ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

‘মোবাইলের মতো সারাদেশে এক রেটে ইন্টারনেট পাবো না কেন?’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
‘মোবাইলের মতো সারাদেশে এক রেটে ইন্টারনেট পাবো না কেন?’ বক্তব্য রাখছেন মোস্তাফা জব্বার। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: মোবাইল কলরেটের মতো সারাদেশে একই মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, ইন্টারনেট কানেকটিভিটির ব্যাকহোলের মূল্য তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি একথা জানান।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ইন্টারনেট মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে জানিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, মেক্সিকোর সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ইন্টারনেট ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমাদের এখানে ৮০ ভাগ ইন্টারনেট সেবা চলে যায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবাদানের ক্ষেত্রে এখনো কোনো ট্যারিফ রেট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপারেটরগুলো ইচ্ছামতো দাম প্রয়োগ করতে পারে। ইন্টারনেটের দাম ও প্যাকেজের ভ্যালিডিটি ইচ্ছামতো করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখছি, ছয় জিবি ইন্টারনেট ভ্যালিডিটি মাত্র আট ঘণ্টা। আমি বুঝে নিয়েছি যে, এটা একমাত্র পর্ন দেখা ছাড়া আর কোনো কাজে লাগবে না। এখন কমপক্ষে তিনদিনের মধ্যে আসছে। আমি মনে করি, ট্যারিফ নির্ধারণ ও এই জায়গায় হস্তক্ষেপ করা খুবই জরুরি।  

এতদিন বেসরকারিখাতে মাত্র দু’টি এনটিটিএন সারাদেশে ব্যান্ডউইথ বিতরণ করতো জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান-রেলওয়ে তাদের নিজস্ব কাজে এনটিটিএন হিসেবে কাজ করে, পিজিসিবি তাদের নিজস্ব কাজে ব্যবহার করে বাড়তি কিছু সংযোগ ব্যবহার করতে দেয়। বিটিসিএল যদি ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে অবস্থা অনেক উন্নত হতে পারতো। বিটিসিএলে শক্তি-সামর্থ্য কোনোটার ঘাটতি নেই, কেবল প্রশাসনিক ঘাটতি ছাড়া। এরইমধ্যে আমরা আরও একটি এনটিটিএনের লাইসেন্স দিতে পেরেছি।

‘ঢাকা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত যে কানেকটিভিটি যাবে তার জন্য ব্যাকহোল ইন্টারনেট প্রাইসের সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু আমার বাড়ি তেঁতুলিয়া, সে কারণে আমার ইন্টারনেটের দাম বেশি হবে এটার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। আমি তেঁতুলিয়া থেকে মোবাইলে যদি একরেটে কথা বলতে পারি তাহলে ইন্টারনেটে কেন একই রেট পাবো না?’

মন্ত্রী বলেন, বিটিসিএল’কে একরেটে সারাদেশে সেবা দিতে নিশ্চিত করেছি। ব্যাকহোল প্রাইস যদি একটু পরিবর্তন করা যেতে পারে তাহলে ইন্টারনেটের প্রাইস ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে। আমি এটা করতে না পারলেও ৫৮৭টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ওয়াইফাই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি, যা ২০২০ সালের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। পাশাপাশি দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করেছি।

গোটা দেশকে ইন্টারনেট কাভারেজের আওতায় আনার পরিকল্পনা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ১২০৯টি ইউনিয়ন ছাড়াও আইসিটি বিভাগ থেকে ২৬০০ ইউনিয়নে কানেকটিভিটি দেওয়ার কাজ চলছে। ৭২৫টি দুর্গম অঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের আওতায় সংযোগ দিচ্ছি। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ দেশের কোনো ইউনিয়ন থাকবে না যা ফাইবার অপটিকের আওতার বাইরে থাকবে। এছাড়াও ৩১টি চর ও দ্বীপে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কানেকটিভিটি দেওয়া হচ্ছে।

কলরেটে ধাক্কা দিতে চান মন্ত্রী
এমএনপি সার্ভিসের জন্য ফ্ল্যাট রেট চালু হয়েছিল জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, এমএনপি সেভাবে সফল হয়নি। কারণ বিকল্প অপারেটর নেই। তবে ফ্ল্যাট রেট করার একটু দাম বেড়েছে। ছোট অপারেটরগুলোকে শক্তিশালী করলে এটি সমাধান হয়ে যাবে। বিকল্প দাঁড়িয়ে গেলে প্রাইসিংয়ের ক্ষেত্রে ধাক্কা দিতে পারবো। সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে জিপি। আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। এমএনপির জন্য ট্যাক্স তুলে দিতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।

তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারে ভারসাম্য তৈরির জন্য প্রয়োজন প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা তৈরি করতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয় কখনো কখনো। সে কারণেই যখন দেখা যায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়, তখন টিসিবি পেঁয়াজ আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে।

‘ঠিক একইভাবে আমরা চিন্তা করছি, আমাদের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটককে শক্তিশালী করা। ২০১৯ সালে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে আছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে ৩০ থেকে ৮২ শতাংশে দাঁড়াতে পারবো। ফলে লোড নেওয়ার ক্ষমতা দাঁড়িয়ে যাবে। ’

এসময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে গ্রামীণফোনের রিংটোনে ৩০ টাকা ৪২ পয়সার প্যাকেজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।   

বিনিয়োগে সাড়া
মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা যখন জিপি আর রবির সঙ্গে কথা বলি তখন বহুজন আমাদের বলেছে, বাংলাদেশ থেকে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট চলে যাবে। আপনাদের বলতে পারি, ফরেন ইনভেস্টমেন্ট চলে যাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো ফরেন ইনভেস্টমেন্টের চাপে পড়ে বসে আছি। আমার কাছে টেলিকম সেক্টরে কমপক্ষে ছয়টি দেশ থেকে ইনভেস্ট করার জন্য প্রস্তাব রয়ে গেছে। শুধু ইনভেস্ট না, কেউ কেউ আমাদের তাগাদা দিচ্ছে তোমরা তাড়াতাড়ি চুক্তি সই করছো না কেন। টেলিটক, সাবমেরিন ক্যাবল, ফাইভ-জিতে বিনিয়োগের প্রস্তাবনা আছে।

টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে গতিতে টাওয়ার নির্মাণ করার কথা তা করেনি। এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা বিষয়টা সিরিয়াসলি দেখছি।

লাইসেন্সের দেড়গুণ বেশি অবৈধ আইএসপি আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইএসপিগুলোকে পর্যালোচনা করে তাদের কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা আছে কি-না তা দেখা হবে।

‘আগামী ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের আয়োজনে ফাইভ-জি কীভাবে কাজ করে তা জানা যাবে। ’

ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যান্ডউইথের টাকা আদায় করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় টাকা কেউ মেরে দেবে, সেই অবস্থা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এমআইএইচ/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।