ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

স্থাপত্য শিক্ষায় কিছু অনলাইন টুলস

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২০
স্থাপত্য শিক্ষায় কিছু অনলাইন টুলস

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি বা কোভিড -১৯ এর বিস্তার আমাদের সবার জীবনকেই দুর্বিষহ করে তুলেছে যা এখন আর কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। মহামারি আকার ধারণ করা ব্যাধিটি বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়।

বড়-ছোট, নারী-পুরুষ,-ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবারই জীবনে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এলাকাভিত্তিক অনেক স্থানেই এই পরিস্থিতি এখন শিথিল করা হযেছে। অফিস আদালত উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছে। কিন্তু এই মহামারির মধ্যেও শিক্ষাক্ষেত্রে জীবন থেমে নেই, এগিয়ে চলছে বিশ্ব। চলছে অনলাইন ক্লাস, কুইজ আয়োজন, পরীক্ষাসহ নানা ধরনের ইন্টারনেট ভিত্তিক কার্যকলাপ। শুরু হয়েছিল অনলাইন টেকনলজি ভিত্তিক সরঞ্জাম বা টুলসের ব্যবহার যা ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রচলিত পড়ালেখার পাশাপাশি এসব টুলসের সাথে পরিচিতি শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন সম্পূর্ণভাবে নতুন তেমনিভাবে একজন শিক্ষকের জীবনেও জীবন চলার আরেকটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিজাইন স্টুডিও-শব্দটি স্থাপত্য বিষয়ক শিক্ষার্থীদের কাছে বহুল পরিচিত একটি বিষয় যা তাদেরকে ইমারত নকশা শিল্পের নানান মাধ্যম এবং প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুগ যুগ ধরে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসছে। বিল্ডিং মডেল তৈরি থেকে শুরু করে একটি বাড়ির প্রকল্প নির্মান এবং নকশা তৈরি করতে যে জ্ঞান প্রয়োজন তা এই কোর্সের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। কোভিড -১৯ এর কারণে স্বভাবতই এই ব্যবহারিক ক্লাসের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে এই স্টুডিও/ ল্যাব ক্লাসগুলো অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হচ্ছে। কোর্সের কন্টেন্টের সঙ্গে সঙ্গে কাজের প্রক্রিয়ায়ও এসেছে কিছু সীমাবদ্ধতা যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক টুলস বা অ্যাপের ব্যবহার বেড়ে উঠেছে। এরই মধ্যে কিছু অ্যাপ উপস্থাপনায়, আবার কিছু অ্যাপ ভার্চুয়াল ফিডব্যাক প্রদানে সহায়তা করছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপত্য বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আজ আমরা এমন ৫টি বিশেষ অনলাইন গুগোল টুলসের পর্যালোচনা করবো যা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং স্থাপত্য বিষয়ে উপকারী হতে পারে।

উল্লেখ্য, নিম্নোক্ত জি-স্যুট  বহির্ভুত বিভিন্ন অ্যাপ বিশ্লেষণ করেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেতে পারে।

গুগল মিট (Google Meet): এমন অবস্থায় যেখানে মুখোমুখি আলোচনা করতে অক্ষম, সেখানে গুগোল মিট- অ্যাপটি অত্যন্ত কার্যকরী। ভিডিও কল এর মত এখানেও রয়েছে নানান সুবিধা যাতে করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, আলোচনা করা কিংবা উপস্থাপন করা সম্ভব। একাধারে ২৫০ জন এই অ্যাপে সংযুক্ত হতে পারে এবং স্ক্রিন শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে একটি অনলাইন ক্লাসরুমের পরিবেশ তৈরি করা যায়। শিক্ষক এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য বা লিংক সরবরাহ করে ক্লাস পরিচালনা করতে পারেন। উপরন্তু কিছু এক্সটেনশনের সহায়তায় লেআউট পরিবর্তন করা ছাড়াও ক্লাস রেকর্ডিংয়ের সুবিধাও রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপকারী। এক কথায় ভিডিও কনফারেন্সিং জন্য দুর্দান্ত একটি টুল গুগল মিট।

গুগল স্লাইড (Google Slide): ডিজাইন ক্লাস- এ ছাত্রছাত্রীদের সাপ্তাহিক অথবা দৈনিক কাজ শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করার আরেকটি বিশেষ অনলাইন টুল গুগোল স্লাইড। মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টের সঙ্গে সাদৃশ্যতা থাকার পাশাপাশি এখানে একটি ফাইল একাধারে কয়েকজন ব্যবহার করতে পারে যা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরবর্তীতে ফাইলটি পুনরায় ব্যবহার করা যায় যা গুগল ড্রাইভ-এ সংরক্ষণ হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের গ্রুপ প্রোজেক্ট এর ক্ষেত্রে গুগল স্লাইড এর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া স্থাপত্য শিক্ষার্থীদেরদের পোর্টফলিও বানানো এবং উপস্থাপনা বা প্রেজেন্টেশান করা সম্ভব গুগল স্লাইডে।

জ্যামবোর্ড (Jamboard): এই নামটি অনেকের কাছে নতুন হতে পারে। জ্যামবোর্ড অ্যাপটি জি-স্যুট এর অন্তর্ভুক্ত যা ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত করা হয়। মুলত এটি ভার্চুয়াল হোয়াইট বোর্ড হিসেবে কাজ করে।   অ্যাপটির ইন্টারফেস এর কিছু অংশ গুগোল স্লাইড এর মত যার মধ্যে একটি সাদা সিট থাকে। ব্যতিক্রম হল এই অ্যাপে একই সাথে অনেকজন এক্সেস করে লিখা বা ড্রয়িং এর মাধ্যমে নিজের কাজ পরিবেশন করতে পারে। অ্যাপের অন্তর্ভুক্ত পেন কিংবা লেজার টুল ব্যবহার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের পক্ষে ড্রয়িং উপস্থাপন করা সম্ভব যা ইন্টার‌্যাক্টিভ (interactive) ক্লাস হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। একই সময়ে একই ফাইল আলাদা ডিভাইসে দুই বা ততোধিক জন প্রবেশ করলে একজন যা লিখবে বা আকবে, তা সরাসরি অপরজন দেখতে পারবে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে একে বুঝাতে হয় এবং সেক্ষেত্রে এই অ্যাপটি কার্যকরী। স্থাপত্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রুপ প্রোজেক্ট এবং অনলাইন ঝুড়িতে টুলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমানে জ্যামবোর্ড টুলকে এর প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে গুগোল মিট এ সরাসরি সংযুক্ত করা হয়েছে।

গুগল সাইট (Google site): এটি অনেকটা ওয়েবপেজ ডিজাইন স্বরূপ কাজ করে। এখানে মূলত বিচিত্র ধরনের তথ্য একত্র করে সমষ্টিগত ভাবে প্রকাশ্যে পরিবশন করা যায়। একই সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ লিখা অথবা কোন ভিডিও আপলোড করে রাখা সম্ভব। গুগোল স্লাইডকে এখানে সংযুক্ত কিংবা লিংক করে দেওয়া যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টেশনের জন্য এই অ্যাপটি খুবই উপযোগী। শিক্ষার্থীরা নিজের টার্মের সব কাজকে সৃজনশীলতার সঙ্গে এখানে উপস্থাপন এবং ভার্চ্যুয়াল প্রদর্শনী তৈরি করতে পারে।

গুগল ক্লাসরুম (Google classroom): গুগল ক্লাসরুম অ্যাপে অনলাইন ক্লাসের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন করা যায়। এই অ্যাপে শিক্ষক তার বিষয়ের একটি ক্লাস শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে খুলে নিতে পারে, যেখানে পরবর্তীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী্দের নিয়মিত কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের ডিজাইন অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান, ডিজাইন প্রোজেক্টের শিক্ষাসামগ্রী, প্রয়োজনীয় লিংক প্রদান এমনকি ক্লাস ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে নিজেদের চিন্তাধারনা শেয়ার করা যায়। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাকে সহজসাধ্য করতে গুগল ক্লাসরুমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লেকচারার স্থপতি  আহমেদ ইনজামাম চৌধুরী

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২০
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।