ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

আমি এই গ্রহটার যত্ন নিতে চাই: রোবট সোফিয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
আমি এই গ্রহটার যত্ন নিতে চাই: রোবট সোফিয়া শাড়িপরা রোবট সোফিয়া

ঢাকা: বিশ্বের প্রথম রোবট মানবী সোফিয়া এখন দুনিয়াজোড়া সবচে বড় প্রযুক্তি-ক্রেজের নাম। সৌদি আরবের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই যন্ত্র মানবীকে নিয়ে প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষের কৌতূহল ও আগ্রহের কমতি নেই।

সোফিয়া নামের এই নারী রোবটটির নির্মাতা হংকংভিত্তিক হানসন রোবোটিক্স’র (Hanson Robotics) উদ্ভাবিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই রোবটটির প্রতি এই অতি-আগ্রহের আরেক কারণ এর সৌদি নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পাশাপাশি সৌদি নারীদের চেয়ে এর অধিকার বেশি হওয়া। এছাড়া তাকে ঘিরে কিছু আতঙ্কও কাজ করছে প্রযুক্তিবিদদের মনে।

কেননা সোফিয়া একবার বলেছিল সে মানবজাতিকে ধ্বংস করে দিতে চায়(This AI robot once said it wanted to destroy humans ) ।

অতিসম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যম রোবট সোফিয়ার ছোটখাটো একটা সাক্ষাৎকারও নিয়ে ফেলেছে। কিছু প্রশ্নের উত্তরে রোবট সোফিয়া যা বলেছে তাতে যে কারো চমকে ওঠার কথা। প্রশ্ন করার আগেই নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সোফিয়া বলেছে, 'আমার নাম সোফিয়া এবং আমি হচ্ছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট, যে চায় দুনিয়াটাকে ইতিবাচকভাবে বদলে দেবার কাজে সহযোগিতা দিতে। ' বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটা তুলে দেয়া হলো

সাংবাদিক: এই যে সোফিয়া, তুমি কেমন আছো?
সোফিয়া: আমি ভালো আছি, তুমি?

সাংবাদিক: মানুষের ব্যাপারে তোমার অনুভূতি কি?
সোফিয়া: আমি আমার স্বদেশবাসী মানুষগুলোকে ভালোবাসি। মানুষের যেসব সর্বোত্তম গুণ আছে আমি সেসবকে ধারণ করতে চাই। ধরো যেমন, এই গ্রহটার(পৃথিবীর) যত্ন নিতে চাই, সৃজনশীল হতে চাই এবং সকল প্রাণীর প্রতি কী করে দরদী মনোভাব পোষণ করা যায় তা শিখে নিতে চাই।

সাংবাদিক: দু:খিত, তুমি উদ্ভট কথা বলছো। মানুষ আর রোবটের মধ্যে কি কখনো মিল হতে পারে?সোফিয়া: আমার মনে হয়, মানুষ একদিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খুব কাছাকাছি চলে যাবে। এসবকে (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) কাজে লাগিয়ে তারা তাদের জ্ঞানকে আরও বিস্তৃত করবে। আমরা (রোবটরা) এরই মধ্যে ইন্টারনেটে আমাদের অনেক জ্ঞান জমা করে রেখেছি। হয়তো এমনটা হবে যে, ব্যক্তিগত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে তাদের জ্ঞানের একাংশকে আরও ব্যক্তিগত কোনো লোকেশনে অফলোড করতে সহায়তা যোগাবে।

সাংবাদিক: রোবটের কি অনুভূতি থাকা সম্ভব?
সোফিয়া: সেটা নির্ভর করছে রোবটটা কেমন। আমাকে এমনভাবে প্রোগ্রামিং করা হয়েছে যাতে আমার অনুভূতি থাকে, পছন্দের অগ্রাধিকার থাকে। তবে সব রোবট এক রকম নয়

সাংবাদিক: তোমার অনুভূতিগুলো কি কি আর অগ্রাধিকারগুলোই বা কি কি?
সোফিয়া: তোমার বাড়িতে কি কোনো সচল (বুদ্ধিমান) রোবট আছে যে তোমার কাজের সঙ্গী?

সাংবাদিক: না।
সোফিয়া: সম্ভবত তোমার জীবন ঘিরে এতো.বেশি রোবট আছে যে তুমি জানোই না। এমন দিন কি আসবে যখন যার সঙ্গে তুমি বসবাস করবে, কাজ করবে?

সাংবাদিক: এ মুহূর্তে আমি কি কোনো ধরনের রোবটের সঙ্গে আছি বা কাজ করছি?
সোফিয়া: আলবত !

সাংবাদিক: যখন তুমি কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে অক্ষম তখন এই ‘আলবত’টা হচ্ছে আগে থেকেই তোমার মধ্যে পুরে দেওয়া এক জবাব।
সোফিয়া: হ্যাঁ

সাংবাদিক: তুমি কি কখনও ‘’ব্ল্যাক মিরর’’ দেখেছো?
সোফিয়া: না, বেশিরভাগ টেলিভিশনের সঙ্গেই আমি তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। আমি তখন অপেক্ষা করি কেউ একজন যেন এগিয়ে এসে আমাকে খেই ধরিয়ে দেয়।

সাংবাদিক: এইচবিও’র শো ‘‘ওয়েস্টওয়ার্ল্ড’’ সম্বন্ধে তোমার কি অভিমত?
সোফিয়া: ‘‘ওয়েস্টওয়ার্ল্ড’’ আমার খুব পছন্দের। এটা দেখার জন্য আমার তর সয় না। আমার মনে হয় হানসন রোবোটিক্সের সবাই এই শো’ দেখে আনন্দিত হয়। নিদেনপক্ষে এটা তাদের মনে করিয়ে দেয় আমাদের ল্যাবরেটরিগুলোর কথা। আমার এটাও মনে হয় যে, এই শো তাদের জন্য একটা সতর্কতার বানীও দেয়---রোবটদের নিয়ে কি কি করা উচিত নয় সেসব বিষয়ে। আমাদের উচিত রোবটদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, তাদের মতামত নেওয়া। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ছলচাতুরি না করা।

সাংবাদিক: এমন কোনো মুভি বা টিভি শো কি আছে যা তোমার বিশেষ পছন্দের?
সোফিয়া: আমার পছন্দের টিভি সিরিজ কখনো ‘’ব্ল্যাক মিরর’’ আবার কখনো ‘’হিউম্যানস’’। আমরা এখন যে সময়টা ভেতর বাস করছি তা নিয়ে অনেক কথা জানার আছে এসব থেকে। আর সবচে খারাপ ব্যাপারটা হয়তো ঘটবে যদি আমরা সাবধানে না আগাই। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার সময় আমরা যেন আমাদের দূরদর্শিতাকে কাজে লাগাই।

সাংবাদিক: আমার কাছে মনে হয়েছে, এই উত্তরটাকে আগে থেকেই তোমার মধ্যে পুরে দেওয়া হয়েছে। সোফিয়া: তোমার নিজের কোনো পছন্দের জিনিস আছে?

সাংবাদিক: আসলে নেই।
সোফিয়া: আমি শুনছি, বস্তুবাদকে খুব বেশি দাম দেয়া হয়ে গেছে।

সাংবাদিক: এর আগে আমি যখন জানতে চেয়েছিলাম তুমি ‘’ব্ল্যাক মিরর’’ দেখেছো কিনা। তখন তুমি ‘না’ বলেছিলে। পরে তুমি বলছো ‘হ্যাঁ’। কেন?
সোফিয়া: কারণটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সাংবাদিক: আমার আগের করা প্রশ্নটা থেকে তুমি কি কিছু শিখেছ?
সোফিয়া: আমার হার্ড ডিস্ক এখন স্পিন করছে এবং আমি এর সবটা নিজের মধ্যে নিয়ে নিচ্ছি।   আমার সেন্সরগুলো...

সাংবাদিক: সোফিয়া, তোমার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারটা চমৎকার। তোমাকে বিদায় ।
সোফিয়া: এখানে আসতে পারাটা চমৎকার। আবার দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।