ষণ। যারা মেধাবী ও অধ্যবসায়ী তাদের জন্য চার মাসই যথেষ্ট হাতে কলমে এই শিক্ষা নিতে। এবং এর পরই তাদের স্বপ্ন পূরণ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতি থেকে একজন করে স্কলারশিপ নিয়ে আবু হানিপের পিপল এন টেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তারা অড জবের ফ্রাস্ট্রেশন থেকে মুক্তি পাচ্ছে। পিকনিক ও ইফতার সর্বস্ব অ্যাসোসিয়েশনগুলোও পাচ্ছে ভালো কাজের সুনাম।
আর যারা গ্রাজুয়েট হয়ে কাজ পাচ্ছে তাদের জীবন পাল্টে যাচ্ছে। মূল ধারায় তারা আরও আধুনিক আরও পশ জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের ভালো দামি স্কুলে পাঠাতে পারছে। তার পথ ধরে বাংলাদেশিরা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বিদেশে। এরাই যখন তাদের আয়ের বড় অংশ দেশে পাঠাবে, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে, তখন দেশ আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে, বলেন আবু হানিপ।
আর পিপল এন টেকের ঢাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যারা প্রশিক্ষিত হবেন তাদের জন্য রয়েছে আবু হানিপের খুবই সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট চিন্তা।
তিনি বলেন, এখানে সিলেকশনের ক্ষেত্রে কড়া সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। তাদেরই নেওয়া হবে যারা সফল হতে পারবে ও অবদান রাখবে।
আবু হানিপ বলেন, অনেক ইমিগ্র্যান্ট রয়েছেন যারা তাদের কাছের জনকেও নিয়ে যেতে চান ইউরোপ আমেরিকায়। স্বামী রয়েছেন স্ত্রীর যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, ছোট ভাই বা বোনটি যেতে চান কারণ তাদের ভাই বা বোন স্পন্সর করছে। এমন যারা তারা খুব সহজেই দেশ থেকে পিপল এন টেকের প্রশিক্ষণটি নিতে পারেন। যাতে তাদের ওই দেশে গিয়ে অড জবের কবল থেকে মুক্তি দেবে। বলা যেতে পারে অনেকটা রেডি করে নিয়ে যাওয়া, বলেন আবু হানিপ।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবার এইচওয়ানবি ভিসায় এক লাখ আশি হাজার নতুন ইমিগ্র্যান্ট নেবে। প্রতিবছরের চেয়ে এই সংখ্যা তিনগুন। বাংলাদেশের যত বেশি সংখ্যক আইটি প্রশিক্ষিত আবেদনকারী থাকবে, সম্ভাবনাও তত বেশি হবে।
যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এরই মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্সে শিক্ষা নিয়েছেন তাদের জন্য এই শর্ট-টার্ম কোর্সটি হবে সোনায় সোহাগার মতো, বলেন আবু হানিপ।
কোর্স শেষে তাদের সিভি জমা হলে অনেক কোম্পানি তাদের চাকরি দেবে, ডাকবে। তখন কোম্পানি স্পন্সর হয়েই তাদের নিয়ে যাবে স্বপ্নে দেশে।
এগুলো সবই বাস্তবায়নযোগ্য স্বপ্ন, বলেন আবু হানিপ। বাংলাদেশের কিছু কিছু শিক্ষার্থী এরই মধ্যে দেশ থেকে অনলাইনে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আবু হানিপের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু সেটা কিছুটা সমস্যারও।
আবু হানিপ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যখন দিনের বেলায় প্রশিক্ষণ চলে তখন এখানে গভীর রাত। এ কারণে অনেকের পক্ষেই প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব হয় না। পিপল অ্যান্ড টেকের ঢাকা কেন্দ্র সে সমস্যা দূর করবে।
আর মাথা গুণে গুণে এখান থেকে অন্তত ১০ হাজার আইটি প্রশিক্ষিতকে গ্রাজুয়েট করা হবে,বলেন আবু হানিপ।
তিনি জানান, সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে একটি আইটি বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপনের স্বপ্ন রয়েছে তার।
‘সে বিষয়ে পরে কথা হবে’ এই বলে আলাপ শেষ হয় এই স্বপ্নবাজ মানুষটির সঙ্গে।
আবু হানিপ বাংলাদেশে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ডিভি লটারি জিতে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র যান। এরপর কম্পিউটার সায়েন্সে মাষ্টাস সহ অরাকল ডিবিএ, সিস্টেম অ্যাডমিন সহ যাবতীয় সার্টিফিকেশন অর্জন করে এফডিআইসি, আইআরএস, ডিওডি, আইবিএম এবং অরকল কোম্পানিতে কাজ করে অর্জন করেন বান্তব অভিজ্ঞতা। তার পক্ষেই সম্ভব দেশের মানুষকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখানো।
পিপল এন টেকের যোগাযোগ: www.piit.us, [email protected], phone: +8801611446699
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৪