যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। শনিবার তারা বিক্ষোভ করেন।
‘হ্যান্ডস অফ’ শীর্ষক ওই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যসহ মোট এক হাজার ২০০ স্থানে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেন। বোস্টন, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন শহরে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।
বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলো। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিনসহ বেশ কয়েকটি শহরে সংহতি জানিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বোস্টনে অনেক বিক্ষোভকারী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অভিবাসন বিভাগের অভিযানই মূলত মূলত তাদের রাস্তায় নামতে উদ্বুদ্ধ করে। এই অভিযানের ফলেই যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আইনের শিক্ষার্থী কেটি স্মিথ বিবিসি নিউজকে জানান, তিনি বিক্ষোভে অংশ নিতে উৎসাহিত হন তুরস্কের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুরকের ঘটনার কারণে। গত মাসে বোস্টন এলাকার টাফটস ইউনিভার্সিটির কাছ থেকে মুখোশধারী মার্কিন এজেন্টরা রুমেইসাকে গ্রেপ্তার করে। সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
লন্ডনে বিক্ষোভকারীরা নানা রকম ব্যঙ্গাত্মক ও প্রতিবাদী বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নামেন। তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— লোকজনকে কষ্ট দেওয়া বন্ধ করো, সে একজন বোকা— যা ট্রাম্পের নীতির প্রতি তাদের ক্ষোভ ও হতাশা স্পষ্ট করে তোলে।
বিক্ষোভকারীরা ‘হ্যান্ডস অফ কানাডা’, ‘হ্যান্ডস অফ গ্রিনল্যান্ড’ এবং ‘হ্যান্ডস অফ ইউক্রেন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন, যা ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করে।
ট্রাম্প বারবার কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়েছেন এবং ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় আসতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতাদের বক্তৃতা শোনার জন্য জড়ো হন। বেশিরভাগ বক্তৃতায় ট্রাম্প প্রশাসনে ধনী দাতাদের, বিশেষ করে এলন মাস্কের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। মাস্ক প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে ব্যয় ও ফেডারেল কর্মীসংখ্যা অত্যন্ত বেশি পরিমাণে কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীদের জন্য একটি কঠিন সপ্তাহ কেটেছে। গত মঙ্গলবার রিপাবলিকানরা ফ্লোরিডার বিশেষ কংগ্রেসনাল নির্বাচনে জিতলেও তারা যা আশা করেছিলেন, তার চেয়ে কম ভোট পান।
উইসকনসিনে ভোটাররা ডেমোক্রেটিক একজন বিচারককে সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচিত করেন এবং মাস্ক-সমর্থিত রিপাবলিকান প্রার্থীকে প্রায় ১০ শতাংশ পয়েন্টে পরাজিত করেন। দুই রাজ্যেই ডেমোক্রেটরা ভোটারদের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি এবং এলন মাস্কের প্রতি ক্ষোভকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন।
ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেটি ট্রাম্পের গলফ খেলার জায়গার কাছাকাছি ছিল। কিছু জরিপে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমোদন রেটিং একটু একটু করে কমছে।
শনিবার ট্রাম্প কোনো প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান করেননি এবং পুরোদিন ফ্লোরিডার নিজের রিসোর্টে গলফ খেলে কাটিয়ে দেন। রোববারও গলফ খেলার কথা ছিল তার।
হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের অবস্থান সমর্থন করে একটি বিবৃতি দিয়েছে, যাতে বলা হয়েছে তিনি স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। বিবৃতিতে ডেমোক্রেটদের প্রধান হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ট্রাম্পের শীর্ষ অভিবাসন উপদেষ্টা টম হোমান শনিবার ফক্স নিউজকে জানান, বিক্ষোভকারীরা তার নিউইয়র্কের বাড়ির সামনে একটি সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন। তবে সে সময় তিনি ওয়াশিংটনে ছিলেন।
মিনেসোটার সেন্ট পলে বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে উল্টো করে একটি আমেরিকান পতাকা উড়িয়ে দেন, যা প্রতিবাদের একটি পরিচিত প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৫
আরএইচ