ঢাকা: পাঁচ মাস বিরতি দিয়ে আবারও একক সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোয়ানের দল ক্ষমতাসীন (অন্তর্বর্তীকালীন) জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)। রোববারের (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে তারা।
দেশটির নির্বাচন কমিশন সূত্র ও সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর বরাত দিয়ে সোমবার (২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বলছে, এ ফলাফলের মাধ্যমে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত হয়ে গেল ২০০২ থেকে সরকারে থাকা একেপির।
নির্বাচন কমিশন সূত্র ও সংবাদমাধ্যম, রোববার (১ নভেম্বর) অস্থিতিশীল দেশটিজুড়ে একযোগে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটগ্রহণের পর গণনায় দেখা যায়, নির্বাচনে ৪ কোটি ৮২ লাখ তুর্কির ৮৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। ৯৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ভোট গণনা করে দেখা যায়, এতে ক্ষমতাসীন একেপির ব্যালটে পড়েছে ৪৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ভোট। আর প্রধান বিরোধী দল ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকান পিপলস’ পার্টির (সিএইচপি) ব্যালটে পড়েছে ২৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট। এছাড়া, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) ব্যালটে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও কুর্দি সমর্থিত পিপলস’ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) ব্যালটে পড়েছে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট
ভোট প্রাপ্তির হিসাবে তুরস্কের বিধান অনুযায়ী, সংসদে এরদোয়ানের দল একেপি পাচ্ছে ৩১৬ আসন। ১৩৪ আসন পাচ্ছে সিএইচপি। এছাড়া, এমএইচপি ও এইচডিপি পাচ্ছে যথাক্রমে ৪১ ও ৫৯ আসন।
নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য দরকার হয় ২৭৬ আসনের। আর একেপির নিশ্চিত হয়ে গেছে ৩১৬ আসন। সে বিবেচনায় ২০০২ সাল থেকে ক্ষমতাসীন একেপির আরও পাঁচ বছরের জন্য একক সরকার গঠন নিশ্চিত হয়ে গেল।
তবে, এ নির্বাচনকে কেবল একেপির জয় না বলে অনেকে ‘আধুনিক ইসলামপন্থি’ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জয়ও বলছেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর গত আগস্টে এরদোয়ান প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেন। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদটি রাষ্ট্রীয় প্রধানের হলেও ক্ষমতা-প্রভাব বিবেচনায় ‘অনেক বেশি মুখাপেক্ষী’। এরদোয়ান চান সংবিধান সংশোধন করে সে ‘মুখাপেক্ষী’ পদটিকে স্বাধীন করে আরও বেশি ক্ষমতা দিতে অর্থাৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে প্রেসিডেন্টশাসিত করতে। তার ‘ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীরা’ মনে করেন, এ সুযোগ পেলে এরদোয়ান আরও অন্তত ১০ বছর রাষ্ট্রীয় শাসনভারে থেকে তুরস্ককে ‘ইসলামি রাষ্ট্রে’ পরিণত করবেন।
এরদোয়ান প্রেসিডেন্টের আসনে বসার পর গত ৭ জুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় আলোচনা চলতে থাকে, এরদোয়ানের দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করলে তিনি সংবিধান সংশোধন করে মনোবাসনা পূর্ণ করবেন। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, একেপি পেয়েছে মাত্র ২৫৮ আসন। ওই ফলাফলের কারণে একক সরকার গঠনের সামর্থ্য না থাকায় জোট সরকার গঠনে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একেপি। এমনকি এতে খোদ প্রেসিডেন্টও তৎপর হন। কিন্তু ‘এরদোয়ান ভীতি’তে জোট গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে বাধ্য হয়ে নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। রোববারের এ নির্বাচনে ‘অপ্রত্যাশিত’ভাবে ফিরে এলো একেপি, ফিরে এলেন এরদোয়ানও।
নির্বাচনে এ নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, এ ফলাফল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তুর্কি জনগণের জবাব। এ ফলাফল জনতার আস্থার নিদর্শন।
তিনি কুর্দি গেরিলা বাহিনী পিকেকের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ১ নভেম্বর তুর্কি জনগণ এটাই স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছে যে, গণতন্ত্র, জাতীয় স্বার্থ, আইনের শাসন ও উন্নয়নের দেশে চাপ, হুমকি, রক্তপাতের জায়গা নেই।
ফলাফল পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ও একেপির নেতা আহমেদ দাউতোগলু রাজধানী আঙ্কারায় দলের প্রধান কার্যালয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আজ গণতন্ত্রের বিজয়ের দিন। এটা কেবল আমাদের (একেপির) জয় নয়, পুরো তুরস্কবাসীর। এই নির্বাচনে কেউ হারেনি। পুরো তুরস্ক জিতেছে, গণতন্ত্র জিতেছে, আমাদের প্রজাতন্ত্র জিতেছে।
তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, অস্থিতিশীলতা, সংঘাত ও অস্থিরতার মূলোৎপাটন করতে আমাদের সরকার সবসময় ঐক্যবদ্ধ তুর্কি জনগণকে পাশে চাইবে।
প্রধানমন্ত্রী সংবিধান সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, বর্তমান সংবিধানের পরিবর্তে নতুন ও উদার একটি সংবিধান দরকার আমাদের। যে সংবিধানে শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থা, স্বচ্ছ ও কার্যকর সরকার কাঠামো থাকবে এবং যার কারণে আমলাতান্ত্রিকতা তুরস্কের রাজনীতিতে ব্যাঘাতের সৃষ্টি করতে না পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নির্বাচনে একেপি তাদের সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও ভোট পেয়েছে, যে নাগরিকরা গত জুনের নির্বাচনের পর অস্থিতিশীল ও সংঘাতপূর্ণ তুরস্ক দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং স্থিতিশীলতার জন্য একেপির দ্বারস্থ হতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৫/আপডেট ১২০১ ঘণ্টা/আপডেট ১৪০৫ ঘণ্টা
এইচএ