ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

প্যারিসে মুসলিম নিরাপত্তাকর্মীর দৃঢ়তায় বাঁচে হাজারো প্রাণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
প্যারিসে মুসলিম নিরাপত্তাকর্মীর দৃঢ়তায় বাঁচে হাজারো প্রাণ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: স্টাদে দ্য ফ্রান্স। এ স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যকার আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলছে।

ভিআইপি গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঁসোয়া ওঁলাদ ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ারসহ দু’দেশের শীর্ষ নেতারা। ৮০ হাজার দর্শক ধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামের সাধারণ গ্যালারিও প্রায় পরিপূর্ণ।

খেলার তখন ১৫ মিনিট। টিকিট হাতে একটি প্রবেশপথ দিয়ে গ্যালারিতে  ঢুকতে আসেন এক ব্যক্তি। তাকে সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশির চ্যালেঞ্জ করেন নিরাপত্তাকর্মী জুহাইর। বাধা পেয়ে থেমে যান ওই ব্যক্তি।

হঠাৎ তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ। বিভ্রান্ত গ্যালারির দর্শক, মাঠের খেলোয়াড়, স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরা। তারা মনে করেন, এটা বোধ হয় আনন্দে উদ্বেলিত সমর্থকদের আতশবাজির কারসাজি। কিছুক্ষণ পর ফের শব্দ। এবারের শব্দে অজানা শঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত মাঠের দর্শক-খেলোয়াড় সবাই।

কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলে-ম্যাসেজে সবার কানে পৌঁছে গেল বাতাক্লঁ থিয়েটার হলসহ প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে রক্তবন্যার খবর। নিরাপত্তাকর্মী জুহাইরের ওয়াকিটকিতে তখন সতর্কবার্তা বাজছে। স্টেডিয়ামের ভেতরের গ্যালারি-প্রেসবক্স-মাঠ মুহূর্তে মিলেমিশে একাকার। বাইরে নিরাপত্তাকর্মীদের ছোটাছুটি।

এরমধ্যে স্টেডিয়াম ফটকের নিরাপত্তাকর্মীরা জুহাইরের কাছে বিস্ফোরণের কারণ জানতে চান। তিনি জানান, এক আত্মঘাতী ফটকে তার কাছে বাধা পেয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে বেশ ক’জন হতাহত হয়েছেন। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনিসহ অসংখ্য লোক।

আসলে জুহাইর তার দৃঢ়তায় কেবল নিজে বাঁচেননি, বাঁচিয়েছেন স্টেডিয়ামের হাজারো ফুটবলপ্রেমীর প্রাণও। বাতাক্লঁ থিয়েটার হলসহ প্যারিসের অন্যান্য স্থানে বর্বরোচিত গণহত্যার কারণে স্টেডিয়ামের সংলগ্ন এলাকার তুলনামূলক কম ক্ষয়ক্ষতির খবর প্রথমে সংবাদমাধ্যমে আলোচিত না হলেও এখন এ নিয়েই বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন করছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম।

‘আত্মঘাতী হামলাকারী স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধা পেয়েছিল’ শীর্ষক শিরোনামে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ডেইলি মেইল, ফক্স নিউজ, হাফিংটন পোস্ট, ডেইলি মিররসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ওই হামলাকারী স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারতো। তার উদ্দেশ্য হয়তো ছিল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারাত্মক পদদলনের সৃষ্টি করা। কিন্তু সৌভাগ্যবশত, নিরাপত্তাকর্মী জুহাইরের কাছে বাধা পেয়ে সে স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেনি।

রেডিট, ডেইলি দ্য প্যাট্রিয়টসহ কিছু সংবাদমাধ্যম জুহাইরের পরিচয় দিয়ে বলছে, মুসলিম নিরাপত্তাকর্মী জুহায়েরের দৃঢ়তায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের ভয়ানক ছোবল থেকে রক্ষা পেলেন স্টাদে দ্য ফ্রান্সে থাকা হাজারো দর্শনার্থী। স্টাদে দ্য ফ্রান্সে দায়িত্বপালনে দৃঢ়তা দেখানোয় তাকে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিভাগ থেকে সাধুবাদও জানানো হচ্ছে।

১৩ নভেম্বর রাতে স্টাদে দ্য ফ্রান্সহ প্যারিসের বিভিন্ন এলাকায় আইএসের সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে, তাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৩২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, আহত হয়েছে ৩৬২ জন। এদের মধ্যে ৯৯ জনের অবস্থা গুরুতর।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।