ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

উড়ন্ত বিমান ‍বানাতে চান ভাসমান বিমান কারিগর মুরাদ

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
উড়ন্ত বিমান ‍বানাতে চান ভাসমান বিমান কারিগর মুরাদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চাঁদপুর: মুরাদ হোসেন। বয়স বিশের কোঠায়।

পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন বুনতেন বড় প্রকৌশলী হবার। তার তৈরি বিমানে চড়ে মানুষ পাড়ি দেবে দেশ থেকে দেশে।

আকাশসমান স্বপ্ন থাকলেও সামর্থ্যের অভাবে প্রকৌশলী হয়ে ওঠা হয়নি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের বদরপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মুরাদের।

অভাবের কারণে রিকশাচালক বাবা আর বাক প্রতিবন্ধী মায়ের সন্তান মুরাদের শিক্ষার দৌঁড় থেমে গেছে ৮ম শ্রেণিতেই। বড় ভাই গার্মেন্টস কর্মী, ছোট ভাই ও বোন স্কুলে পড়ে তার।
স্থানীয় গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর ২০১০ সালে বাধ্য হয়ে এক ইলেকট্রিশিয়ানের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন মুরাদ।

তবু মন তার প্রবোধ মানেনি। মনের কোণে সুপ্ত স্বপ্ন তবুও আড়ালে-আবডালে আঁকতেন মুরাদ। একদিন বিমান তৈরি করার দৃঢ় প্রত্যয় বুকের মধ্যে লালন করার নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠেন মুরাদ।

শুরু হয় সংগ্রাম। অল্প আয় দিয়ে সংসারের ব্যয় মেটানোর পর জমাতে শুরু করেন টাকা। একসময় ২৮ হাজার টাকা সঞ্চয় দাঁড়ায় মুরাদের।

একদিন ভাবনা আসে, আকাশে না উড়ুক তার বিমান, পানিতে চড়লেই বা দোষ কি। শুরু হয় তার পানিতে চলমান বিমান তৈরির অভিযান।

জমানো সব টাকা দিয়ে প্রায় নিঃস্ব ‍মুরাদ বাস্তব রূপ দেন তার স্বপ্নের। তৈরি করেন পানিতে চলাচলের উপযুক্ত বিমানের আদলে জাহাজ।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পুকুরে গিয়ে দেখা মিললো মুরাদের তৈরি ভাসমান বিমানের। ককশিট দিয়ে তৈরি এ বিমানে  ৪/৫ জন বসা যায়। ব্যাটারিচালিত মোটরে এর গতির সঞ্চার হয়। এতেই কয়েক শিশুকে নিয়ে পুরো পুকুর ঘুরে বেড়ান মুরাদ।

কথা হয় মুরাদের সঙ্গে। তিনি জানান, বিমান দেখলেই মানুষ আকাশে মুখ করে তাকিয়ে থাকে। ছোট বেলা থেকেই এ দৃশ্য দেখে তার মনে হতো কিভাবে কাছ থেকে বিমান দেখার সুযোগ করে দেওয়া যায়। আকাশে ওড়ার বিমান তৈরির সামর্থ্য ও দক্ষতা তার নেই। তবু পানিতে চলাচলের বিমান বানিয়েই খুশি মুরাদ।

মুরাদ জানান, তিনি বিমান তৈরির কারখানায় কাজ করতে চান। এজন্য আবার তাকে পড়াশোনা শুরু করতে হলে তাও করতে রাজি। তার স্বপ্নকে সত্যি করতে চান তিনি।

মুরাদ আরো জানায়, পানিতে ভাসমান বিমানটি তৈরিতে তার অনেকদিন ধরে জমানো ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবু মানুষকে আনন্দ দিতে পেরে তিনি খুশি। বিমানটি দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জয়নুর আবেদীন তার জীবন-বৃত্তান্ত নিয়েছেন বলেও মুরাদ জানান।

এদিকে, পানিতে ভাসমান এ বিমান দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ উপজেলা পরিষদের পুকুরে এসে ভিড় করছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।