ঢাকা: গণধর্ষনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুকেশ সিংয়ের ইন্টারভিউটি দিল্লি আদালত প্রচার এবং প্রকাশ নিষিদ্ধ করলেও বিবিসি তা যুক্তরাজ্যে প্রচার করেছে। সেই সাথে আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তা প্রচারিত হবে যুক্তরাজ্যের বাইরে ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশে।
বুধবার (৪ মার্চ) রাতে বিবিসির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ নামের ওই ডকুমেন্টারিটি আগামী রোববার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসের রাতে ভারত, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে এবং কানাডাসহ সাতটি দেশে প্রচারিত হবে। তবে মানুষের ‘অতি আগ্রহের’ কারণে বুধবার রাতে যুক্তরাজ্যে ভিডিওটি বিবিসি ফোর-এ প্রচার করা হয়। প্রচারের পর ভিডিওটি যুক্তরাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’স ডটার’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে অনলাইনেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বিবিসি জানায়, এই মর্মভেদী ডকুমেন্টারিটি ধর্ষিতার পরিবারের সমর্থন এবং সহায়তাতেই নির্মিত হয়েছে। এই ইন্টারভিউতে সেই অপরাধটির ভেতরের দৃশ্য ফুটে উঠেছে, যা বিশ্বব্যাপী নিন্দা আর সমালোচনার ঝড় তোলে সে সময়। সেই সাথে এই ঘটনা ওই সময় ভারতে নারীর প্রতি আচরণ পরিবর্তনে এক বিপ্লবের সৃষ্টি করে।
এর আগে সৃ্ষ্ট প্রতিক্রিয়া এবং পুলিশের অভিযোগের কারণে মুকেশ সিংয়ের ইন্টারভিউটি যেকোনো মাধ্যমে প্রচার এবং প্রকাশ নিষিদ্ধ করে দিল্লির একটি আদালত।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি গণপরিবহন বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয় ২৩ বছর বয়সী এক প্যারামেডিকেল ছাত্রী জ্যোতি সিং। এই ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে অভিযোগ দায়ের করা হয় পাঁচজনের বিরুদ্ধে। বিচারে তাদের চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়। এই সাজাপ্রাপ্তদেরই একজন মুকেশ সিং। সে ওই বাসটির চালক।
সম্প্রতি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক লেসলি উডউইন দিল্লির অদূরে তিহার কারাগারে বন্দি মুকেশের সাক্ষাৎকার নেন। ওই সাক্ষাৎকারে মুকেশ এধরণের ঘৃণ্য কাজে জড়িত থাকার ব্যাপারে কোনো অনুশোচনা না দেখিয়ে উল্টো ধর্ষিতাকেই দোষারোপ করে।
তার মতে ‘একটা ভালো মেয়ে কখনোই রাত ৯টায় বেড়াতে বের হয় না। ধর্ষণের জন্য ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বেশি দায়ী থাকে। ছেলে এবং মেয়ে সমান না। গৃহস্থালীর কাজগুলো মেয়েদের জন্য। অসামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরে রাতে ডিস্কো আর বারগুলোয় ঘুরে বেড়ানো তাদের কাজ না। ’
এই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। লেসলি উইউইন কী ভাবে কঠোর নজরদারিতে বন্দি মুকেশের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারলেন সে ব্যাপারে কারাকর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে এর প্রচার ও প্রকাশ বন্ধ চেয়ে আদালতে আবেদন করে দিল্লি পুলিশ। এ প্রসঙ্গে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভগত বলেন, সাক্ষাৎকারটির প্রচার বন্ধ চাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এতে এ ধরণের অপরাধ প্রবণতা আরো বেড়ে যাবে।
পুলিশের ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এই সাক্ষাৎকার প্রচার ও প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। আদালতের অাদেশ অনুযায়ী কোনো দেশি বা বিদেশি চ্যানেলে এই সাক্ষাৎকার প্রচার এবং অন্য কোনোভাবে প্রকাশ করা যাবে না বলে জানান রাজন।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫