ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ই-ফাইলিংয়ে শীর্ষে ইআরডি-আইএমইডি, অনাগ্রহ পররাষ্ট্রের

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
ই-ফাইলিংয়ে শীর্ষে ইআরডি-আইএমইডি, অনাগ্রহ পররাষ্ট্রের

ঢাকা: ই-নথি বা ই-ফাইলিং ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি কার্যক্রমকে আরও সহজতর করার একটি সফটওয়্যার সিস্টেম। এর মাধ্যমে সরকারি দফতরের সব কাজ অনলাইনভিত্তিক করা হয়। 

এখন সব ধরনের দাফতরিক কাজ অনলাইনে করা হচ্ছে যেমন-বেতন, বিল, বাজেট প্রণয়ন, চিঠিপত্র ব্যবস্থাপনা। ডাকের পরিবর্তে এখন অনলাইনে এসব কার্যক্রম দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে।

এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অফিসে উপস্থিত না হয়েও দাফতরিক কাজ মোবাইলের মাধ্যমে ই-নথি অ্যাপ ব্যবহার করে করা যায়। তবে এ ব্যবস্থাপনায় এখনও অনেক মন্ত্রণালয় উদাসীন আবার অনেক মন্ত্রণালয়-বিভাগে ব্যাপক সাড়া মিলেছে।
 
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-ফাইলিং কার্যক্রমকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ই-নথি কার্যক্রমে বড় ক্যাটাগরিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), মধ্যম ক্যাটাগরিতে শীর্ষ স্থান দখল করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।  এছাড়া ছোট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
 
তবে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ই-ফাইলিং কার্যক্রমে কোনো আগ্রহ নেই। যেমন- একই সময়ে একটি কাজও ই-ফাইলিংয়ে সম্পন্ন করেনি পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন ও বিচার বিভাগ। গত সেপ্টেম্বরের প্রথমদিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত ই-নথির সর্বশেষ আপডেটে এ তথ্য উঠে এসেছে।
 
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে এ হিসাব করা হয়। প্রথম ক্যাটাগরিতে সাতটি, দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ১৪টি এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে ৩৭টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরিতে ইআরডি, দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে আইএমইডি এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রথম হয়েছে।
 
ই-ফাইলিংয়ে বড় ক্যাটাগরিতে শীর্ষে ইআরডি। সেপ্টেম্বর মাসে এ বিভাগ ২ হাজার ৮৫৮টি ই-ফাইল নিষ্পত্তি করেছে। এরপরেই রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৭৫৫টি ই-ফাইল নিষ্পত্তি করেছে। তবে একটিও ই-ফাইল নিষ্পত্তি করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সময়ে ১৫৪টি  ই-ফাইল আদান প্রদান করে এই মন্ত্রণালয়। ই-ফাইল কার্যক্রমে বেহালদশা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। ১২৮টি ই-ফাইল আদান-প্রদান করলেও নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৮টি।
 
সূত্র জানায়, ই-ফাইলিংয়ে মধ্যম ক্যাটাগরিতে শীর্ষে আছে আইএমইডি। সেপ্টেম্বর মাসে এই বিভাগ ৪ হাজার ৭৩৫টি নথি অনলাইনে আদান-প্রদান করেছে। এরমধ্যে নথি নিষ্পত্তি করেছে ৪ হাজার ৬২৪টি। এরপরেই রয়েছে সুরক্ষা বিভাগ। এ বিভাগ অনলাইনে ৩ হাজার ৫৭১টি নথি আদান-প্রদান করেছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি করেছে ৩ হাজার ২৮৩টি।
 
মধ্যম ক্যাটাগরিতে সেপ্টেম্বর মাসে আইন ও বিচার বিভাগ একটি নথিও অনলাইনে নিষ্পত্তি করেনি। ই-ফাইলিং কার্যক্রমে বেহালদশা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনেও (ইসি)। মাত্র আটটি নথি ই-ফাইলিং কার্যক্রমে এনেছে ইসি। এরমধ্যে অনলাইনে নিষ্পত্তি করেছে মাত্র দু’টি। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ৪৩টি নথি অনলাইনে আদান-প্রদান করেছে।
 
তবে ই-ফাইলিং কার্যক্রমে সফল আইএমইডি। কয়েক মাস ধরে ভালো অবস্থানে আছে আইএমইডি। গত আগস্টেও এই বিভাগ ভালো অবস্থানে ছিলো। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আইএমইডি’র সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে আমরা এই সফলতা অর্জন করেছি। সামনে যত দিন যাবে আইএমইডি’র অনলাইনে নথি আদান-প্রদান কার্যক্রম আরও বাড়বে। অনলাইনে নথি আদান-প্রদান একদিকে যেমন সময় সাশ্রয়ী তেমনি লাল ফিতার কোনো দৌরাত্ম্য নেই। দ্রুত সময়ে আমরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে পারি। সরকারি কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে ই-ফাইলিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
 
ই-ফাইলিংয়ে ছোট ক্যাটাগরিতে শীর্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়। সেপ্টেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় অনলাইনে ২ হাজার ৩৪২টি নথি আদান-প্রদান করেছে। এরমধ্যে নিষ্পত্তি করেছে ১ হাজার ৮৮২টি ই-ফাইল। এরপরেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৪৭০টি ই-ফাইল নিষ্পত্তি করেছে। এই ক্যাটাগরিতে শেষের দিকে আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এখানে একটিও ই-ফাইল নিষ্পত্তি হয়নি। তবে ৫৯৪টি ই-ফাইল কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। জন বিভাগ ৪২টি ই-ফাইল আদান-প্রদান করেছে, তবে নিষ্পত্তি করেছে মাত্র দু’টি। সেতু বিভাগের অবস্থাও ভালো নয়। এই বিভাগ ৭২টি ই-ফাইলে অংশ নিলেও নিষ্পত্তি করেছে ৭০টি।
 
বর্তমান সরকার ই-ফাইলিংয়ে জোর দিয়েছে। এখন অধিকাংশ টেন্ডারও ই-ফাইলিংয়ে চলে গেছে।
 
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় সেন্টাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) সংস্থাটি বর্তমানে অনলাইনে সরকারি কেনাকাটার (ই-জিপি) কার্যক্রম পরিচালনা করছে।  

সিপিটিইউ’র ডিজি ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থায় সংস্কার শুরু হয় ২০০২ সালে। ক্রয় কার্যক্রমে যুক্ত ৮০ শতাংশেরও বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ই-জিপির আওতায় চলে এসেছে। সামনে ই-জিপি কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে। এর ফলে যোগ্য মানুষ কাজ পাচ্ছে কোনো ঝামেলা ছাড়াই। ই-জিপি’র মাধ্যমে পেশি শক্তি প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এমআইএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।