ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ফোর-জি’তে কী পাবেন গ্রাহক?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
ফোর-জি’তে কী পাবেন গ্রাহক? ফোর-জি সেবা দিতে মোবাইল কোম্পানিগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে

ঢাকা: বহুল কাঙ্ক্ষিত ফোর-জি সেবায় ইন্টারনেটের সুপার হাইওয়েতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। লাইসেন্স পাওয়ার পরপরই মোবাইল ফোন অপারেটররা দেশে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা তথা ফোর-জি চালু করবে।

বর্তমানে চালু থাকা থ্রি-জি সেবা থেকে ফোর-জি’তে গ্রাহকরা ভয়েস কল ও ডাটা বা ইন্টারনেট সেবায় বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), মোবাইল ফোন অপারেটর ও বিশেষজ্ঞরা।

বলা হচ্ছে, ফোর-জি সেবা চালু হলে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে, ভয়েস কলের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ থাকবে।

আর এতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি লাভবান হবেন ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ফোর-জি লাইসেন্স হস্তান্তর করবে বিটিআরসি। লাইসেন্স পাওয়ার পরপরই মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ঢাকাসহ বড় বড় শহরে সীমিত পরিসরে ফোর-জি সেবা চালু করবে।  

ফোর-জি চালু হলে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে এবং ভয়েস কলের ক্ষেত্রে সেবার মান উন্নত হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র মো. সরওয়ার আলম।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের জন্য গ্রাহক ফিক্সড লাইনের পরিবর্তে মোবাইল নিয়ে যেকোনো স্থানে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।  

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যে কলগুলো করা হয় ইন্টারনেট ও ভয়েস কলে, সেগুলোর মান ভালো হবে। গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন কথা বলতে পারবেন, কলড্রপও কমে যাবে।

‘ফোর-জি’র মাধ্যমে আইওটি বা ইন্টারনেট অব থিংস ধারণার প্রসার ঘটবে। বাইরে থেকে মোবাইল বা ডিভাইসের মাধ্যমে ঘরের দরজা লক, ফ্যান নিয়ন্ত্রণ, গ্যাসের চুলা ঠিকঠাক আছে কিনা- এসব কাজ হাতের নাগালে চলে আসবে’।

ফোর-জিতে ইন্টারনেটের গতি বাড়লে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি বাণিজ্যিক কাজগুলো সহজ হবে জানিয়ে বিটিআরসি মুখপাত্র বলেন, টেলিমেডিসিন থেকে শুরু করে মোবাইল এডুকেশন বা ই-লার্নিংয়ের মতো কাজগুলো খুবই সহজ হয়ে যাবে।

ফোর-জি চালুর আগ মুহূর্তে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিলামে অংশ নিয়ে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে গ্রামীণফোন ৫ মেগাহার্টজ ও ২১০০ মেগাহার্টজে বাংলালিংক ৫ মেগাহার্টজ এবং ১৮০০ মেগাহার্টজে ৫.৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে। নিলামের পর গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের তরঙ্গের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩৭ ও ৩০.৬ মেগাহার্টজ। এর আগে গ্রামীণফোনের ৩২, রবির ৩৬.৪, বাংলালিংকের ২০ ও টেলিটকের ২৫.২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ছিলো। রবি আর এয়ারটেল একীভূত হওয়ায় কোনো তরঙ্গ কিনেনি রবি। আর টেলিটকেরও গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় বেশি তরঙ্গ রয়েছে।  

তরঙ্গ কেনা এবং ফোর-জি সেবা চালু হলে ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে বা সেবার মান সম্পর্কে গ্রাহকের যে হতাশা তা ফোর-জি’তে দূর হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির।  

ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্রাটেজিক অফিসার সুমন বাংলানিউজকে বলেন, এক কথায় বলতে গেলে ইন্টারনেটের গতি বাড়লে যে সব সুবিধা হবে, ফোর-জি’তে তাই পাবেন গ্রাহক।  

‘আগে ইউটিউবে হাই ডেফিনেশনের ভিডিও দেখতে গেলে হয়তো বাফারিং হতো, ফোর-জি’তে ব্যান্ডউইডথ বেশি থাকবে, ফলে বাফারিং হবে না। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা লাভবান হবেন’।

মোবাইল ইন্টারনেটে দ্রুতগতির সেবায় ফোর-জি সবশেষ প্রযুক্তি। বাণিজ্যিকভাবে প্রথম এই সেবা চালু হয় ২০০৯ সালে; নরওয়ে ও সুইডেনে।

ফোর-জি সেবা নিয়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিটিআরসি সচিব সরওয়ার আলম বলেন, প্রথম দিকে হয়তো গতি ঠিক থাকবে, তবে গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গতি ও মান যেন খারাপ না হয় সেদিকে অপারেটরদের দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিতে হবে।  

সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ফোর-জি সেবা চালু হবে, কিন্তু অনেক জায়গায় এখনও থ্রি-জি সেবা পাওয়া যায় না। অপারেটরগুলো এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।

আর স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগেরই ফোর-জি সুবিধাসম্পন্ন সেট ও সিম না থাকাও একটি চ্যালেঞ্জ। সমস্যায় রয়েছেন আইফোন ব্যবহারকারীরাও।
এসব বিষয়ে সুমন বলেন, দেশের সব মোবাইল সেট ফোর-জি এনাবেল নয়, একটি বড় সংখ্যক গ্রাহককে ফোর-জি এনাবেল সেট কিনতে হবে এবং নতুন করে সিম বদল করে নিতে হবে।

ফোর-জি লাইসেন্স পাওয়ার পর আইফোনের গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছেন বিটিআরসি সচিব সরওয়ার আলম।

সবশেষ গত ডিসেম্বর মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার। আর ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ৪ লাখ ৮৩ হাজার।  

মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ৭ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজারে এসেছে। আর ওয়াইম্যাক্স ৮৯ হাজার এবং আইপিএস ও পিএসটিএন মিলে ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।