ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ডিজিটালের ধাক্কায় কাত টেলিভিশনও

তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
ডিজিটালের ধাক্কায় কাত টেলিভিশনও ছবি : প্রতীকী

টেলিভিশন ওয়ালাদের এবার বুঝি মাথায় হাত পড়লো। ব্যবসায়ীদের জন্য তাদের পেতে রাখা লালগালিচা গুটানোর সময় এসেছে।

কারণ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন বাণিজ্য আর তাদের থাকছে না। ভেতরের খবর হচ্ছে ওই অর্থ নিয়ে বিজ্ঞাপনদাতারা এখন ঝুঁকছেন ডিজিটাল মিডিয়ার দিকে। অর্থাৎ আসছে দিনগুলোতে অনলাইন নিউজপোর্টাল, আইপিটিভিগুলোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর পিছনেই বেশি অর্থ ঢালবেন তারা। বলা হচ্ছে, সব কিছু যদি ঠিকঠাক মতো এগোয় তো টেলিভিশনগুলো তাদের বিজ্ঞাপন সময়ের ৭৫ ভাগই হারাতে যাচ্ছে। তাদের তারকাখচিত আয়োজনগুলোতেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বিজ্ঞাপনদাতারা।

এতে উপরিতলে চাকচিক্য এখনো বজায় থাকলেও ভেতরে ভেতরে ভয় ধরে গেছে টেলিভিশনওয়ালাদের। টেলিভিশনের দর্শকপ্রিয়তা কমবে, ঘরে ঘরে ঢাকা থাকবে ছোট্ট পর্দা, রেটিং কমবে আর আপনি ব্যবসায়ীদের বলবেন, মানিব্যাগ খোলো টাকা দাও, সেতো আর চলতে পারে না।

বলা হচ্ছে সে ডিজিটাল আউটলেট বেড়ে যাওয়ার কারণেই এক সময়ে যাদুর বাক্স খ্যাত টেলিভিশনের এই দুর্দশা।

এই মওসুমে টেলিভিশনের দর্শক গেলো বছরের একই মওসুমের তুলনায় এক ধাক্কায় কমেছে নয় শতাংশ। মোফেটন্যাথানসনের গবেষণালব্দ তথ্য এটি। কেনো এই কমে যাওয়া তার উত্তরে টেলিভিশনগুলোর কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন মানুষ এখন বেশিই ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়ছে, ওখানেই বেশি সময় দিতে পছন্দ করে। অনলাইনে খবর পড়ে নেয়। আর বিনোদন সেও তো অনলাইনেই মেলে।

নেটফ্লিক্স’র মতো ইন্টারনেটস্ট্রিমিং থেকে পাওয়া সিনেমা দেখেই অবসরটুকু কেটে যায় অনেকের। তাতে হলিউডের ব্লকবাস্টার সব সিনেমাই মেলে, পাওয়া যায় দেশি বিদেশি সব সিনেমা নিজের পছন্দ মতো দেখে নেওয়ার স্বাদ। মোফেটন্যাথানসনের মতে চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে নেটফ্লিক্সের কারণেই টেলিভিশন দর্শক কমেছে ৪৩ শতাংশ।

অতীতেও বিভিন্ন ফ্যাক্টরে টেলিভিশন দেখার হার কমেছে, কিন্তু এতটা গুরুতর কখনো ছিলো না। দর্শক যখন ভাগাভাগি হতে শুরু করে তখনও রক্ষণশীল টেলিভিশনগুলোর প্রতি দর্শকের আগ্রহ ছিলো। ডিজিটাল মিডিয়া যখন এগিয়ে আসছিলো তখনও প্রথম ধাক্কাটি টেলিভিশনের নয় লাগে গিয়ে সংবাদপত্রের গায়ে। সংবাদপত্রগুলোর বিজ্ঞাপন বাজেট কাট করে অনলাইন মিডিয়াগুলোর দিকে পাঠানো হলেও টেলিভিশনের বাজেট অক্ষত ছিলো কিংবা বাড়ছিলোও।

কিন্তু এবার টেলিভিশনের পালা। সনাতনী টেলিভিশনগুলো এরই মধ্যে তার ভোগান্তি ভুগতে শুরু করেছে। আর ধকল কাটাতে তারাও ঝুঁকছে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার দিকে। প্রধান প্রধান ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক তাদের প্রোগ্রামগুলো অনলাইনে দেখার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আর এভাবে ডিজিটাল বিকল্প যতই দ্রুততায় বাড়ছে ব্যবসায়ীরাও ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন তারা তাদের মোট বরাদ্দের কতটুকু কাকে দেবেন।  

স্টারকম ইউএসএ’র প্রেসিডেন্ট অ্যামান্ডা রিচম্যানের কথাই ধরুন না। তিনি বলছেন, দর্শকের হার কমে যাওয়ার গুঞ্জন আগেই ‍শুরু হয়েছিলো এবার তা বড় আকারে ধরা পড়লো। আর ব্যবসায়ীরা তাদের অর্থ বরাদ্দে এই রেটিংকেই গুরুত্ব দেন, আর কিছুই তাদের মাথায় থাকে না। স্টারকম ইউএসএ যুক্তরাষ্ট্রের একটি মিডিয়া বায়িং কম্পানি। কেলগ’স, ক্র্যাফট ফুডস, প্রক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল যাদের ক্লায়েন্ট।

‘বছরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে,’ বললেন অ্যামান্ডা।

ম্যাঙ্গা গ্লোবাল নামের আরেক বিজ্ঞাপন ক্রেতা গ্রুপ বলছে এবছর বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতিশ্রুতি ৭ শতাংশ কমবে। এর মধ্যে ১০ শতাংশই কাটা পড়বে ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্কগুলোর ভাগ থেকে আর কেবল নেটওয়ার্কগুলোর ভাগে যাবে ৫ শতাংশ।

জেফেরিস এর মিডিয়া বিশ্লেষক জন জেনেডিস মনে করছেন, মোট প্রতিশ্রুতি কমবে ৬ শতাংশ। যা অংকের হিসেবে ২০ বিলিয়ন ডলার।
 
‘স্পষ্টতই বিষয়টি উদ্বেগের,’ বললে টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স’র চিফ অপারেটিং অফিসার চেজ ক্যারি। ‘নিঃসন্দেহে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে এখন আরও পছন্দের জায়গা তৈরি হয়েছে। তারাও কিছুটা নমনীয়তা চান। আসলে বিশ্ব যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি সহনশীল থেকেই আমাদের চলতে হবে। ’

বিজ্ঞাপন জগত এখন ঝুঁকছে ডিজিটাল বিশ্বের দিকে। আর তার জন্য অর্থ বরাদ্দ নতুন করে নয়, বরং টেলিভিশনগুলোর ভাগ থেকেই কেটে আনা হবে। নেটফ্লিক্সের মতো বৃহৎ স্ট্রিমিং সার্ভিস এখনো বিজ্ঞাপন নিচ্ছে না। কিন্তু তাতেও সমস্যা সেই, বিজ্ঞাপনদাতারা একই ধরনের সার্ভিস স্ন্যাপচ্যাপ, ভাইন, ইউটিউবকে বিজ্ঞাপন দিয়েই যাচ্ছে। এসব মাধ্যমে দর্শকরা, বিশেষ করে তরুণশ্রেণি ক্রমবর্ধমান হারেই সময় দিচ্ছে।

‘বিষয়টি এখনো যে খুব গভীরে প্রোথিত তা নয়, টিভিগুলো আমাদের বিবেচনার বাইরে যায়নি। তবে দশ বছর আগে তাদের যে শক্ত অবস্থান ছিলো তা এখন আর নেই সে কথা তারাও ভালো করেই বোঝেন, বললেন কোকা-কোলার উত্তর আমেরিকা অংশের উর্ধ্বতন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ ইভান পোলার্ড।

ম্যাঙ্গা গ্লোবাল মনে করছে এবছর বিজ্ঞাপনে টেলিভিশনের আয় কমবে, ডিজিটাল মিডিয়ায় যা ১৯.১ শতাংশ বাড়বে। আর ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ বিজ্ঞাপন আয় দুই পক্ষে সমান সমান হয়ে যাবে। উভয় পক্ষই পাবে ৬৭.৫ বিলিয়ন ডলার করে। যা মোট বিজ্ঞাপন বাজারের ৩৮ শতাংশের সমান।

‘প্রশ্নতীতভাবেই বিজ্ঞাপন বাজারে আমরা নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, আর নিঃসন্দেহে অর্থ আমাদের সনাতনি মিডিয়ার হাত থেকে নিউ মিডিয়ার দিকে যাচ্ছে। ’ এ কথা ওয়াল্ট ডিজনির প্রধান নির্বাহী রবার্ট এ. ইজারের।

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো তাদের নিজ নিজ ডিজিটাল ভার্সনের দিকে ঝুঁকছে। আর তার মান বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অনলাইন ভার্সনে বিজ্ঞাপন পেতে হলে এর কোনও বিকল্প নেই। আর টেলিভিশনেও তাদের দর্শক বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। স্পোর্টস, অ্যাওয়ার্ড শোর মতো বড় বড় ইভেন্ট আয়োজন করেই সে চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

এদিকে বিজ্ঞাপনের বাজার যত কমছে টিভি নেটওয়ার্কগুলোর নিজেদের মধ্যে কাড়াকাড়ি আর তার জেরে শত্রুতা ক্রমেই বাড়ছে। দর্শকের মন জয় করার মতো প্রোগ্রাম বানানোর চাপও এতে বেড়েছে।

‘কিছু কিছু নেটওয়ার্ক রয়েছে যারা এবছর ভালোই করেছে, কিন্তু কিছু কিছু নেটওয়ার্ক ভালো করছে না,’ বললেন সিবিএস’র প্রধান নির্বাহী লেসলি আর মুনভেস। তিনি বলেন, ‘আমি সবিস্তারে যাবো না, আশা করি যে কেউ নিজেই বিষয়টি বুঝে নিতে পারবে। তবে বাজারে কিভাবে টিকে থাকা যায় তা নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা করে যাবো। ’

কতিপয় বিশ্লেষক অবশ্য টেলিভিশনের বিরুদ্ধে এত কথা এখনি বলার সময় হয়নি বলেই মনে করেন। ‘টেলিভিশন আগে যতটা প্রভাব রাখতো এখন তা রাখছে না এ কথা সত্য কিন্তু এর প্রভাবের কাছে অন্য মিডিয়াগুলো এখনও অনেক পিছিয়ে,’ এই মত পাইভোটাল রিসার্চ’র মিডিয়া বিশ্লেষক ব্রায়ান উইজারের। তিনি বলেন, ‘বিশ্বটি পরিবর্তনের আরও কাছাকাছি যাচ্ছে এক কথা ঠিক কিন্তু এও সত্য এখনও সে পরিবর্তন আমরা দেখতে শুরু করিনি। ’

বাংলাদেশ সময় ১৩৪৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।