ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

প্রযুক্তির স্বপ্ন চোখে প্রজন্মের দুই কারিগর

মেহেদী হাসান পিয়াস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
প্রযুক্তির স্বপ্ন চোখে প্রজন্মের দুই কারিগর ছবি : দীপু মালাকার /বাংলানিউজটোয়েন্টি.কম

ঢাকা: বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার ঘটছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। কিন্তু উন্নত বিশ্বে যেখানে বিনোদনের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনেও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়, বাংলাদেশে তেমনটি এখনও হয়ে ওঠেনি। তবে দেশের মানুষকে প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারে অভ্যস্ত করার উপায় নিয়েই ভাবনা স্বপ্নবাজ দুই তরুণ প্রযুক্তিবিদের। প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষদের আরও বেশি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চিন্তা থেকেই কাজের শুরু। প্রায় এক বছর সময় ব্যয় করেন শুধুমাত্র জনসাধারণের দৈনন্দিন কাজ ও প্রয়োজনগুলো বুঝতে।

সেই প্রয়াসেরই সর্বশেষ প্রতিফলন ঘটলো ‘বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস’ নামে একটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন তৈররি মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং সরকারি হাসপাতালের ফোন নম্বর, ঠিকানা, ম্যাপ নিয়ে সম্পূর্ণ স্মার্টফোন ভিত্তিক একটি নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেন তারা।

তারিক এবং তন্ময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এক্সেস-টু-ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি সার্ভিস’ নামে অ্যাপ্লিকেশনটি বাস্তবায়ন করেছে ই-লজিক্যাল আইটি লিমিটেড। এর আগে ডিএমপি, বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশনের বাস্তবায়ন করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

মেধাবী, স্বপ্নবান এ দুই প্রযুক্তিশিল্পীর সঙ্গে বাংলানিউজজের একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে দেশের প্রযুক্তি নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা, কাজ, সঙ্কট এবং সম্ভাবনার কথা। চিন্তা-দর্শনে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও দু’জন একই স্বপ্ন দেখেন।

তারা স্বপ্ন দেখেন, বাংলাদেশ যেমন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, তেমনই প্রযুক্তিতেও একদিন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে প্রিয় মাতৃভূমি। দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তাদের শৈশব-কৈশোর, শিক্ষাজীবন এবং কাজের ধারাবাহিকতা।

বরিশালের ছেলে মো. তারিক মাহমুদ। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটে। দুই ভাইবোনের মধ্যে বাবা-মায়ের বড় ছেলে তারিক।

ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি আর সাহিত্যের প্রতি তার বেশ ঝোঁক। ক্যাডেট কলেজ আর বুয়েটে থাকতে উপস্থাপনা উপভোগ করতেন বেশ, করতেন টুকটাক লেখালেখিও। বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে এসেই পরিচয় ঘটে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে আসা মনসুর হোসেন তন্ময়ের সঙ্গে। কিশোরগঞ্জের ছেলে হলেও ছোটবেলা থেকে ঢাকায় বড় হয়েছেন তন্ময়।

প্রথমে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও পরে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখা করেন তন্ময়। ভালবাসেন বাস্কেটবল ও ক্রিকেট খেলতে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তন্ময়। নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি সব সময়ই একটু আলাদা কিছু ভাবতে ভালবাসতেন। আর এভাবেই নিজেদের চিন্তাগুলো নিয়ে গল্প করতে করতে এক সময় বুয়েটের সোহরাওয়ার্দী হলের ক্যান্টিনে যাত্রা শুরু করে তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইলজিকাল আইটি এক্সপার্টস’ সংক্ষেপে ‘ইলাইটস’।

পরবর্তীতে তারিক-তন্ময়ের সঙ্গে যোগ দেন চট্টগ্রামের ছেলে ফাহিম তাহমিদ চৌধুরী, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার কাজী আবির আদনান এবং চাঁদপুরের সৈয়দ ইশরার মাহবুব। সবাই বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন তখন।

পড়ালেখার ফাঁকে দেশের পাবলিক সার্ভিসে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো নিয়েই আড্ডায় মেতে থাকতেন তারা। বুয়েটের নজরুল হল, সোহরাওয়ার্দী হল, সেন্ট্রাল ক্যাফে কিংবা বন্ধু আবিরের বাসাই ছিল ইলাইটসের আড্ডামুখর গবেষণাগার।

নিজেদের চিন্তাভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া শুরু করেন পানির অপচয় ঠেকাতে ‘হাত বাড়ালেই পানি’ নামে এক ‘অটোমেটিক ওয়াটার ট্যাপ’ উদ্ভাবনের মাধ্যমে। এর মধ্যে চতুর্থ বর্ষে পদার্পন। একাডেমিক প্রজেক্ট হিসেবে এটিকে আরও এগিয়ে নেন তারা।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য থেকে তারা কাজ শুরু করেন ২০১৩ সালের প্রথম দিকে। এরই ধারাবাহিকতায় নিজেদের উদ্যোগ ও গবেষণা নিয়ে তারা কথা বলেন ঢাকার উত্তরা পুলিশ ডিভিশনের সঙ্গে। উত্তরা পুলিশ ডিভিশন তাদের উদ্যাগকে স্বাগত জানালে ওই বছরের ৮ অক্টোবর পরীক্ষামূলক একটি মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়। অ্যাপ্লিকেশনটি চালুর পর এক মাসেই উত্তরার স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগায় ভিন্ন ধারার এই মোবাইল সেবা। মাত্র দু’ মাসেই প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ নিয়মিত ওই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে শুরু করেন।

বিষয়টি নজরে আসে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের। তিনি গোটা ডিএমপির জন্য একই রকম একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরির উদ্যোগ নেন। তারই পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৩ সালের শেষ দিকে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেন তারিক, তন্ময় এবং তাদের সঙ্গীরা। ডিএমপির এই অ্যাপ্লিশেনটি তৈরি করতে সম্মানি হিসেবে তারা নেন মাত্র পাঁচশো টাকা।

এ নিয়ে তারিকের ভাষ্য, ‘আমরা কাজ করে অনেক টাকা আয় করতে পারবো। কিন্তু দেশের জন্য কিছু করতে গিয়ে টাকার চিন্তা করিনি। আয় করার উদ্দেশ্যে এই অ্যাপ্লিকেশনের তৈরির কাজ শুরু করিনি আমরা। আগে দেখেছি, মানুষ পুলিশের কাছ থেকে কী সেবা চায়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো বিবেচনা করেই অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করা হয়েছে। ’ বিভিন্ন নাগরিক সেবায় প্রযুক্তির সত্যিকার ব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখাই আমাদের লক্ষ্য, জানালেন তন্ময়।

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে, যে কেউ স্থানীয় বা জাতীয় সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তির ব্যবহারে ইলাইটসের সহযোগিতা চাইলে সরাসরি ০১৭১১৮৭৩৮৫৬ নম্বরে ফোন করে কথা বলতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে আগ্রহী এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। কেউ ইচ্ছা করলে ফেসবুকেও (http://goo.gl/fH1qGh) তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। দেশে প্রযুক্তি বিকাশে কেউ সরাসরি ইলাইটসের উদ্যোগগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে। এভাবে সবাই মিলে কাজ করলে একদিন সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তরুণ এই প্রযুক্তিবিদরা।

দীর্ঘ আলাপচারিতায় বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন তারা। তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

বাংলানিউজ: মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির চিন্তা কিভাবে এলো?
তারিক: প্রথম থেকেই আমাদের একটা উদ্দেশ্য ছিল, প্রযুক্তির সেবা সরাসরি মানুষের হাতের নাগালে কিভাবে আনা যায়। যখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সেবাগুলোকে মানুষের আরও কাছে নিয়ে যাওয়া বা আরও সহজ করে তোলার চিন্তা করি, তখন আমরা এমন একটি মাধ্যমকে বেছে নিতে চেয়েছিলাম, যে মাধ্যমটি ধনী-গরীব এবং সমাজের সকল স্তরের সকল বয়সের মানুষের হাতের নাগালে থাকবে। এ থেকে প্রথমেই আমরা মোবাইল ডিভাইসটিকে টার্গেট করি।

গত পাঁচ-সাত বছরে ফিচার ফোন থেকে ফিউচার স্মার্টফোনে চলে এসেছে। তখন চিন্তা করলাম মোবাইল ফোন ভিত্তিক সেবাগুলো যদি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে দেওয়া যায় তাহলে একটি স্মার্টফোন থেকে মানুষ অনেক বেশি সেবা পেতে পারে। সেই থেকে আমাদের অ্যাপস তৈরির চিন্তা শুরু। যদিও প্রথম দিকে আমরা সন্দিহান ছিলাম যে, বাংলাদেশের মানুষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার কতটা গ্রহণ করবে।

বাংলানিউজ: ই-লজিক্যাল মানে কি?
তারিক: ই-লজিক্যাল মানে হলো, ই-লজিক্যাল আইটি এক্সপার্ট (ইলাইটস)। ইলজিক্যাল মানে ‘অযৌক্তিক’ নয়। ‘ই’ মানে ইলেক্ট্রনিক। যৌক্তিক সমাধানগুলোকে ইলেক্ট্রনিক প্রক্রিয়ায় মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া।

বাংলানিউজ: সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সেবাসংস্থার জন্য এখন পর্যন্ত কি কি অ্যাপস তৈরি করেছেন?
তন্ময়: ২০১৩ সালের শেষ দিকে বা মাঝামাঝিতে ডিএমপি অ্যাপ্লিকেশন। যা এখন এক লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী অ্যাপটি ব্যবহার করছে। এরপর হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাপটি এবং সর্বশেষ জরুরি সেবা অ্যাপটি।

বাংলানিউজ: আর কোন কোন বিষয়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির পরিকল্পনা আছে?
তারিক: সবকিছু অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে তৈরি করতে হবে আমাদের চিন্তা কিন্তু সেরকম নয়। আমরা চাই মানুষের সমস্যাগুলোর যৌক্তিক সমাধান ডিজিটাল উপায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। এর একটি মাধ্যম আসলে মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন। সব সেবাই যে মোবাইলফোন ভিত্তিক বা অ্যাপভিত্তিক হতে হবে এমনটাও নয়।

তবে মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার শিক্ষাখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আমরা কিছু কাজ করবো। সাধারণ জনগণকে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে আরও একটি মোবাইল অ্যাপ নিয়ে কাজ করছি আমরা। দেশের স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় একটি পরিপূর্ণ ব্লাড পোর্টাল তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। খুব শিগগিরি এই সেবাটি চালু করতে পারবো। এছাড়া ট্রাফিক জ্যাম নিরসনের জন্যে ‘রাস্তা ফাঁকা’ (Traffic free) নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো-  দেশের মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্রযুক্তির আরও সহজ ব্যবহার দেখানো এবং দেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদদের দেশিয় সমস্যা সমাধানে কাজ করতে উৎসাহিত করা।

বাংলানিউজ: প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা কতটুকু প্রস্তুত?
তন্ময়: বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে প্রযুক্তি জড়িয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুব সম্ভাবনার। আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ যেকোনো নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তাছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশের মানুষ একেবারেই পিছিয়ে নেই।

বাংলানিউজ: প্রযুক্তির ব্যবহারকে কি পর্যায়ে দেখতে চান?
তন্ময়: এক কথায় যদি বলি, প্রযুক্তির ব্যবহারকে মানুষের মৌলিক চাহিদার পর্যায়ে দেখতে চাই। আমাদের দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও শহর কেন্দ্রিক। খোলামেলাভাবে বললে ঢাকা কেন্দ্রিক। খুব বেশি হলে বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে। তবে এখানে একটা প্রশ্ন থাকে, প্রযুক্তি বলতে কি আমরা শুধু মোবাইল ফোনকে বুঝবো?

বাংলানিউজ: প্রযুক্তি ব্যবহারে কোনো রকম সচেতনতার প্রয়োজন আছে কি না?
তারিক: আমার মনে হয়, প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের বাড়তি সচেতনতার দরকার নেই। বরং অসচেতনভাবে নিজেকে প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলাটাই অনেক বেশি দরকার। আমি চাই প্রযুক্তিটা মানুষের কাছে এমনভাবে পৌছেঁ যাক, যেন প্রযুক্তিকে সে তার দৈনন্দিন জীবন থেকে আলাদা চিন্তা না করে। তবে হ্যাঁ, প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা যেন অবশ্যই সাইবার ক্রাইম বা অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকি। এ বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জনসচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার দরকার আছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের সচেতনতার পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারে আইনি দিকগুলোতেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

বাংলানিউজ: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু এগিয়ে?
তারিক: ডিজিটাল বাংলাদেশের থিমটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমি তখনই বলবো যখন প্রান্তিক পর্যায়ের একজন নাগরিকও প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত হবেন। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অবকাঠামোগত সমস্যা। বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় সরকারি উদ্যোগে যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়, তবে গ্রামাঞ্চলেও প্রযুক্তির বিশাল বাজার তৈরি হবে।

যেকোনো সেবা দেওয়া এবং নেওয়া যেমন সহজ হবে, একইভাবে প্রযুক্তিভিত্তিক বাণিজ্য যেটাকে ই-কমার্স বলে থাকি আমরা, তার সম্প্রসারণ ঘটবে।

বাংলানিউজ: অনেককেই বলতে শোনা যায়, আমরা প্রযুক্তিমনস্ক হয়ে উঠছি ঠিক কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠছি না। এ দুইয়ের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব আছে কি?
তন্ময়: বিজ্ঞানের প্রয়োগটাই আসলে প্রযুক্তি। ফলে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দু’টি আলাদা বিষয় হলেও এদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যারা নতুন কোনো প্রযুক্তিকে মেনে নিতে বা গ্রহণ করতে প্রস্তুত তারাই মূলত প্রযুক্তিমনস্ক। অন্যদিকে দৈনন্দিন জীবন থেকে বিজ্ঞানকে আলাদা করে ফেলার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলানিউজ: মোবাইল সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশসন তৈরির ক্ষেত্রে কোনো প্রণোদনার দরকার আছে কি?
তারিক: আমার যেটা মনে হয়, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে সরকার যে উদ্যোগগুলো ইতোমধ্যে নিয়েছে তার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্র বা বাজার তৈরিতে মনযোগ দিতে হবে। আশা করেছিলাম, সরকারি কর্মক্ষেত্রগুলোতে সরাসরি কম্পিউটার সায়েন্স কিংবা আইটিতে পড়াশুনা করা যে বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা হয়ে ওঠেনি।

যেমন বলা যেতে পারে, বিসিএস-এ এখন পর্যন্ত সরাসরি আইটি বা আইসিটি ক্যাডার দেখতে পাচ্ছি না আমরা। ফলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা সেবাদানকারী সংস্থা এবং ই-গভার্নন্যান্সের ক্ষেত্রে এই টিমগুলো কাজ করে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ ভিত্তিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণে না গিয়ে সরকারের উচিৎ বিশেষায়িত পদ বা কর্মক্ষেত্রগুলোর জন্য আইটি ক্যাডার তৈরি করে নিয়োগ দেওয়া।

এতে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। আশা করি, সরকার খুব শিগগিরই বিসিএস-এ আইটি ক্যাডার অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেবে। দেশে যদি তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করা না যায়, তাহলে প্রযুক্তির সুফল পাওয়া যাবে না।

বাংলানিউজ: ই-লজিক্যাল নিয়ে আপনাদের স্বপ্ন কি?
তারিক-তন্ময়: আসলে স্বপ্ন আমাদের অনেক বড়। প্রযুক্তিকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে আমরা যেন কিছুটা হলেও অংশ নিতে পারি সেটাই আমাদের স্বপ্ন।

বাংলানিউজ: ই-লজিক্যাল কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়?

তারিক-তন্ময়: প্রযুক্তিকে গণমুখী করতে না পরলে এর বিকাশ-বাণিজ্য কিছু লোকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে না। তাই প্রযুক্তিনির্ভর বা প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ দেখতে চাওয়ার আগে প্রযুক্তিকে গণমুখী করতে হবে। সব মিলিয়ে প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই।

বাংলানিউজ: আপনাদের প্রাপ্তি বা অর্জন কি?
তারিক-তন্ময়: এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোন ভিত্তিক সেবা নিয়ে যেসব কাজ করেছি সেসব কাজের জন্য ফোনে, ফেসবুকে দেশের অসংখ্য মানুষ আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এই যে দেশের মানুষের ভালবাসা এটাই আমাদের প্রাপ্তি। এর জন্যই আমরা কাজ করে যেতে চাই।
বাংলানিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
তারিক-তন্ময়: বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
এমএইচপি/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।