ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনলাইনে বাড়ছে পশু কেনাবেচা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২১
অনলাইনে বাড়ছে পশু কেনাবেচা

ঢাকা: ঈদুল আজহা যত ঘনিয়ে আসছে তত বাড়ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশু কেনাবেচার হার। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২৫ হাজার পশু বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।

আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির আগের কিছুদিন এই বিক্রির হার আরও বাড়বে।

আগামী ২১ জুলাই বাংলাদেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই উৎসবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন। এজন্য পশু কেনাবেচা করতে দেশজুড়েই হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতার ব্যাপক উপস্থিতি থাকে।

তবে ২০২০ সালে করোনার প্রাদুর্ভাব আঘাত হানার পর থেকে অনলাইনে কেনাবেচার হার বাড়তে থাকে। যদিও মোটামুটিভাবে ২০১৫ সাল থেকে দেশে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। তবে গত বছর থেকে অনলাইনে পশু কেনাবেচা নিয়ে ক্রেতা, খামারি ও বিক্রেতা এবং ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২ জুলাই থেকে অদ্যাবধি প্রায় এক হাজার ২৭৭টি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছয় লক্ষাধিক পশু বিক্রির জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭৩৭ কোটি টাকারও বেশি।

অধিদপ্তর আরও বলছে, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে পশু বিক্রির সংখ্যা বাড়ছে। ২ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় চার হাজারের বেশি গড়ে প্রায় ২৬ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। তবে ৮ থেকে ১০ জুলাই সেই গড় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজারে। এই তিন দিনেই পশু বিক্রি হয় ৭৪ হাজারেরও বেশি।

অনলাইনে পশু কেনাবেচার অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন মাধ্যম বিক্রয় ডট কমে সাত হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী হুমায়রা শারমিন আলম বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের প্ল্যাটফর্মে প্রায় সাত হাজার পশু বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ এর অধিক পশু বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের ঠিক আগের কিছুদিন এই হার আরও বাড়বে। গত বছর আমরা গরু ও ছাগল মিলিয়ে মোট দুই হাজার ৮৫টি পশু বিক্রি করেছিলাম।

আরেক ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ই-বাজারে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি পশু বিক্রির জন্য বুকিং দিয়েছেন গ্রাহকরা।

প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার এইচ এম তরিকুল কামরুল বলেন, আমাদের ইভ্যালি ও ই-বাজার প্ল্যাটফর্মে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি পশু বুকিং দিয়েছেন ক্রেতারা। ঈদের আগে আগে তারা যখন ডেলিভারি নেবেন তখন পুরো টাকা পরিশোধ করবেন। এই সময়ে পশুর যাবতীয় পরিচর্চা ও পশু গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।

অনলাইনে পশু কেনাবেচার চাহিদা ও জনপ্রিয়তার জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নতুন করে এই ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে।  

প্রোটিন জাতীয় পণ্য কেনার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রোটিন মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আমরা এবারই প্রথম কোরবানির পশু বিক্রির জন্য অনলাইনে প্রদর্শন করছি। সাধারণত প্রোটিন মার্কেট থেকে গ্রাহকরা গরু, খাসি বা মুরগির মাংস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে গ্রাহকের কাছে ডেলিভারি করা হয়। গত ৫ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টির মতো খাসি বুকিং পেয়েছি আমরা। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়েই পশু বুকিং দেওয়া যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রথমবার হিসেবে অন্তত ২০০ পশু আমরা বিক্রি করে সফলভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো। গ্রাহকদের পশু আমরা হোম ডেলিভারি করছি। তারা চাইলে কোরবানি করে কাটা মাংস ডেলিভারি করতে পারবো আমরা। পশুর লাইভ ওজন অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। খাসির ক্ষেত্রে প্রতিকেজি ৬২০ টাকা।

এদিকে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এবার সরকারিভাবেও অনলাইনে পশুর কেনাবেচা জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব এর সঙ্গে মিলে রাজধানীতে পশু কেনাবেচার জন্য ‘ডিজিটাল হাট’ চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেই হাটটিকেই আবার দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘দেশব্যাপী ডিজিটাল হাট’ নামের এই প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশ এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ মাথা উচু করে দাঁড়াবে। এই ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে একদিকে বিক্রেতারা ন্যায্যমূল্য পাবেন অন্যদিকে ক্রেতারা পাবেন সঠিক পশু ক্রয়ের নিশ্চয়তা। হাটে না গিয়ে নিজেকে নিরাপদ রেখে ঘরে বসে কোরবানির পশু পাওয়ার এই সুবিধা আমরা পাচ্ছি কারণ বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে কাজ করছে। আজ আমরা যদি ডিজিটালি সক্ষম না হতাম তাহলে এই হাটের মাধ্যমে মানুষকে আজ এতটা সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়তো কঠিন হয়ে যেতো।   

পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশু কেনাবেচাকে দেশের সর্বত্র আরও জনপ্রিয় করতে বুধবার (১৪ জুলাই) দেশে সব বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে অনলাইনে সভা করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিম।

এবারের ঈদুল আজহায় দেশজুড়ে এক কোটি ১৯ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। তার মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ পশু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এবার এক কোটি ১৯ লাখ পশুর মধ্যে অনলাইনে অন্তত ২৫ শতাংশ পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি। সেই হিসেবে প্রায় ২৪ লাখ পশু অনলাইন থেকে বিক্রি হতে পারে। শহর এলাকার বাইরে উপজেলা পর্যায়েও অনলাইনে কেনাবেচা হচ্ছে। আমাদের ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত ২৪১টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের লিংক দেওয়া রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে যেন সেখানকার লোকেরা অনলাইন থেকে কিনতে পারেন। এজন্য মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তাদের সাহায্য নিতে পারেন। করোনা পরিস্থিতি যেভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে, আমরা সবাইকে উৎসাহ দিচ্ছি যেন অধিকসংখ্যক পশু অনলাইনে বিক্রি হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২১
এসএইচএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।