ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

লিবারেল আর্টস এবং ভবিষ্যতের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
লিবারেল আর্টস এবং ভবিষ্যতের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ৭ প্রকারের লিবারেল আর্টস

“It’s in Apple’s DNA that technology alone is not enough—it’s technology married with liberal arts, married with the humanities, that yields us the result that makes our heart sing”

“অ্যাপলের ডিএনএতে এটি (নির্ধারিত) রয়েছে যে প্রযুক্তি একাই যথেষ্ট নয়- প্রযুক্তির সাথে লিবারেল আর্টসের মিলনমেলা, মানবিক বিভাগের মিলনমেলার মাধ্যমেই হৃদয়ে সূর সৃষ্টি করার মত ফলাফল পাওয়া সম্ভব। ”
-    স্টিভ জবস, আইপ্যাড ২ উন্মোচন অনুষ্ঠানে

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ২০১৭ সালের বিশ্বের সেরা ১০০ সিইও (CEO) এর তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বসেরা সিইওদের মাঝে ৩২ জন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করে এই পদে এসেছেন।

এই তালিকায় এমবিএ ডিগ্রিধারী সিইওদের সংখ্যা ২৯। ব্যবসাক্ষেত্রে গোটা বিশ্বজুড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটদের এই সফলতার কারণ কি – এমন প্রশ্নের জবাবে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ডিন নিতিন নোহরিয়া বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদেরকে শেখানো হয় জিনিস কিভাবে কাজ করে– যা তাদের মাঝে এমন জিনিস গড়ে তোলার মানসিকতা তৈরি করে যা কাজ করবে – সেটা মেশিন হোক বা কোন প্রতিষ্ঠান। ” বর্তমান সময়ে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বেশ কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন, যেমন - নিত্যনতুন সমস্যার সৃজনশীল সমাধান বের করা, টাইম ম্যানেজমেন্ট, তথ্য এবং যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি যথার্থভাবে বোঝা এবং প্রয়োগ করা। আর এসব দক্ষতার দিক থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী এগিয়ে থাকে।

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের প্রকাশিত তালিকা থেকে আরো একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে ওঠে – ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের মাঝে অনেকেই কর্মজীবনে ব্যবসাক্ষেত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। অন্যান্য সেক্টরের ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীরা যথেষ্ট আগ্রহ দেখায়। ইঞ্জিনিয়ারদের কমিউনিটি ডিসকোভারই (DiscoverE) এর তথ্যানুযায়ী অর্ধেকেরও বেশি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী মেডিসিন, আইন, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং এবং কাউন্সেলিং এর মত পেশার সাথে জড়িত হচ্ছে।

সাধারণত আমরা ধারণা করি যে, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীরা শুধু প্রযুক্তিনির্ভর পেশার সাথেই জড়িত থাকবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে যে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীরা বহুদিকে ছড়িয়ে পড়ার মত দক্ষতা অর্জন করছে এবং তাদের মাঝে বিশাল একটি অংশ ভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমেরিকান কানেক্টেড টেকনোলজি কোম্পানি HARMAN এর সিইও দিনেশ পালিওয়ালের মত অনেকেই তাই বিশ্বাস করেন যে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের ফলে ক্যারিয়ারের বহু দরজা খুলে যায়, এবং শিক্ষার্থীদেরকে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার মত করে গড়ে তোলা উচিত। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপদ্ধতি শুধু তার বিষয়কেন্দ্রিক করে তৈরি করা হলেও গ্রাজুয়েটরা লিবারেল আর্টস তত্ত্বকে আপন করে নিচ্ছেন এবং ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন পথ বেছে নিচ্ছেন।

লিবারেল আর্টস শিক্ষা কি তা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক। লিবারেল আর্টস শিক্ষার দুটি প্রাথমিক লক্ষ্য রয়েছে। প্রথম লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে অনুধাবন করতে সাহায্য করা যে তারা কোন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পছন্দ করে। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের “Personal learning style” অনুধাবন করতে সাহায্য করার জন্য লিবারেল আর্টস শিক্ষাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে – ত্রিভিয়াম এবং কোয়াদ্রিভিয়াম। লিবারেল আর্টসের দ্বিতীয় প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞানপিপাসু হিসাবে গড়ে তোলা, যার ফলে তারা তাদের পছন্দের বিভাগে নিজ উদ্যোগে জ্ঞান অর্জন করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে।

সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিভিন্ন রকম চাহিদা এবং মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া লিবারেল আর্টসের অন্যতম লক্ষ্য। লিবারেল আর্টস শিক্ষাপদ্ধতি নিশ্চিত করে যেন একজন মানুষের জ্ঞান শুধু তার পেশাগত জীবনের মাঝেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সমাজের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। লিবারেল আর্টস শিক্ষাপদ্ধতি কোনো নির্দিষ্ট এক দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ না দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায় যেন তারা সমাজে সহজভাবে জীবন ধারণ করতে পারে।

লিবারেল আর্টসের সমৃদ্ধ ইতিহাস থেকে জানা যায় যে মধ্যযুগেও এই শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। রোমান সম্রাজ্যের সময়ে লিবারেল আর্টস শিক্ষাব্যবস্থা জনপ্রিয়তা লাভ করে। ল্যাটিন লেখক মার্টিনাস ক্যাপেয়া খ্রিস্টাব্দ ৫ম শতাব্দীতে ৭ প্রকার লিবারেল আর্টস তৈরিতে অবদান রাখেন। এই সাত লিবারেল আর্টস হলো – সঙ্গীত, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা এবং অলংকারশাস্ত্র (rhetoric)। এদের মাঝে সঙ্গীত, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতি এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানকে একত্রে বলা হতো কোয়াদ্রিভিয়াম এবং ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা ও অলংকারশাস্ত্রকে বলা হত ত্রিভিয়াম। মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ত্রিভিয়ামের মাঝে যুক্তিবিদ্যা অধিক গুরুত্ব লাভ করতো। তবে ইউরোপে রেনেসাঁস যুগে এই ব্যবস্থা পাল্টে যেতে থাকে এবং ত্রিভিয়ামকে নতুন নামকরণ করা হয় - Studiahumanitatis।

আধুনিক যুগে লিবারেল আর্টস শিক্ষাব্যবস্থায় যেসকল বিষয় সাধারণত অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা হলো – আর্টস (ফাইন আর্টস, মিউজিক, লিটারেচার), গণিত, সাইন্স, ফিলোসফি, রিলিজিয়াস স্টাডি এবং সোশ্যাল সাইন্স।

প্রযুক্তির ব্যবহার অবিশ্বাস্য গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশনের মত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো আমাদের যোগাযোগব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের কাজ সহজ করে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের জীবনধারায় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। গোটা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও প্রযুক্তি নির্ভর যুগের দিকে দ্রুত এগিয়ে চলছে। ফলাফল হিসাবে এখন ঘরে ঘরে বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ও ইলেকট্রিক ডিভাইসের দেখা মিলছে। মোবাইল ফোনের কল্যাণে প্রযুক্তি মানুষের পকেটেও প্রবেশ করেছে।

যোগাযোগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে ইতোমধ্যেই গোটা পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি জনগণ ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে মাত্র ২৫ বছর আগে ইংলিশ কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট টিম বার্নার্স-লি আবিষ্কৃত এই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। আজ পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশেও ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী দেশের ৮৭ শতাংশ পরিবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এছাড়া, ৩ কোটিরও বেশি পরিবারের কাছে ন্যূনতম একটি মোবাইল ফোন রয়েছে। এছাড়া টেলিভিশন রয়েছে দেশের ৪৬ শতাংশ পরিবারের ঘরে, কম্পিউটার ৫.৭ শতাংশ এবং ইন্টারনেট সংযোগ ৪.৮ শতাংশ পরিবারের ঘরে রয়েছে। তবে মানুষ কি এমন প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে অভ্যস্ত হতে পেরেছে?

প্রযুক্তির আগমনের সাথে সাথে আমাদের সমাজ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, পরিবর্তনের এই গতির সাথে সমাজের বৃহৎ একটি অংশ খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। সকলের সুবিধার্থে এবং সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রযুক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা উচিত যা সমাজের কাছে “গ্রহণযোগ্য” বলে মনে হয়।

লিবারেল আর্টস শিক্ষার্থীরা চাকরিক্ষেত্রে কতটা সফলতা পাচ্ছে তা নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য র‍্যানডাল স্ট্রসের “A Practical Education: Why Liberal Arts Majors Make Great Employees.” এবং জর্জ অ্যান্দ্রেয়ার “You Can Do Anything: The Surprising Power of a ‘Useless’ Liberal Arts Education”। উভয় বইয়ের লেখক দাবি করেন যে টেক সেক্টরে চাকরির চাহিদা পূরণ করতে শিক্ষার্থীদেরকে লিবারেল আর্টসের শিক্ষা সহায়তা করছে। টেক সেক্টরে চাকরির সুযোগ সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে – প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, রিক্রুটমেন্ট, হিউম্যান রিলেশন, ডাটা অ্যানালাইসিস, মার্কেট রিসার্চ, ব্র্যান্ডিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন লোকদেরকে খোঁজ করা হচ্ছে যারা সমাজের মূল্যবোধ সহজে উপলদ্ধি করতে পারছে এবং মানুষের সাথে সহজে মিশতে পারছে। উপরে উল্লেখিত দুই বইয়ের লেখকের মতানুসারে বিভিন্ন দেশের চাকরির বাজারে লিবারেল আর্টসের ছাত্রদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে তাদের বইয়ে এটিও উল্লেখ আছে যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে পাশ করে বের হওয়ামাত্রই চাকরি পাওয়া সম্ভব হয় না। তাদেরকে কিছুটা সময় চাকরি খোঁজার চেষ্টায় ব্যয় করতে হয় এবং সেই সময়টুকুতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হয়।

লিবারেল আর্টস শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে যেসকল দক্ষতা শেখানোর চেষ্টা করা হয় সেগুলো হলো –
    ১. বেসিক রিডিং, রাইটিং আর স্পিকিং স্কিল (যা সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার দক্ষতা দেয়)
    ২. ইতিহাস সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষা (যা সমাজের অতীত সম্পর্কে জ্ঞান দেয় এবং সমাজের মূল্যবোধ উপলদ্ধি করতে সাহায্য করে)
    ৩. ফাইন আর্টস সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষা
    ৪. বেসিক ম্যাথম্যাটিকসের শিক্ষা
    ৫. বেসিক সাইন্স শিক্ষা

এটা সত্যি যে নন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের খুব বেশি সাইন্স এবং ম্যাথ শেখার প্রয়োজন নেই, তবে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে চাকরি বা ব্যবসাক্ষেত্রে অনেক কাজই প্রযুক্তির সহায়তায় করতে হয়। তাই সাইন্স এবং ম্যাথে সাধারণ শিক্ষা থাকলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা নিউক্লিয়ার রি-অ্যাকশন সম্পর্কে কথা বলার মত জ্ঞান তারা অর্জন করতে পারবে। সেই সঙ্গে ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইসে সমস্যা হলে তারা বুঝতে পারবে যে সমস্যাটা কোথায় হয়েছে এবং এটা মেরামত করার জন্য কোন মেকানিকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা।

প্রযুক্তি, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের জন্য এখন শুধু প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাই যথেষ্ট নয়, বরং প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনধারা এবং চাহিদা কিভাবে বদলে যাচ্ছে তাও বুঝতে হবে। নন-টেকনিক্যাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ফলে ইঞ্জিনিয়ারদেরকে নন-ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে সমন্বয় করে কাজ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদেরকে শুধু টেকনিক্যাল জিনিসই শেখানো হবে না বরং তাদেরকে এমন এক পরিবেশে কাজ করার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হবে যা প্রযুক্তির আধিপত্য থাকবে। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য লিবারেল আর্টস শিক্ষার সাথে মিলে যায়।

এদের মাঝে প্রথম লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে নন-ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সাথে শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করা। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাঠ্যসূচি বিস্তৃত করতে হবে। যেমন- ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদেরকে কমিউনিকেশন, সিগন্যাল প্রসেসিং, সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসসহ বেশ কিছু বিষয়ে সাধারণ ধারণা দেওয়া হয়। আন্ডারগ্রাজুয়েট পাস করা একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং তখনই হয়তো জটিল মেশিন বানাতে পারবে না, তবে তার কাছে বেসিক শিক্ষাটা থাকবে যার ফলে সে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে সক্ষম হবে এবং নিজের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারবে। বাস্তবতা হলো অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী আন্ডারগ্রাজুয়েটের পর ভিন্ন দিকের ক্যারিয়ার বেছে নেয়। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে, অনেকে সাহিত্য, মেডিকেল প্রফেশন, প্যাটেন্ট ল’ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ে তোলে।

ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদেরকে অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের শিক্ষা দেওয়া হলে তারা পেশাগত জীবনে তাদের ক্যারিয়ার বিভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োসাইন্সের মাঝে সমন্বয় গড়ে তোলা। বর্তমান সময়ে মানুষ তার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করার জন্য যন্ত্রের উপর নির্ভর করছে। এই নির্ভরতা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বিশেষ করে বায়োমেডিকেল হেলথ প্রফেশনে প্রযুক্তির ব্যবহার চোখে পড়ার মত। নিখুঁতভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য অহরহ বিভিন্ন ধরণের টেস্ট করা হয়।

তৃতীয় লক্ষ্য হলো প্রযুক্তির ফলে সমাজ কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা উপলদ্ধি করা এবং সেই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া। বর্তমানে বেশ কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে যা অদূর ভবিষ্যতেই আমাদের জীবন ধারা বদলে দিতে পারবে। মানুষের সাথে যন্ত্রের যোগাযোগ আরো সহজ করার লক্ষ্যে কিবোর্ডের ব্যবহার উঠে যেতে পারে। ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি এবং অগমেন্টেড রিয়্যালিটির ফলে পৃথিবীতে আমাদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারে, স্মার্ট ডিভাইস ঘরের মাঝেই মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তা পাঠিয়ে দিতে পারবে হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে। ফলে প্রাপ্ত তথ্য দেখে ডাক্তার বিশ্লেষণ করতে পারবে যে কেউ অসুস্থ হয়েছে কিনা। সেই ফলাফল ডাক্তার পাঠিয়ে দিতে পারবেন রোগীর কাছে। এই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে অসংখ্য কোম্পানি। একজন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীকে বুঝতে হবে যে এই প্রযুক্তিগুলো কিভাবে আমাদের সমাজকে বদলে দিতে পারবে এবং তার ফলে কোন কোন জিনিসের চাহিদা সৃষ্টি হবে তা উপলদ্ধি করে সেভাবে প্রস্তুত হতে হবে। সময়ের চাহিদার ফলেই বিশ্বব্যাপী ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে লিবারেল আর্টস শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে।

প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন: ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ(ইউল্যাব)। সহযোগিতায়: মোঃ শাকিফ ফেরদৌস এবং খায়রুন নাহার।


বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।