ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১০

US Russia

পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ গতকাল বৃহস্পতিবার একটি চুক্তি সই করেছেন। চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির অনুযায়ী দু’দেশ তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে একমত হয়েছে।



দীর্ঘকালের প্রতিপক্ষ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে নতুন এ চুক্তি। এছাড়া পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনে উৎসাহী দেশগুলোও এ চুক্তির ফলে তাদের পরিকল্পনা বাদ দিতে চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ‘ফ্রেন্ডস অ্যান্ড পার্টনার’ সূত্র ধরেই ওবামা এগোচ্ছিলেন মস্কোর দিকে। তাই ঠিক এক বছর আগে প্রাগে এক বক্তৃতায় পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে মেদভেদেভের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও দৃঢ় করেছেন। চেক রাজার প্রাসাদে ১০ বছর মেয়াদী এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তাই এ প্রসঙ্গে মেদভেদেভের কথা উল্লেখ করে বারাক ওবামা বলেন, ‘তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা এবং শক্তিশালী নেতৃত্বের সহায়তা না পেলে আজ আমরা এখানে মিলিত হতে পারতাম না। ’

এ চুক্তির আওতায় দেশ দুটি নিজস্ব ভূখণ্ডের বাইরে অন্য কোথাও পারমাণু অস্ত্র বহন কিংবা মোতায়েন করবে না। কমিয়ে আনবে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং তা বহন ও উৎক্ষেপণে ব্যবহৃত লাঞ্চার প্লেন, সাবমেরিন, সাইলো এবং স্থলযানের সংখ্যা। দু’দেশের বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চুক্তিটি অনমোদিত হলে উভয় পক্ষ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা এক হাজার ৫শ ৫০টি এবং উৎক্ষেপকের সংখ্যা ৮ শ’র মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। একে অপরের অস্ত্রাগার পরিদর্শনের বিষয়টি আগের চুক্তিতে থাকলেও রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অবনতির ফলে তা বন্ধ আছে। নতুন এ চুক্তিতে দেশ দুটি একে অপরের অস্ত্রাগার পরিদর্শনের ব্যাপারেও একমত হয়েছে। তবে চুক্তিতে ইরানের পরমাণু শক্তি প্রসঙ্গসহ স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়ের মতবিরোধ মীমাংসা করা হয়নি।

সময় ক্ষেপণ না করে মার্কিন সিনেট এবং রুশ পার্লামেন্ট চুক্তিটি দ্রুত অনুমোদন করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুই নেতা। আর তা হলেই ‘দূরপাল্লার মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি’ -১ (স্ট্র্যাটিজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি- ১) এর স্থলাভিষিক্ত হবে নতুন এই চুক্তি। তবে রাশিয়া হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, চুক্তি অনুমোদনে গড়িমসি কিংবা ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র বাদ না দিলে তারা এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্ট্রার্ট ১ -এর মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।

স্বাক্ষরের পর দুই প্রেসিডেন্ট পরমাণু নিরাপত্তা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নে এ চুক্তির গুরুত্বের কথা জোর গলায় তুলে ধরেন। তাছাড়া চুক্তিটি দ্রুত কার্যকর করার জন্য উভয় পক্ষেই সন্তোষজনক কাজ হচ্ছে বলে জানান তারা।

চুক্তি সইয়ের পর ওবামা বলেন, ‘পরমাণু নিরাপত্তা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক সূচিত হলো আজ। ’ দীর্ঘকাল সম্পর্কের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করা এ দেশ দুটি যৌথভাবে মানুষ ও পৃথিবীর জন্য কোনো ভ’মিকা পালন করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘কোনো বড় বিষয় নিয়ে এক সঙ্গে কাজ না করতে পারাটা আমাদের দুই দেশসহ বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক ছিল না। এখন একসঙ্গে কাজ করার লাভজনক দিকটি আমরা প্রমাণ করতে চাই। এ চুক্তি পারমানবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার দীর্ঘ পথের একটি পদক্ষেপ মাত্র। ’

অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ বলেন, ‘এটা সত্যিকারভাবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মাধ্যমে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। এই চুক্তির শর্তে আমরা কেউ কিছু হারাইনি। হারানোর কিছু নেই। আমরা দু’ পক্ষই জয়ী। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য এ চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ’
 


ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার ব্যাপারে দুই প্রেসিডেন্ট নিয়মিত সংলাপ চালিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে দুই পক্ষের অসম্মতি এবং অসঙ্গতিগুলো সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র পরিকল্পনা নিয়ে জোরালো আপত্তি আছে রাশিয়ার। এ বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কিংবা সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো তৎপরতা দেখলে মস্কো বর্তমান  চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াবে। অমীমাংসিত এ বিষয় নিয়ে প্রাগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে  ‘বৈশ্বিক পরমাণু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার প্রস্তাব করে বলেন, আমরা এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চাই। তিনি আরো বলেন, আমরা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। এখন বিষয়টি নিয়ে আমাদের কিছু বিশ্লেষন দরকার।

এ প্রসঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বারাক ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে তার মিসাইল পরিকল্পনা রাশিয়ার জন্য কোনো সমস্যা বয়ে আনবে না। দুই দেশের দুরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে বিকল্পহীন যে ভারসাম্য আমরা আনতে চাই প্রথমত তা খোলাসা করতে চাই, এটাই বড় কথা।

 

ইরান প্রসঙ্গ

বারাক ওবামার পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরান। আর তাই দেশটির পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, ‘ইরান মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে কোনোভাবেই তা সহ্য করা হবে না। ’

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টও বলেন, ‘তেহরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা অন্ধ চোখে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। ’

সম্প্রতি পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোচিত হচ্ছে ইরান। দুরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ব্যাপারে দেশটিকে সন্দেহ করা হলেও ইরান বলছে, তার পারমাণবিক কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ কাজের জন্য।



(‘গ্লোবাল মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম’- পরমাণূ প্রতিরক্ষার একটি বৈশ্বিক পদ্ধতি)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।