১২ বছর ধরে বিশ্বের প্রায় ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের জন্য ধর্মীয় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস। ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে তার।
‘পোপ’ মূলত একটি দায়িত্ব। যিনি পোপ হন, তিনি রোমান ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাথলিক বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি যিশু খ্রিস্টের একজন জীবন্ত উত্তরাধিকারী এবং প্রেরিত সেন্ট পিটারের স্থলাভিষিক্ত। ফলে তার ওপর থাকে সমস্ত ক্যাথলিক চার্চগুলোর পূর্ণ ও অবারিত কর্তৃত্ব। শুধু ধর্মীয় নয়, নৈতিক সিদ্ধান্তেও বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ক্যাথলিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশকের ভূমিকার পালন করে থাকেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিসের পুরো নাম জর্জ মারিও বার্গোগলিও। ১৯৩৬ সালে ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যাথলিক গির্জার ইতিহাসে প্রথম লাতিন আমেরিকান ও প্রথম যিশুবাদী পোপ ছিলেন। মৃত্যুর আগে পোপ ফ্রান্সিস ঘোষণা দিয়েছেন, তার আত্মা পরকালে যাত্রা করলে দেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে সরল ও আনুষ্ঠানিক।
সাধারণত রীতি অনুযায়ী পোপের মৃত্যু হলে তাকে তিন স্তরের কফিনে করে সমাহিত করা হয়। স্তরগুলোয় থাকে সাইপ্রেস কাঠ, সীসা ও ওক কাঠ। পোপ ফ্রান্সিসের চাওয়া ছিল দস্তা আবৃত একটি সাধারণ কাঠের কফিনে তাকে সমাহিত করা হোক। তাছাড়া, ভ্যাটিকানের বদলে তার দাফন হবে রোমের বেসিলিকা অব সেন্ট মেরি মেজরে।
বেসিলিকা অব সেন্ট মেরি মেজর রোম শহরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন ক্যাথলিক চার্চ।
পোপের মৃত্যু হলে রীতি অনুযায়ী নতুন পোপ নির্বাচন করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত প্রাচীন, গম্ভীর ও আধ্যাত্মিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পাপাল কনক্লেভ। নির্বাচনের আগে ভ্যাটিকান সিটি কার্ডিনালদের সমিতির বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বাচিত কার্ডিনালরা একত্র হন। তাদের মধ্যে যাদের বয়স ৮০ বছরের কম, শুধু তারাই ভোট দেবেন। নির্বাচন হয় সিসটাইন চ্যাপেলে। ভোটের জন্য নির্ধারিত দিনগুলোয় ৪ বার করে ভোট হবে (২ বার সকালে, ২ বার বিকেলে)। পোপ নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হবে। ভোট শেষে ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়া হবে। রঙের মাধ্যমে বোঝা যাবে পোপ নির্বাচিত হয়েছেন কিনা। কালো ধোঁয়ার মানে হলো পোপ নির্বাচিত হয়নি; সাদা ধোঁয়ার মানে পোপ নির্বাচিত। এ সময় ঘণ্টার শব্দও বাজবে।
তারপর নবনির্বাচিত পোপকে প্রশ্ন করা হবে- আপনি কি সুপ্রিম পোন্টিফ হিসেবে আপনার ক্যানোনিকাল নির্বাচন মেনে নেন? সম্মতি দিলে, তিনি নিজের জন্য একটি নতুন নাম বেছে নেবেন নতুন পোপ। যেমন জর্জ মারিও বার্গোগলিও নিজের জন্য ‘ফ্রান্সিস’ নামটি বেছে নিয়েছিলেন। এরপর ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ব্যালকনি থেকে ঘোষণা আসবে ‘হাবেমাস পাপাম’। অর্থাৎ, আমরা পোপ পেয়েছি। তারপর প্রথমবারের মতো নতুন পোর জনসম্মুখে আসেবন ও আশীর্বাদন দেবেন।
পোপ হতে হলে অবশ্যই প্রার্থীকে রোমান ক্যাথলিক পুরুষ হতে হবে যিনি বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছেন। তবে ইতিহাস জানায়, সাধারণত কার্ডিনালরাই একজন কার্ডিনালকে পোপ হিসেবে বেছে নেন। ফ্রান্সিস ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা থেকে আসা প্রথম পোপ। তবে এখনো ইউরোপীয়—বিশেষ করে ইতালীয় প্রার্থীরাই বেশি সম্ভাব্য হিসেবে বিবেচিত হন। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ২৬৬ জন পোপের মধ্যে ২১৭ জনই ছিলেন ইতালীয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
এমজে