ঢাকা, সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২, ২৩ জুন ২০২৫, ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধের পুরনো গান কি নতুন সুরে বাজছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:১৩, জুন ২৩, ২০২৫
যুদ্ধের পুরনো গান কি নতুন সুরে বাজছে?

‘আজ আমরা এমন এক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছি, যা দিয়ে একটি জাতিকে মুক্ত করা যায়—একটি বিপজ্জনক ও আগ্রাসী শাসনব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে। নতুন কৌশল ও নির্ভুল অস্ত্রের মাধ্যমে আমরা বেসামরিক জনগণের ওপর সহিংসতা চালানো ছাড়াই সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।

এই কথাগুলো শুনে মনে হবে, নিশ্চয়ই ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর কেউ বলেছে। মনে হবে, ঠিক এই মুহূর্তের জন্যই লেখা। কিন্তু না, এই কথা আজকের নয়।

এটি বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, ঠিক ২২ বছর আগে। ২০০৩ সালের ১ মে, ইউএসএস আব্রাহাম লিঙ্কন নামের বিশাল যুদ্ধজাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইরাকে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শেষ। এখন সময় বদলেছে, যুদ্ধ বদলেছে, কিন্তু ভাষা? সেটি কি বদলেছে?

এখন, যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে ভয়ংকর এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে, বিশ্বনেতাদের কণ্ঠে যেন ফিরে এসেছে পুরনো সেই আওয়াজ। কথাগুলো যেন বাতাস কেটে পরিচিত সুরে বাজছে—ঠিক যেমনটা শুনেছিল বিশ্ব, ইরাক যুদ্ধের আগের দিনগুলোতে।

পুরনো সতর্কবার্তা, একই ধরনের যুক্তি

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের সামরিক হামলার লক্ষ্য হলো ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে আটকানো। অন্যদিকে, ইরান জোর দিয়ে বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য।

গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলে আসছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছে।
২০০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে আহ্বান জানিয়েছিলেন, যেন ইরাকে আক্রমণ চালানো হয়। তিনি দাবি করেছিলেন, বাগদাদ গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) তৈরি করছে। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ইরানও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করেছিল, কিন্তু সেই গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল শুধু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বা ক্ষেপণাস্ত্র নয়, বরং সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। এই অঞ্চলে সরকার পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের বহু বছরের বিতর্কিত কৌশল।

ইতিহাস কি নিজেকে নতুন করে লিখছে?

যুক্তরাষ্ট্র ও তার তল্পিবাহকদের পরিচালিত ইরাক যুদ্ধ দেশটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। সেই যুদ্ধে কয়েক লক্ষ ইরাকি নিহত হন, প্রায় সাড়ে চার হাজার মার্কিন সেনার মৃত্যু ঘটে, এবং দেশটি দীর্ঘকাল ধরে বিভাজিত ও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।

পেছনে তাকালে দেখা যায়, সেই যুদ্ধের আগে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছিল, তা আজকের পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকটা অস্বস্তিকরভাবে মিলে যায়। যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বিশ্বকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিল, ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে।

আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।