ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মোবাইল ফোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা বললেন আবিষ্কারক কুপার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৩
মোবাইল ফোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা বললেন আবিষ্কারক কুপার

মোবাইল ফোনের সমস্যা হলো লোকজন বেশি পরিমাণে এর ওপর নজর রাখে। এই কথা বলেছেন ৫০ বছর আগে মোবাইলের আবিষ্কারক মার্টিন কুপার।

 

এই আমেরিকান প্রকৌশলীকে বলা হয় মোবাইল ফোনের জনক। তিনি বলেন, আমাদের পকেটে থাকা ছোট এই যন্ত্রটির অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। একদিন এই যন্ত্র রোগ নিরাময়েও ব্যবহৃত হতে পারে।  

৯৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ক্যালিফোর্নিয়ায় ডেল মারে নিজের অফিসে এএফপির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার দেন। খবর এনডিটিভি।

তিনি বলেন, যখন কাউকে রাস্তা পার হওয়ার সময় সেলফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি, আমি বিধ্বস্ত হয়ে যাই। তারা আনমনে হয়ে থাকে।  

মজা করে তিনি বলেন, কিন্তু কিছু লোক গাড়ির ধাক্কা গেলে তা হয়তো বুঝতে পারবে।  

কুপারের হাতে ছিল অ্যাপলের একটি স্মার্টওয়াচ। তিনি সর্বশেষ মডেলের আইফোন ব্যবহারকারী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে থাকতে তিনি ভালোবাসেন।  

তিনি বলেন, আমার নাতি-নাতনি ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এবং করবে, তা হয়তো কখনো আমি বুঝতে পারব না।  

কুপার তার আইফোনটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কথা বলতে ব্যবহার করে থাকেন। ১৯৭৩ সালে তার তৈরি মোবাইল ফোন থেকে সেটি অনেক আলাদা। তখন কুপার মটোরোলার হয়ে কাজ করতেন।  

মোবাইল তৈরির প্রকল্পে মটোরোলা তখন বিশাল বিনিয়োগ করেছিল যাতে বেল সিস্টেমকে হারানো যায়। ১৮৭৭ সালের পর থেকে এক শতাব্দী পর্যন্ত এই কোম্পানির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল।  

বেলের প্রকৌশলীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেলুলার ফোন সিস্টেম নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে তারা গাড়িতে ফোন সংযুক্ত করতে সক্ষম হন। এই ধরনের ফোনে বিশাল আকারের ব্যাটারির প্রয়োজন হতো।  

কুপারের জন্য এটি সত্যিকারের মোবিলিটি ছিল না। ১৯৭২ সালের শেষ দিকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করবেন যেটি যেখানে-সেখানে ব্যবহার করা যাবে।

সেমিকনডাক্টর, ট্রানজিস্ট্র, ফিল্টার, অ্যান্টেনা নিয়ে কাজ করা কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে তিনি তিন মাস কাজ করেন। মার্চের শেষে তিনি ডায়নাট্যাক- ডায়নামিক অ্যাডাপটিভ টোটাল এরিয়া কভারেজ ফোন আবিস্কার করেন।

কুপার বলেন, সেই ফোনের ওজন ছিল এক কেজিরও বেশি- প্রায় আড়াই পাউন্ড। এতে ব্যবহার করা ব্যাটারিতে ২৫ মিনিট কথা বলা যেত।  

তিনি বলেন, এটি ছিল একটি সমস্যা। ফোনটি ছিল খুব ভারী। ২৫ মিনিট সময় ধরে রাখা ছিল অসম্ভব।  

প্রথম কলটি খুব বেশি সময়ের জন্য ছিল না।  

কুপার তার প্রতিদ্বন্দ্বী বেল সিস্টেমের ড. জোয়েল এনজেলকে কল করে বলেন, আমি নিউইউর্কে সিক্সথ এভিনিউয়ে দাঁড়িয়ে আছি। জোয়েল, আমি মার্টিন কুপার বলছি... আমি হাতে ধরা সেলফোন নিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলছি। এই সত্যিকারের সেলফোন নিজস্ব, বহনযোগ্য এবং হাতে ধরার উপযোগী। অন্যপাশে ছিল নীরবতা। আমার ধারণা ছিল তিনি দাঁতে দাঁত চেপেছিলেন।  

প্রথম মোবাইল ফোন সস্তা ছিল না। প্রতিটি হ্যান্ডসেটের দাম ছিল প্রায় পাঁচ হাজার ডলার। ধীরে ধীরে মোবাইল ফোন মানুষের জীবন উন্নত করতে থাকে। তিনি বলেন, এখন মোবাইল ফোন ব্যক্তির সংযোজিত অংশ হয়ে উঠেছে। এটি এখন অনেক কিছুই করতে পারে।  

তিনি বলেন, আমরা শুরুতে আছি। বুঝতে শুরু করেছি, এটি কী করতে পারে। আমি আশা করতে পারি, ভবিষ্যতে সেল ফোন শিক্ষা ও রোগ নিরাময়ে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এই কথা হয়তো বেশি মনে হতে পারে। আমি আপনাকে জানাতে চাই, আগামী এক বা দুই প্রজন্মের মধ্যে আমরা রোগকে জয় করতে যাচ্ছি।  

কুপার মনে করেন, মোবাইল ফোন শরীরের বিভিন্ন সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত হবে। রোগ বাসা বাঁধার আগেই এটি ধরা পড়বে।  

তিনি বলেন, আমরা জানতাম একদিন সবার হাতে মোবাইল থাকবে। আমরা সেই দিনের একেবারে কাছাকাছি। আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।  

নতুন প্রযুক্তি সবসময় নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। কুপার বলেন, যখন টেলিভিশন প্রথম এলো, তখন এটি লোকজন এতে ডুবে গিয়েছিল। তবে কোনো না কোনোভাবে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, এর নির্দিষ্ট ব্যবহার আছে। এখন আমরা মোবাইল ফোনে ডুবে আছি। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।  

প্রতিটি প্রজন্মই আধুনিকতর হয়। তারা শিখে যাবে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে ফোন ব্যবহার করতে হয়। মানুষ এখন নয়তো পরে ঠিক তা বুঝতে পারবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।