যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসনবিরোধী অভিযান ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত হয়ে থাকা লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউনের কিছু এলাকায় জরুরি কারফিউ জারি করা হয়েছে, পাশাপাশি শহরটিতে শুরু হয়েছে গণগ্রেপ্তার।
শহরটির মেয়র কারেন বাস জানিয়েছেন, কারফিউ স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে এবং এটি কয়েক দিন বলবৎ থাকতে পারে।
কারফিউর আওতায় থাকা এলাকাটি যদিও মাত্র ১ বর্গমাইল, তবে সেখানে টানা চার দিনের বিক্ষোভে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার(১০ জুন) কারফিউ কার্যকর হওয়ার আগেই প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়, আর পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ৩৭৮ জন। মেয়র বাস জানান, বিক্ষোভ চলাকালীন অন্তত ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাটের শিকার হয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেডারেল ভবন ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে শহরটিতে।
এদিকে, টেক্সাসে সম্ভাব্য বিক্ষোভ ঠেকাতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, সিয়াটল, ডেনভার, সান ফ্রান্সিসকো ও আটলান্টা সহ আরও বেশ কয়েকটি বড় শহরেও। অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই)-এর বিরুদ্ধে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার প্রতিবাদেই এই আন্দোলনের সূত্রপাত। অভিযোগ উঠেছে, হোয়াইট হাউসের নির্ধারিত গ্রেপ্তার ‘কোটা’ পূরণে আইসিই কর্মীরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন, কর্মস্থল থেকেও মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন আরও প্রকাশ্যে এসেছে। গভর্নর এক টেলিভিশন ভাষণে ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, নির্বিচারে গণবহিষ্কার ও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন জননিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি সোমবার(৯ জুন) নিউজমকে ফোন করেছিলেন, তবে গভর্নর তা অস্বীকার করেন এবং জানান তাদের শেষ কথা হয়েছিল শুক্রবার (৬ জুন)।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র বাস জানিয়েছেন, আইসিই কখন কোথায় অভিযান চালাবে, সে বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ বা নগর প্রশাসনকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয় না। মেয়র বলেন, আমরা জানি না পরবর্তী অভিযান কোথায় এবং কখন হবে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভের ঢেউ এখন শুধু রাজনৈতিক প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা হয়ে উঠছে নাগরিক অধিকার, ন্যায়বিচার এবং অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর জনমতের প্রকাশ। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখন সময়ই বলবে।
এমএম