রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত সহ্যই করতে পারতেন না ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার সরকার - এ কথা সবারই জানা। সাবেক বন্দি, বিরোধী মতাবলম্বী এবং তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, হাসিনার সমালোচনা করলে কোনো ধরনের চিহ্ন ছাড়াই ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকতো।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে অনেক ‘আয়নাঘর’ বা গোপন টর্চারসেলের সন্ধান মেলে। শত শত বন্দির মুক্তি মেলে তখন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাথর ছোঁড়া দূরত্বেই সন্ধান মেলে আয়নাঘরের। সেখানের গোপন কক্ষগুলোর একটিতে দীর্ঘ আট বছর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমকে। কারাগারে বেশিরভাগ সময়েই চোখ বেঁধে রাখা হতো তার। তবে বিমান অবতরণের শব্দ শুনতে পেতেন তিনি। তার বর্ণনা থেকে তদন্তকারীরা বিমানবন্দরের খুব কাছে নির্মিত সেই আয়নাঘর আবিষ্কার করেন।
আয়নাঘরের সন্ধানে তদন্তকারীরা যখন একটি বড় ভবনের পেছনে একটি নবনির্মিত দেয়াল দেখেন, তখন তাদের সন্দেহ হয়। দেয়ালটি ভাঙার পর তারা একটি সরু করিডোর আবিষ্কার করেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল সেই করিডরে। একটু সামনে এগিয়ে তারা দেখলেন করিডরের বাইরে ডানে ও বামে ছোট ছোট জানালাবিহীন বেশ কয়েকটি কক্ষ। সেখানের একটিতে আটকে রাখা হয় ব্যারিস্টার কাসেমকে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বোঝাই যাচ্ছিল ইটের তৈরি নতুন দেয়াল ছিল এই আয়নাঘরকে দৃষ্টির আড়ালে রাখার অপচেষ্টা। এমনভাবেই ঘরগুলো লুকিয়ে রাখা হয়েছিল যে, সেখানে দীর্ঘবছর অন্তরীণ থাকা মীর আহমদ বিন কাসেমের স্মৃতির সহযোগিতা না নিলে হয়তো তারা কখনও এই গোপন কারাগার খুঁজে পেতেন না।
তদন্তকারীরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রাস্তার ওপারে খুঁজে পাওয়া গোপন কারাগারটি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) - এর কিছু সদস্যদের দিয়ে পরিচালিত হতো, যারা সরাসরি হাসিনার নির্দেশে কাজ করছিলেন।
ব্যারিস্টার কাসেম ধীরে ধীরে কংক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে একটি ভারী ধাতব দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেন। একটু মাথা নিচু করে আরেকটি সরু দরজা দিয়ে একটা কুঠুরিতে প্রবেশ করেন।
বিন কাসেম জানিয়েছিলেন যে, তাকে যে সেলে রাখা হয় তার টাইলসগুলো ছিল হালকা নীল। তার কথার সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা ওই সেলে গিয়ে দেখেন, মেঝেতে টুকরো টুকরো নীল টাইলস পড়ে আছে। নিচতলার সেলগুলির তুলনায় ওই সেলটি অনেক বড়, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট। এর একপাশে একটি বসার টয়লেট রয়েছে।
মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নীল টাইলসগুলো অনুসরণ করে কাসেম তদন্তকারীদের নিয়ে যান যেখানে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। টর্চের আলোয় দেখা গেলে, কাসেমকে রাখা হয়েছিল যেই কক্ষটিতে সেটা এত ছোট যে, একজন সাধারণ মানুষের সোজা হয়ে দাঁড়াতে কষ্ট হবে। আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল সেখান থেকে। তদন্তকারীরা কিছু দেয়াল ভাঙা এবং ইট ও কংক্রিটের টুকরো মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। তারা জানান, অপরাধের প্রমাণ নষ্ট করার শেষ চেষ্টা হয়েছিল আয়নাঘরটিতে।
চল্লিশ বছর বয়সী এই আইনজীবী প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে আয়নাঘরে তার বন্দিদশার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলেন।
তিনি তদন্তকারীদের জানান, এই কক্ষেই তাকে আট বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। ঘরটিতে ছিল না কোনো জানালা বা এমন কোনো ছিদ্র ছিল না যা দিয়ে দিনের আলো প্রবেশ করতে পারে। আলো দেখতে না পারায় কাসেম দিন-রাতের পার্থক্য বুঝতেন না তিনি।
বিবিসিকে আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘এভাবেই আটটা বছর বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। মনে হচ্ছিল জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল আমাকে। গ্রীষ্মকালে অসহ্য গরম ছিল। মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম এবং যতটা সম্ভব দরজার নিচে মুখ রাখতাম, যাতে কিছুটা বাতাস পাওয়া যায়। ’
ব্যারিস্টার কাসেম বলেন, আমাদের বন্দিদশার কষ্টকর সময়গুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত। পাশাপাশি যাদেরকে খুন করা হয়েছে তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাসহ যারা বেঁচে আছেন তাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করতে আমাদের সব চেষ্টা করা উচিত।
(আয়নাঘরে বন্দির জীবন) এটা মৃত্যুর চেয়েও খারাপ লাগার অনুভূতি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আটকের পর আমাকে প্রথম ১৬ দিন একটা স্থানে আটকে রাখা হয়। এরপর পুরো আটক জীবন র্যাব ঘাঁটিতেই কাটিয়েছি।
তদন্তকারীদের সন্দেহ, কাসেমকে রাখা প্রথম স্থানটি ছিল ঢাকার গোয়েন্দা শাখার কোনো ভবনে।
ব্যারিস্টার কাসেম অভিযোগ করেন, ‘উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, যারা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে সহায়তা করেছিলেন ও মদদ দিয়েছিলেন, তারা এখনও স্বপদে-অবস্থানে বহাল রয়েছেন। ’
তাকে কেন গুম করা হয়েছিল প্রশ্নে তার বিশ্বাস, পারিবারিক রাজনীতির কারণে তাকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি তার বাবা মীর কাসেমের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন, যিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সিনিয়র সদস্য ছিলেন, যাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
ব্যারিস্টার কাসেমসহ গুমের শিকার আরও পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। তারা জানিয়েছেন, সৌভাগ্যগুণে তারা পরিবার-স্বজনদের কাছে ফিরতে পারলেও অনেক বন্দিকে চিরতরে গুম করে ফেলেছে হাসিনা সরকার, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।
আয়নাঘর থেকে মুক্তির পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও বিন কাসেমসহ অন্যান্য ভুক্তভোগীদের এখনও তাদের অপহরণকারীদের ভয়ে দিন কাটছে, কখন না যেন ফের গুমের শিকার হন।
ব্যারিস্টার কাসেম বলেন, ‘আমি কখনও টুপি ও মাস্ক না পরে বাড়ি থেকে বের হই না। কোথাও বের হলে সবসময় পেছনের দিতে তাকাই আমি। ’
কংক্রিটের তৈরি যে কক্ষে মীর আহমদ বিন কাসেম বন্দি ছিলেন, সেটার অবশিষ্টাংশের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর অবশ্যই বিচার হতে হবে, যাতে দেশ এ অধ্যায়টি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে। ’
বিন কাসেম ছাড়াও আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরা আরও পাঁচ ব্যক্তি বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকার কংক্রিটের কক্ষে রাখা হয়েছিল। যেখানে বাইরের জগৎ সম্পর্কে কিছুই জানার উপায় ছিল না। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছিল।
তাদের প্রায় সবাই বলেছেন, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারলেও তারা এখনও ভয় পাচ্ছেন যে, কখন যেন রাস্তায় বা বাসে তাদেরকে অপহরণ করা ব্যক্তির সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়!
এমনই একজন ভুক্তভোগী আতিকুর রহমান রাসেল। ৩৫ বছর বয়সী এ যুবক বিবিসিকে বলেন, ‘এখন বাসে উঠলে বা বাড়িতে একা থাকাকালে আমি কোথায় ছিলাম তা ভেবে ভয় পাই। কীভাবে আমি বেঁচে গেলাম, আমার কি আসলেই বেঁচে থাকার কথা ছিল! - বার বার এই ভাবনা আসে মাথায়। ’
তিনি বলেন, তারা নির্যাতন করে আমার নাক ভেঙে দিয়েছে। হাতকড়া পরিয়ে রাখার কারণে আমার হাত এখনও ব্যথা করছে।
রাসেল বলেন, গত জুলাই মাসে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে, তখন পুরান ঢাকার একটি মসজিদের বাইরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয়ে সাদা পোশাকে একদল লোক আমার পথ রোধ করে। মুহূর্তেই আমাকে একটি ধূসর রঙের গাড়িতে তুলে নেন তারা। হাতকড়া পরায়, চোখ বেঁধে টুপি পরিয়ে মুখ ঢেকে দেয়। চল্লিশ মিনিট ধরে গাড়িটি চলে। এরপর আমাকে টেনে বের করে একটি ভবনে নিয়ে যায় এবং একটি ঘরে রাখে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর লোকেরা একে একে আসতে শুরু করেন এবং নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। জবাব দিলেও মারধর করতে থাকেন তারা।
তিনি বলেন, ‘ওই জায়গার ভেতরে থাকাটা ভয়ংকর ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি আর কখনো বের হতে পারব না। ’
রাসেল জানান, তাকে কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে চলতি বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেখার পর, তার মনে হয়েছে তাকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় রাখা হয়েছিল।
তাকে কেন আটক করা হয়েছিল প্রশ্নে রাসেল বলেন, ‘আমাকে আটকের কারণ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ আমি বিএনপির একজন ছাত্রনেতা ছিলাম, আমার বাবাও বিএনপির একজন সিনিয়র সদস্য ছিলেন। আমার ভাই দেশের বাইরে থেকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিতেন। ’
রাসেলের মতো আয়নাঘরে আটক ও নির্যাতনে শিকার ইকবাল চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ আনা হয় এবং তিনি বলেন, এ কারণেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।
৭১ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ বলেন, ‘আমাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। ইলেকট্রিক শকের কারণে এখন আমার একটি আঙুল ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমার পায়ের জোর কমে গেছে, শরীরের জোরও কমে গেছে। ’
ইকবাল জানান, অন্য মানুষদের শারীরিক নির্যাতন, মানুষের চিৎকার এবং যন্ত্রণায় কান্নার শব্দ পাওয়ার কথা তার মনে পড়ে। তিনি বলেন, সেই ভয়ানক দিনগুলো কথা মনে পড়লে আমি এখনো আতঙ্ক বোধ করি।
২৩ বছরের রহমতুল্লাহও একই আতঙ্কে ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবন থেকে দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। ওই সময়টা আর কখনোই ফিরে পাব না। ’
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে নিজের বাড়ি থেকে রহমতুল্লাহকে উঠিয়ে নেয় র্যাব কর্মকর্তারা। ওই সময় র্যাব কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিলেন। আবার কেউ কেউ সাদা পোশাকে ছিলেন। তখন পাশের একটি শহরে রান্নার কাজ করতেন রহমতুল্লাহ। সেই সঙ্গে তিনি ইলেকট্রিশিয়ান হতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমতুল্লাহর কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতবিরোধী এবং ইসলামি পোস্ট করার জেরেই তাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হয়েছে। তাকে যেই কক্ষে (সেল) আটক রাখা হয়েছিল, কাগজে-কলমে ব্যবহার করে তিনি সেটার ছবি আঁকেন। ওই কক্ষে একটি খোলা ড্রেন ছিল। সেখানেই তাকে মল–মূত্র ত্যাগ করতে হতো।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার ওই জায়গাটার কথা ভাবলে এখনো আমার গা শিউরে ওঠে। সেখানে ঠিকমতো ঘুমানোর পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। তাই আমাকে কোমর বাঁকা করে ঘুমাতে হতো। শুয়ে থাকার সময় আমি পা ছড়িয়ে দিতে পারতাম না। ’
রহমতুল্লাহ আরও যোগ করেন, ‘তারা আমাকে এমন এক জায়গায় রেখেছিল, যেখানে কোনো মানুষেরই থাকা উচিত নয়। ভয় এখনো যায়নি আমার। মৃত্যু পর্যন্ত আমার এই ভয় থাকবে। ’
বিবিসির পক্ষ থেকে আরও সাবেক দুই বন্দির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন-মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার। তাদের দেওয়া তথ্যে গোপন বন্দিশালা এবং সেগুলোর ভেতরে তাদের সঙ্গে আসলে কী ঘটেছিল, সেসব নিয়ে ধারণা লাভের চেষ্টা করা হয়েছে।
আওয়ামী শাসনামলে আয়নাঘরে কতজন নির্যাতনের শিকার - তার সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনাগুলো চিহ্নিত করে আসছে একটি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থা। কমপক্ষে ৭০৯ জনকে গুম করার তথ্য নথিভুক্ত করেছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনও নিখোঁজ। গত সেপ্টেম্বরে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠনের পর থেকে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৭৬ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছেন। আরও মানুষ অভিযোগ নিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন যে, সমস্ত গুমের ঘটনাগুলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন, অনুমতি বা আদেশক্রমে হয়েছে। বিমানবন্দরের গোপন কারাগারটি আয়নাঘর হিসেবে ব্যবহার করতো হাসিনা সরকার। সারা দেশে ৫০০, ৬০০ বা ৭০০-এরও বেশি এমন আয়নাঘরের সন্ধান মিলেছে। ‘
যদিও আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, এসব গুম-খুনের মতো অপরাধগুলো তাদের অজান্তেই ঘটেছে।
আওয়ামী লীগ দলের মুখপাত্র ও সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এ ধরনের কোনো গুমে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন,‘ যদি এমন কোনো আটকের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তা জটিল অভ্যন্তরীণ সামরিক কোনো পদক্ষেপের ফসল হয়ে থাকতে পারে। এসব মানুষকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রেখে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো রাজনৈতিক ফয়দা আমি দেখতে পাই না। ’
সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, এসব বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়িদ বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী স্পষ্টভাবে এ ধরনের কোনো বন্দিশালা পরিচালনার বিষয়টি নাকচ করছে। ’
তবে এসব গুন-খুনের সঙ্গে সরাসরি আওয়ামী লীগ সরকারই জড়িত বলে বিশ্বাস প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের বন্দি রাখা হয়েছিল, তারা ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং তারা শুধু আগের সরকারের, ওই সময়ের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। সেই কারণেই তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল। ’
বিচারকার্যের বিষয়ে তিনি তথ্য দেন, এখন পর্যন্ত তারা ১২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন, কিন্তু এখনো কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। তবে বিচার সম্ভব এবং একদিন অবশ্যই হবে দৃঢ় বিশ্বাস এ প্রসিকিউটরের।
বিবিসির প্রতিবেদন অবলম্বনে: সাঈদ আল হাসান শিমুল (সিনিয়র নিউজরুম এডিটর)
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৫
এসএএইচ