ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ফের চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র এবার সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তেহরানের পরমাণু প্রকল্পকে ঘিরে যদি যুক্তরাষ্ট্র কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের সব মার্কিন ঘাঁটিতে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে।
বুধবার (১১ জুন) তেহরানে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এ কথা বলেন ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তাহলে তার মূল্য তারাই চড়াভাবে দেবে। মধ্যপ্রাচ্যের সব মার্কিন ঘাঁটি আমাদের রেঞ্জের মধ্যেই আছে, প্রয়োজনে একযোগে আঘাত হানতে আমাদের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
তিনি আরও জানান, বিগত কয়েক বছরে ইরান তার সামরিক সক্ষমতায় বিপুল অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্ভাব্য যেকোনো সংঘাত মোকাবিলায় পরিপূর্ণভাবে সজ্জিত।
ইরানের এই কড়া অবস্থান আসে ঠিক একদিন পর, যখন মার্কিন সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম)- প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা কংগ্রেসে জানান, তেহরানের সঙ্গে সংলাপ ব্যর্থ হলে ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে ‘বিকল্প সামরিক ব্যবস্থা’।
এমন প্রেক্ষাপটে ইরান সরাসরি জানিয়ে দিল, কূটনৈতিক সমাধান ভেস্তে গেলে যুদ্ধ বেছে নিতে প্রস্তুত রয়েছে তেহরানও।
পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কথা বললেও ইরানের প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দিহান যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। গত কয়েক বছরে দেশটি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা ৯০ শতাংশ হলে তা সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী হয়ে ওঠে। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’র তথ্যমতে, ইরান চাইলে এই ইউরেনিয়াম দিয়ে কমপক্ষে ৬টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওমানের মধ্যস্থতায় কিছুদিন ধরেই পরোক্ষ আলোচনা চলছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সরাসরি চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমন খবরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্রে এসেছে।
তবে ওয়াশিংটন-তেহরান সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত। এই উত্তপ্ত পারমাণবিক ইস্যু কেবল ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
সূত্র: আনাদোলু
এমজে