ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

প্রয়োজনে পাশে ‘ডিএসই’

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯
প্রয়োজনে পাশে ‘ডিএসই’

ঢাকা: ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভার্চুয়াল ভাইরাসের মতো ঘিরে ধরছে আমাদের। দিনের বেশিরভাগ সময়েই আমরা ডুবে থাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার নেতিবাচক দিক থাকলেও এসব মাধ্যমের উপকারি এবং ইতিবাচক ব্যবহারে যে আশেপাশের মানুষের উপকার হয় তার নজিরও আছে বেশ। ফেসবুকভিত্তিক তেমনই এক উপকারি প্ল্যাটফর্ম ‘ডু সামথিং এক্সেপশনাল’ বা ডিএসই।

২০১৪ সালের মার্চে আশফাকুল ইসলাম নামের এক তরুণের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা পায় ডিএসই। তখন এর নাম ছিল ‘ডেসপারেটলি সিকিং এক্সপ্লিসিট’।

পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় ‘ডু সামথিং এক্সেপশনাল’। এর মধ্যে গ্রুপটির অ্যাডমিন প্যানেলে যুক্ত হন ইমন খান, জেবিন ইসলামসহ বেশ ক’জন।

ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ শুধু বিনোদনের জন্য খোলা হলেও ডিএসই গঠনমূলক বিষয়ে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দেয় সর্বাধিক।  

রক্তের শক্তি
ডিএসই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয় রক্তের প্রয়োজনে কাউকে সাহায্য করতে। রক্ত সন্ধানকারীকে দ্রুত রক্তের যোগান দিতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে একটি দল। গ্রুপ সদস্যদের মধ্যে থেকেই গঠন করা হয় দলটিকে। রক্তদাতা এবং রক্তগ্রহীতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনেও কাজ করে এই দল।  

ডিএসই গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমক্যারিয়ার ম্যাচ মেকিং
ডিএসই’র অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় উদ্যোগ হচ্ছে ‘ক্যারিয়ার ম্যাচ মেকিং’। চাকরিদাতা এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে এই উদ্যোগ। সাধারণত চাকরির বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চলন থাকলেও ডিএসইতে চাকরিপ্রার্থী চেয়েও পোস্ট করা হয়। ফলে আনুষ্ঠানিক চাকরির বিজ্ঞপ্তির বাইরে এখান থেকেও চাকরিদাতা খুঁজে পাচ্ছেন তার কর্মীকে।

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
ক্যারিয়ার ম্যাচ মেকিং ছাড়াও ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এবং মোটিভেশনাল বিভিন্ন বিষয়ে জোর দেয় ডিএসই। বিভিন্ন ধরনের পেশায় নিজ নিজ অবস্থানে সফল ব্যক্তিবর্গ হরহামেশাই ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শ দেন গ্রুপে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক শাব্বির আহসান মোটিভেশনাল লেখা এবং ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং নিয়ে বেশ জনপ্রিয় মুখ গ্রুপে। এছাড়া গ্রুপ সদস্যদের নিজেদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া অভিজ্ঞতাও উঠে আসে এখানে। গ্রুপ সদস্যদের জীবনের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে সংকলিত বই প্রকাশিত হয় গত বইমেলায়। ‘ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প’ নামের বই ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম শীর্ষ বিক্রিত বই ছিল। এছাড়া ক্যারিয়ার পরামর্শ এবং মোটিভেশন ঘরানার শাব্বির আহসানের ‘ভাইরে/আপুরে’ বইও ছিল বেশ পাঠকপ্রিয়।  

হারানো বন্ধুর খোঁজে
বাস্তবিক জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় ডিএসই এর ‘হারানো বন্ধুর খোঁজে’ উদ্যোগ। ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া বন্ধু তো বটেই, ডিএসই এর সাহায্যে হারানো বাবা-মা খুঁজে পাওয়ারও নজির আছে গ্রুপটিতে।  

মেডি হেল্প
গভীর রাতে কোনো স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন? অথবা কোনো রিপোর্টের অর্থ বুঝতে চাইছেন? অথবা প্রাথমিকভাবে কোনো মেডিক্যাল সমস্যার সমাধান চাইছেন? এসব কিছুর সমাধান পাওয়া যেতে পারে ডিএসই’তে। আর তাও বিনামূল্যে। সদস্যদের মেডি হেল্প দেওয়ার জন্য প্রফেশনাল চিকিৎসক আছেন গ্রুপে। শুধু চিকিৎসকেরাই সদস্যদের কোনো মেডি হেল্প পোস্টে সমাধান দিতে পারেন। বিষয়টি এতটা গুরুত্বের সঙ্গে তদারকি করা হয় যে, গ্রুপের কোনো সদস্য যদি পেশায় চিকিৎসক না হয়ে কোনো মেডি হেল্পে মন্তব্য করেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।  ‘ডু সামথিং এক্সেপশনাল’ গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমহোক প্রতিরোধ
যে কোনো ধরনের অন্যায় বা নিপীড়নের ঘটনায় ভিকটিমের সর্বাত্মক পাশে থাকার চেষ্টা করে ডিএসই। এ বিষয়েও ডিএসই’র একটি স্বেচ্ছাসেবী দল সর্বদা কাজ করে। বিশেষ করে আইন ও অপরাধজনিত সমস্যার সমাধানে কাজ করে গ্রুপটি। গত বছর গণপরিবহনে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়ে গেলে সচেতনতা বাড়াতে কাজ শুরু করে ডিএসই। রাজধানীর বিভিন্ন রুটের প্রায় হাজারখানেক বাসে ‘হোক প্রতিরোধ’ শীর্ষক স্টিকার লাগায় ডিএসই। জরুরি প্রয়োজনে হেল্পলাইন ৯৯৯-এ যেন বাসযাত্রীরা ফোন করেন, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্টিকারে উল্লেখ থাকে এই নম্বরের।  

নেটওয়ার্কিং
নেটওয়ার্কিং নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে কাজ না করলেও নেটওয়ার্কিং বা পরিচিতি বাড়ানোর দারুণ এক প্ল্যাটফর্ম ডিএসই। বিভিন্ন পেশায় কর্মরত এবং সফল ক্যারিয়ার গড়া স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ সদস্য হিসেবে আছেন এই গ্রুপে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সরকারি আমলা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আছেন এখানে। ফলে অনেকের জন্যই নেটওয়ার্কিংয়ের দারুণ এক সুযোগ আছে ডিএসই’তে।  

এছাড়া পথশিশুদের জন্য খাবার বিতরণ, ইফতার আয়োজন, রিকশাচালকদের জন্য রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সরব উপস্থিতি আছে ডিএসই’র।  গ্রুপটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে এর অ্যাডমিন জেবিন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন,  আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধানের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্য নিয়েই গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। খুব ছোটখাটো সমস্যা থেকে গুরুতর সমস্যা হলেও এর সমাধানে সম্ভাব্য উপায় কী কী হতে পারে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করাই এ গ্রুপের উদ্দেশ্য। সেখান থেকেই আজ গ্রুপের এমন ব্যাপ্তি। সেন্সরশিপে আমরা খুব কঠোর থাকি। এমনকি গ্রুপের সদস্য হওয়ার সময়েই আমরা একটি ফেসবুক আইডি ফেক কিনা সেগুলো যাচাই করে দেখি। কোনো পোস্ট থেকে বাহ্যিক যোগাযোগ হলে যেমন কেউ রক্ত চাইলো আর কেউ রক্ত দিতে গেল, কেউ চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিলো, সেখানেই কেউ সাক্ষাৎকার দিতে গেলো; এসব বিষয়ে আমরা গ্রুপ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেই। এভাবেই নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।