গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি পর্যালোচনা করছে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ)। ধারণা করা হচ্ছে, হাসিনাকে দেওয়া ডিগ্রিটি বাতিল করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ) শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক আইন ডিগ্রি ‘অনারারি ডক্টর অব ল’স’ প্রদান করে। সে সময় তিনি প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মূলত তার নেতৃত্বগুণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং উন্নয়নের জন্য তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ ডিগ্রি দেয় এএনইউ।
১৯৯৬–২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ও অগগ্রতি করে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশ সরকার প্রধানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান, শান্তি প্রক্রিয়া,
নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই তাকে অনারারি ডক্টর অব ল’স ডিগ্রি প্রদান করে।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য ক্যানবেরা টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণহত্যা অভিযুক্ত হন। ফলে এএনইউর অনারারি কমিটি তাকে দেওয়া অনারারি ডক্টর অব ল’স ডিগ্রি পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তাই এখনও পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না তারা।
এএনইউর একজন মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন কোনো সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রত্যাহারের ঘটনা নেই। তা ছাড়া আগে কখনো এমন কোনো প্রক্রিয়াগত দৃষ্টান্তও গৃহীত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এখন একটি বিস্তারিত প্রত্যাহার নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। যা শেষ হওয়ার পরই নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এর আগে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর আগে একই বছর জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়। সে সময় দেশের নিরাপত্তাবাহিনী ও আওয়ামী লীগ সরকার তার নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে আন্দোলনে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। পরবর্তীতে আন্দোলন সার্থক হয় এবং শেখ হাসিনা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, গণহত্যা ও হত্যাসহ একাধিক অভিযোগ আনলেও তিনি সেগুলো অস্বীকার করেছে।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা গত আগস্টে জানিয়েছিলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলন রূপ নেওয়ার প্রাক্কালে শেখ হাসিনার নির্দেশে নিরাপত্তাবাহিনীর মাধ্যমে যে অভিযান চালানো হয়, তাতে অন্তত ১ হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হন। এ তালিকায় ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, পথচারী, রিকশাচালক, দিনমজুর, ও শিশু রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে, শেখ হাসিনার অধীনে সামরিক বাহিনীকে কারফিউ কার্যকরে ‘দেখা মাত্র গুলি’ চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। মানবাধিকার সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়, বাংলাদেশের এ বাহিনীকে যেন অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বন্ধে চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং নিরস্ত্র ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার জন্য দায়ী বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা যেন তার বাহিনীকে ছাত্র ও সাধারণ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিষ্ঠুরতা চালানো থেকে বিরত রাখেন। এ জন্য প্রভাবশালী দেশগুলোর হস্তক্ষেপ জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
এমজে