ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রাজ্যের নাম ‘ঢেকে’ দেওয়ার অভিযোগে আবার অশান্ত মণিপুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:১০, মে ২৯, ২০২৫
রাজ্যের নাম ‘ঢেকে’ দেওয়ার অভিযোগে আবার অশান্ত মণিপুর রাজভবনের কাছে বিক্ষোভকারীদের জমায়েত

আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। রাজ্যের একটা সারকারি বাস থেকে মণিপুরের নাম ‘ঢেকে’ দিতে বলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এ উত্তেজনার শুরু।

মণিপুরের উখরুলে শিরুই লিলি (এক বিরল প্রজাতির ফুল) উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল সম্প্রতি। ওই অনুষ্ঠানের জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গোয়ালতাবির চেক পোস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে বাসের গায়ে লেখা ‘মণিপুর রাজ্য পরিবহন’ থেকে ‘মণিপুর’ শব্দটা ঢেকে দিতে বলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

একে কেন্দ্র করেই বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কমিটি তৈরি করে তদন্তের কথা ঘোষণা করা হলেও তা ক্ষোভ প্রশমন করতে পারেনি।

গত সপ্তাহ থেকে মিছিল, ধর্না, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ঢুকতে না দেওয়া এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বারেবারে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চল।

বিষ্ণুপুর এবং থোবাল জেলা, খুরাই, কোংবা-সহ একাধিক এলাকায় বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজভবনের উদ্দেশে রওনা হওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে টিয়ারশেল ব্যবহার করেছে।

বিক্ষোভের জেরে চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে, দিল্লি থেকে ফেরার সময় রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লাকে বিমানবন্দর থেকে রাজভবন যাওয়ার জন্য সামরিক হেলিকপ্টারে সফর করতে হয়েছিল।

ওই রাস্তা আনুমানিকভাবে ছয়-সাত কিলোমিটার মাত্র এবং সাধারণত সড়কপথেই ওই দূরত্ব সফর করেন রাজ্যপাল।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এন বীরেন সিং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে এবং এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রধান হলেন রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা।

এ প্রসঙ্গে মণিপুরের সাংবাদিক মায়ুম শর্মা বলেন, “গত সপ্তাহ থেকে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। একাধিক অঞ্চলে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদী মিছিল দেখা গিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও বেঁধেছে। এখন এই রাজ্যের রাজনীতির কথা মাথায় রেখে, বিষয়টা কোনদিকে গড়ায় সেটাই দেখার। ”

জাতিগত সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা মণিপুরে দুই বছর পর ‘শিরুই লিলি’ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল উখরুলে। ওই বিরল প্রজাতির ফুল ফোটে এই সময়।

পর্যটকদের উৎসাহ দিতে বছর কয়েক আগে এই মৌসুমে ‘শিরুই লিলি’ উৎসব শুরু করে রাজ্যের পর্যটন বিভাগ। কিন্তু মণিপুরের পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সেই অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল।

মায়ুম শর্মা জানিয়েছেন, এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল মণিপুরের সরকারি বাসে। পথে গোয়ালতাবির চেক পোস্টে নিরাপত্তা বাহিনী ওই বাস থামিয়ে ‘মণিপুর’ শব্দটা ঢেকে দিতে বলে।

তিনি বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে যখন এর কারণ জানতে চাওয়া হয় তখন তারা বলে ওপর থেকে অর্ডার এসেছে। ”

সাংবাদিকরা রাজি না হওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধ হয় এবং অনুষ্ঠানে না গিয়েই তারা রাজধানী ইম্ফলে ফিরে আসেন।

এরপর তারা প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ জানান এবং রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে এই ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপের আবেদনও জানানো হয়।

মায়ুম শর্মা আরও বলেন, “একটা রাজ্যেরই সরকারি পরিবহনের গায়ে লেখা সে রাজ্যেরই নাম কীভাবে ঢাকতে বলা যেতে পারে? মণিপুর তো ভারতের অন্যান্য রাজ্যেরই মতো। তাহলে কেন এমন আচরণ—এই প্রশ্নই ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ”

ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয় বিক্ষোভ। মেইতেই সংগঠন ‘কোঅর্ডিনেশন কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি’ দাবি করেছে, রাজ্যপালকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।

পাশাপাশি প্রশাসনিক গাফিলতি ও শান্তি রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ জানিয়ে ওই রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা, মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজির ইস্তফা দাবি করেছে সংগঠনটি।

এসব দাবি নিয়ে রোববার থেকে মণিপুরজুড়ে আইন অমান্য আন্দোলনের ঘোষণা করে ওই সংগঠন। আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর।

রাজভবনের গেট থেকে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে কাংলা গেটে রোববার জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ তাদের বাধা দিলে ঝামেলার শুরু। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে টিয়ারশেল ছোড়া হয়। পরে অভিযোগ ওঠে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হয়েছেন একাধিক বিক্ষোভকারী।

ওই সংগঠনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার বন্ধের প্রভাব পড়ে মেইতেই অধ্যুষিত এলাকায়।

কোঅর্ডিনেশন কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি আহ্বায়ক খুরাইজাম আতৌবা বলেন, “একটা রাজ্যের নাম ঢেকে বা মুছে দিতে বলা সেই রাজ্যের মর্যাদার পরিপন্থি। রাজ্যের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অপমান করা হয়েছে। প্রশাসন রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই রাজ্যপাল ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে। ”

ওই সংগঠনের পাশাপাশি অন্যান্য সংগঠনও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয়। পূর্ব ইম্ফলের খুরাইয়ে বিক্ষোভকারী নারীদের একটা দল জেলা প্রশাসকের অফিস পর্যন্ত মিছিল করে সেখানে বিক্ষোভ দেখায়। রাজ্যপালকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়। ইম্ফল পশ্চিমেও একই চিত্র দেখা গেছে।

এরই মাঝে, সোমবার দিল্লি থেকে ইম্ফলে ফেরার কথা ছিল রাজ্যপালের। বিমানবন্দর থেকে রাস্তার দুই পাশে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভকারীরা তিদ্দিম রোডের কোকাইথেল এলাকায় জড়ো হয়ে তিন কিলোমিটার দূরে রাজভবনের দিকে মিছিল করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু পুলিশ বাধা দেয়।

বিমানবন্দর থেকে বেরানোর রাস্তার দুই দিকে বিক্ষোভকারীদের জমায়েত দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে সেনার হেলিকপ্টারে করে রাজ্যপালকে কাংলা ফোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

সাংবাদিক ডেভিড মায়ুম বলেন, “বিমানবন্দর থেকে রাজভবনের দূরত্ব খুবই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর ছিল যে, সেনাবাহিনী ঝুঁকি নিতে চায়নি। ”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ