জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে জানিয়েছেন, ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় অবস্থিত উপরিভাগের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পাইলট কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং ইরানি কর্তৃপক্ষ ফোর্দো ও ইসফাহানেও হামলার হয়েছে বলে জানিয়েছে।
গ্রোসি আরও জানান, নাতানজ বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এর “ক্যাসকেড হল”-এ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে স্থাপিত সেন্ট্রিফিউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ইনস্টিটিউট ফর সাইন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি- এর পরমাণু বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইটের ব্যাখ্যায় ইসরায়েলের প্রথম দিনের হামলা মূলত চমকে দেওয়ার মতো লক্ষ্যবস্তুর ওপর চালানো হয়েছিল। যার লক্ষ্য ছিল নেতৃত্বকে নির্মূল করা, পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিশানা করা, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিশোধের সক্ষমতা নষ্ট করা।
তিনি জানান, ফোর্দো বা ইসফাহানে দৃশ্যমান কোনো ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন নেই, তবে নাতানজে প্রকৃত ক্ষতি হয়েছে। তবে তার ভাষায়, নাতানজের ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ এখনো নেই।
অলব্রাইট বলেন, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদের বর্তমান অবস্থা অজানা এবং সম্ভবত ইসরায়েল বড় পরমাণু স্থাপনাগুলোতে সরাসরি হামলা চালানো থেকে বিরত ছিল, কারণ সেখানে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা অবস্থান করছিলেন।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, নাতানজের ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, যেগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাকআপ ব্যাটারি সিস্টেম চালু হয়। তার মতে, ইরান সম্ভবত সেই সেন্ট্রিফিউজগুলোকে ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রিতভাবে বন্ধ করছে।
নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনাটি ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি একটি বিস্তৃত স্থাপনা, যেখানে একটি বৃহৎ ভূগর্ভস্থ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং একটি ছোট উপরের পাইলট সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র রয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক ফোন সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি আদৌ আছে কি না, তা এখন স্পষ্ট নয়। কেউ জানে না। এটা ছিল এক ভয়াবহ আঘাত।
অন্যদিকে, মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস-এর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিশেষজ্ঞ জেফ্রি লুইস বলছেন, নাতানজ স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মাঝারি।
তিনি জানান, ইসরায়েল পাইলট ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ধ্বংস করেছে, এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়ক কিছু ভবনেও হামলা চালিয়েছে। দুটি ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার পাশে থাকা একটি সহায়ক ভবনে (সম্ভবত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য) আঘাত হানা হয়েছে।
তবে তাঁর ভাষায়, ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ হলগুলো এবং পাহাড়ের ভেতরে থাকা বৃহৎ ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর কোনো দৃশ্যমান ক্ষতি দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র: রয়টার্স
এমএম