ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

১১ মাসে ইরাক-সিরিয়ার বাইরে ৮শ’ মানুষ মেরেছে আইএস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
১১ মাসে ইরাক-সিরিয়ার বাইরে ৮শ’ মানুষ মেরেছে আইএস ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ইরাক ও সিরিয়ায় আর সীমাবদ্ধ নেই জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। প্রায়ই সংবাদমাধ্যমের খবরে বিশ্বের নানা প্রান্তে হত্যা-হামলার ঘটনায় শিরোনাম হয় সংগঠনটি।

সম্প্রতি এক হিসাবে জানা গেছে, চলতি বছর সিরিয়া ও ইরাকের বাইরে আট শতাধিকের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে জঙ্গি সংগঠনটির হত্যা-হামলায়।

হামলাগুলোর বেশিরভাগই পরিচালিত হয়েছে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশে। প্যারিস হামলা ও রুশ প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের অন্তর্ভূক্ত করে এই হিসাব দাঁড় করানো হয়েছে।

কয়েকজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলায় ক্রমাগত মার খেয়ে পশ্চাদ্ভাবনরত এই জঙ্গি সংগঠন এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। এর ফলে তারা বিশ্বজুড়ে সহিংসতা চালাচ্ছে। এসব হামলা নতুন নতুন জঙ্গি তৈরিরও একটি প্রক্রিয়া হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বি আল-কায়েদা নেটওয়ার্ককে পেছনে ফেলে নিজেদের বিশ্বের একমাত্র জিহাদি সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠার তাড়নাও আইএসকে এসব হামলা পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সেই সঙ্গে আইএস বিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়া দেশগুলোর জন্যও এসব হামলার মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে জঙ্গি সংগঠনটি।

চলতি বছর আইএসের পরিচালিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হামলার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:

প্যারিস হামলা: ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস ও এর আশেপাশের ছয়টি পৃথক স্থানে আত্মঘাতী ও বন্দুক হামলা চালায় আইএস জঙ্গিরা। এসব ঘটনায় অন্তত ১২৯ জন নিহত ও সাড়ে তিন শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেরই অবস্থা গুরুতর। হামলার পরদিন, ১৪ নভেম্বর এর দায় স্বীকার করে এক বিবৃতিতে আইএস বলে, ফ্রান্স তার নীতি পরিবর্তন না করলে তাদের হামলার শীর্ষ টার্গেটেই রয়ে যাবে দেশটি।

বৈরুত হামলা: লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ১২ নভেম্বর দু’টি শক্তিশালী আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪৩ জন নিহত ও দুইশতাধিক আহত হয়। পরে আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয়।

রুশ প্লেন বিধ্বস্ত: গত ৩১ আগস্ট মিশরের শার্ম এল-শেইখ থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে উড্ডয়নের আধ ঘণ্টার মাথায় সিনাই উপত্যকায় ২২৪ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় রুশ কোগালিমাভিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট-৯২৬৮। এ ঘটনায় প্লেনটিতে থাকা সবাই প্রাণ হারান। প্রথমদিকে এ ট্র্যাজেডিকে ‘নিছক’ দুর্ঘটনা মনে করলেও ক্রমেই এর সঙ্গে আইএসের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। জঙ্গি সংগঠনটিও এর দায় স্বীকার করে নিয়েছে। বুধবার (১৮ নভেম্বর) সংগঠনটির ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিনে প্লেন বিধ্বস্ত করতে ব্যবহার করা বোমার বর্ণনাও দেয়া হয়। খবরে জানানো হয়, ‘সোডা ক্যান’ বোমায় ওড়ানো হয় ওই প্লেন।

আঙ্কারা হামলা: ১০ অক্টোবর তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি শান্তি ৠালিতে দু’টি আত্মঘাতী হামলায় অন্তত একশ মানুষ নিহত হয়। এ ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার করে না নিলেও তুর্কি প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয় আইএস কর্মীরাই হামলাটি পরিচালনা করে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

আদেন ও সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে হামলা: ৬ অক্টোবর ইয়েমেনের বন্দরনগরী ইয়েমেনে দেশটি থেকে বহিস্কৃত কর্মকর্তা এবং সৌদি আরব ও আমিরাতের সেনাদের ওপর আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় নিহত হয় অন্তত ১৫ জন। দেশটিতে আইএসের নতুন এক সহযোগী সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয়।

একই দিন সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুলিশ কম্পাউন্ডের ভেতরে একটি মসজিদে আত্মঘাতী হামলা হয়। এ ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৫ জনের। নিহতদের ১১ জন ছিলেন সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের সদস্য। আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয়।

তিউনিসিয়া, কুয়েত ও ফ্রান্সে হামলা: চলতি বছর ২৬ জুন একযোগে তিউনিসিয়া, কুয়েত ও ফ্রান্সে হামলা হয়। প্রথম হামলাটি হয় তিউনিসিয়ায়। দেশটির উপকূলীয় সউসে এলাকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ৩৮ জন পর্যটক নিহত হন এদিন। সেই সঙ্গে কুয়েতের প্রাচীনতম একটি শিয়া মসজিদে শুক্রবারের নামাজ চলাকালে বোমা হামলা চালানো হয়। এ হামলায় নিহত হয় ২৭ জন। একই দিন ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে মার্কিন মালিকানাধীন একটি রাসায়নিক গুদামে তাণ্ডব চালায় জঙ্গিরা। আরবি অক্ষরে খোদিত পতাকার সঙ্গে সেখানকার কর্মীদের কাটামাথা গুদামের ফটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে এ তিন হামলার সবগুলোরই দায় স্বীকার নেয় আইএস।

দাম্মাম হামলা: ২৯ মে সৌদি আরবের পূবাঞ্চলীয় শহর দাম্মামের একমাত্র শিয়া মসজিদের পার্কিং এলাকায় নিজেকে উড়িয়ে দেয় এক আত্মঘাতী নারী বোমা হামলাকারী। আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয়।

সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে হামলা: ২২ মে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় কাতিফ এলাকায় একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলা হয়। এ ঘটনায় মৃত্যু হয় ২২ জনের। এছাড়া আহত হয় আরও অনেকে। কাতিফ সৌদি আরবে সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত একটি এলাকা। এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয় আইএস।

আফগানিস্তানে হামলা: ১৮ এপ্রিল আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি অভিযোগ করেন, আইএসের আত্মঘাতী বোমা হামলায় তার দেশে অন্তত ৩৫ জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছে।

ইয়েমেনে হামলা: ২০ মার্চ আইএসের একটি সহযোগী সংগঠন দাবি করে, তারা ইয়েমেনে বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা পরিচালনা করেছে। এসব হামলায় ১৩৭ জন নিহত ও ৩৪৫ জন আহত হয়।

বার্দো মিউজিয়ামে হামলা: ১৮ মার্চ তিউনিসিয়ার জাতীয় বার্দো মিউজিয়ামে বন্দুকধারীর হামলায় ২২ জন নিহত হয়। পরে আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।