ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্রিটেনের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বছর ছিল ২০২২

মেহেদি হাসান শিপন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
ব্রিটেনের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বছর ছিল ২০২২

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আসীন ছিলেন তিনি।

বিশ্বের প্রবীণতম রানিও এলিজাবেথ। তার সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছরে ব্রিটেনে ১৬ জন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন।

দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলে যুক্তরাজ্যের শেষ প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস। উইনস্টন চার্চিলের জন্ম ১৮৭৪ সালে, আর লিজ ট্রাসের জন্ম ১৯৭৫ সালে। অর্থাৎ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলের প্রথম ও শেষ প্রধানমন্ত্রীর বয়সের ব্যবধান ১০১ বছর।

যুক্তরাজ্যের ২০২২

আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদযাপনের মধ্য দিয়ে ২০২২ সাল শুরু করেছিল যুক্তরাজ্য। বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সিংহাসনে অভিষেকের ৭০ বছর পূর্তি হয় ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের।

আবার, একই বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ রাজশাসনের এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের ইতি ঘটে দেশটিতে।

রাজপরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে এলাকার সেইন্ট পল গির্জায় রানির মরদেহ সমাহিত করা হয়। তার আগে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবনের ওয়েস্টমিনস্টার হলে তার মরদেহ চারদিনের জন্য রাখা হয়।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দায়িত্বগ্রহণ

১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাবা রাজা জর্জ মারা গেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন এবং কমনওয়েলথের প্রধান হন। যুক্তরাজ্যসহ ১৫টি কমনওয়েলথভুক্ত দেশ ও অঞ্চলের আলংকারিক প্রধান ছিলেন তিনি।

এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চার সন্তান। তারা হলেন— বর্তমান রাজা চার্লস; প্রিন্সেস অ্যান; ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রু এবং আর্ল অব ওয়েসেক্স যুবরাজ এডওয়ার্ড।

সারা বিশ্বে যখন ব্রিটেনের প্রভাব ক্রমশ কমেছে, সমাজে আমূল পরিবর্তন এসেছে, রাজতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তখনও অনেকের কাছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি। ব্রিটেনের সিংহাসনে নিজ কর্তৃত্বে তিনি অটল থেকেছেন।

১৯৫৩ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয় দ্বিতীয় এলিজাবেথের। তার সিংহাসনে আরোহণ ও শপথ গ্রহণ লাখ লাখ মানুষ দেখেন টেলিভিশনের পর্দায়। যুদ্ধের পর ব্রিটেন তখন কঠিন অর্থনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার অভিষেককে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল ‘নতুন এলিজাবেথান যুগ’ হিসেবে।

দায়িত্ব পালন

৭৪ বছরের বিবাহিত জীবনে রানি এলিজাবেথ বেশির ভাগ সময়ই ব্যস্ত থেকেছেন রাজকীয় দায়িত্ব পালনে। রানিকে তার রাজকীয় দায়িত্ব পালনে সাহায্য করতেন প্রিন্স ফিলিপ। রানি তার রাজকীয় নিয়মের কর্মপরিধির বাইরেও সক্রিয় ছিলেন নানাবিধ সেবা ও মানবিক কাজে। পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ছয় শতাধিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র, অর্থাৎ কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর রানি ও রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন। এছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কমনওয়েলথ অব নেশনসের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ আরও ৫১টি দেশ এ সংস্থা অন্তর্ভুক্ত। মূলত ব্রিটিশরা পূর্বে যেসব দেশ শাসন করেছে, তারাই এ সংস্থার অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডেরও প্রধান ছিলেন।

এদিকে সিংহাসনে অভিষেকের ৭০ বছর পূর্তি ব্রিটেনে ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হয়। উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ৯৬ বছর বয়সী রানি নিজেও। লাঠিতে ভর দিয়ে তাকে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল।

আয়োজন ছিল ‘ট্রুপিং দ্য কালার’ (ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের জন্মদিন উদযাপন) কুচকাওয়াজ, গান স্যালুট, বিমানের ফ্লাইপাস্ট, কনসার্ট, আলোকশিখা জ্বালানোসহ নানা কিছু। এছাড়া, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর রাজধানীতে মশাল জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু

সাত দশকের বর্ণিল অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে চলতি বছরের গত ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ব্রিটেনের রাজপরিবারের প্রধান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ৯৬ বছর বয়স্ক রানি বার্ধক্যজনিত শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

রানির শেষযাত্রা

এদিকে ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ। যুক্তরাজ্যজুড়ে ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। ঘোষণা করা হয় একদিনের সরকারি ছুটি। ব্রিটেনজুড়ে ১২৫টি সিনেমা হলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শেষ পর্ব।

রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের সম্রাট নারুহিতো ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২ হাজারেরও বেশি রাষ্ট্রনেতা যোগ দেন।

রাজা হলেন চার্লস

রানির মৃত্যুর পর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের সেন্ট জেমসেস প্যালেসে ঐতিহাসিক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জকে দেশটির নতুন রাজা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৬ মে তার অভিষেক লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হবে।

মূলত মা দ্বিতীয় এলিজাবেথের মুকুট পরার প্রায় ৭০ বছর পর ২০২৩ সালের মে মাসে মাথায় মুকুট পরবেন রাজা তৃতীয় চার্লস। আর এর মাধ্যমেই নতুন এই ব্রিটিশ রাজার রাজত্বের সূচনা চিহ্নিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।