ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৫ রমজান ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

লিথিয়াম-সালফার প্রযুক্তিতেই সৌদি আরবের বাজি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৫
লিথিয়াম-সালফার প্রযুক্তিতেই সৌদি আরবের বাজি

বিরল ধাতু নিয়ে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেনের মধ্যেই টানাপোড়েন চলেছে, এমন কিন্তু নয়। গত পাঁচ বছরে পৃথিবীজুড়েই বিরল মৌল বিশেষ করে লিথিয়ামের চাহিদা তিনগুণ বেড়ে গেছে।

২০৩৫ সাল পর্যন্ত এই চাহিদা বছরে ১৫ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

লিথিয়াম থেকে লাভ তুলতে থেমে নেই সৌদি আরবও। ২০২৪ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিতে লিথিয়ামের চাহিদা ২০ গুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্ধিত এই পরিমাণ লিথিয়াম ৫ লাখ বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি এবং ১১০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট।

জার্মান লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি স্টার্টআপ থিওনের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ম্যাথিয়াস ফেংলার সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, লিথিয়ামের ব্যাটারির স্থানীয় উৎপাদন সৌদি আরবের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে পারে এবং ক্লিন এনার্জি মার্কেটে দেশটির ভূমিকা জোরদার করতে পারে।

ফেংলার জানিয়েছেন, সৌদি আরব তার বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমদানি করা কাঁচামালের উপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে, উৎপাদন খরচ কমাতে পারে। এমন পরিকল্পনা সৌদি আরবের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনা, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং ক্লিন এনার্জি খাতে দক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে।

তিনি বলেন, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিস দ্রুতই পরিবর্তিত জ্বালানির একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, যেখানে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান লিথিয়াম উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠছে, যা বিশ্বমানের ব্যাটারি উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ফেংলার বলেন, স্থানীয় লিথিয়াম প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা এবং সালফার-ভিত্তিক ব্যাটারি প্রযুক্তির উন্নয়ন সৌদি আরবকে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক দুটি বাজারের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী করে তুলছে। এই খাতে বিখ্যাত সৌদি তেল কোম্পানি আরামকো এবং মাইনিং কোম্পানি মা'আদেনের অংশীদারিত্ব দেশটিতে লিথিয়াম উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করছে।

আরামকো এবং মা'আদেন গত জানুয়ারিতে ঘোষণা করেছে যে তারা সৌদি আরবে খনিজ পদার্থ অনুসন্ধান এবং খনি স্থাপনের জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ চালু করবে। এক্ষেত্রে নতুন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়ামের মতো ধাতু উত্তলনই মূল লক্ষ্য। স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে সৌদি আরবে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে সালফার বেইজড ব্যাটারি উৎপাদনকারী থিওন। সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ এর মতো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যেও এমন পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করেন ফেংলার।

থিওন কোম্পানির লিথিয়াম-সালফার প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল, এর দাম কম কিন্তু স্থায়িত্ব বেশি। প্রচলিত ব্যাটারির চেয়ে লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারিতে সালফার ব্যবহার করা হয়। উপাদানটি সহজে পাওয়া যায় বলে তা পরিবেশের জন্য ভালো। এটি পুনরায় ব্যবহার করার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো যাবে। আর সৌদি আরবের বাড়তে থাকা লিথিয়াম উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে সালফার পুনর্ব্যবহারের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দেশটিকে ব্যাটারি শিল্পের পাওয়ারহাউস করে তোলা সম্ভব বলে মনে করছে থিওন।

নতুন এই ব্যাটারি সেল প্রচলিত ব্যাটারির তুলনায় তিনগুণ বেশি বিদ্যুৎ জমিয়ে রাখতে পারবে। যা বৈদ্যুতিক যানবাহনের উন্নয়নে গতি আনবে, বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় বাড়াবে, এমনকি বৈদ্যুতিক আকাশযানের উদ্ভাবনকে বাস্তব রূপ দেয়ার সুযোগ করে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫ লাখ ইলেকট্রিক যানবাহন উৎপাদনে সৌদি আরবের পরিকল্পনার সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সৌদি আরবের সম্প্রতি চালু হয়েছে কিং সালমান অটোমোটিভ ক্লাস্টার। ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির ওই প্রতিষ্ঠানটি এই খাতের উন্নয়নে দেশটির প্রতিশ্রুতির আরেকটি প্রমাণ। স্থানীয়ভাবে তৈরি ইলেকট্রিক বাহনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি যুক্ত করার ফলে দীর্ঘ ড্রাইভিং রেঞ্জ পাওয়া যাবে, খরচ কমবে।  

সূত্র: আল আরাবিয়া নিউজ

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৫
এমএইচ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।